উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত: একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক, ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান তিন দিন স্থগিত

ডেস্ক রিপোর্টঃ রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নিকটস্থ স্থানে আজ সকালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ঘটনাস্থলেই বিমানের দুইজন প্রশিক্ষক পাইলট গুরুতরভাবে আহত হন, যাদের মধ্যে একজন পরবর্তীতে হাসপাতালে মারা যান বলে নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডা. মুহাম্মদ ইউনুস একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন,
“বিমানবাহিনীর এই দুঃখজনক দুর্ঘটনা শুধু বাহিনীর নয়, সমগ্র জাতির হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। আমরা এই শোকের সময়ে ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তি ও সহানুভূতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাই।”
‘জুলাই পুনর্জাগরণ ২০২৫’ অনুষ্ঠান স্থগিত
শোকাবহ এই পরিস্থিতিতে ২৩ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত নির্ধারিত ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ উপলক্ষে আয়োজিত সকল সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও যুব সমাবেশ স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানমালা ছিল সরকারের তরফ থেকে জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংলাপ ও সংস্কৃতির মাধ্যমে জাতীয় চেতনা জাগানোর একটি পদক্ষেপ।
দুর্ঘটনার বিস্তারিত ও উদ্ধার তৎপরতা
চোখের সামনে এই দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন স্কুলটির অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা জানান, বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি স্কুলের উপরে আছড়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং পাইলটদের উদ্ধার করে দ্রুত সিএমএইচ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তদন্ত কমিটি গঠন
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে নিশ্চিত কারণ জানতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (CAAB) যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সামরিক এবং নাগরিক প্রতিক্রিয়া
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী জানায়, প্রশিক্ষণ চলাকালীন এ ধরনের দুর্ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং তাঁরা নিহত পাইলটের পরিবারের পাশে রয়েছেন।
একইসঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজ নিহতের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আরও উচ্চমানের নিরাপত্তা ও বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার দাবি তুলেছে।
জাতীয় ঐক্যের আহ্বান
ডা. ইউনুস তার বক্তব্যে দেশবাসীকে বলেন,
“আমরা যাতে এই শোককে ঘৃণা বা বিভেদের পরিবর্তে জাতীয় ঐক্যের শক্তি হিসেবে ধারণ করি, সেই আহ্বান জানাচ্ছি।”
এই দুর্ঘটনা কেবল একটি দুর্ঘটনাই নয়, বরং একটি জাতীয় ট্র্যাজেডি হিসেবে দেখা হচ্ছে। শোক আর সহমর্মিতার মধ্য দিয়েই দেশের জনগণ আবারও একত্রিত হয়েছে এই বার্তা দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আগামী দিনগুলোতে এই দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনের জন্য সবার দৃষ্টি এখন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের দিকে।



