অব্যাবস্থাপনাএক্সক্লুসিভ

হোটাসঅ্যাপ আর বিকাশে চলে চক্রের কনট্রাক!!

মোঃ রিয়াজ উদ্দীন, খুলনা ব্যুরো: খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউপি’র ভূমি অফিসের অধিন্যাস্ত মহেশ্বরপাশা ক্যাম্প অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তফশিলদার) জালাল হোসেনের অনিয়ম ও দুর্নীতিতে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের ভূমি সেবা গ্রহীতারা। কম্পিউটারে অদক্ষ নায়েব জালাল হোসেনের নিয়োগকৃত দালাল সাইফুল হোসেন রুমি দ্বারা কম্পিউটারে খাজনা অনুমোদন, সমন্বয় ও নামপত্তনের রিপোর্ট প্রদানসহ চলছে উৎকোস লেনদেন। সাইফুল ইসলাম রুমির বিকাশে চলে লেনদেন এবং হোটসঅ্যাপে চলে কাজের কন্ট্রাক। ভূমি অফিসে না আসলেও ০১৭১৭৮৫৮১৮৪ নাম্বারে হোটসঅ্যাপ করে নামজারির আবেদন নাম্বারসহ যে কোন ভিপি, এপি, খাল, চলমান মামলা বা সমস্যাযুক্ত খতিয়ানের ছবি তুলে দিলে তাহা সাইফুল ইসলাম রুমি অনুমোদন দিয়ে দেন। যা নায়েব জালাল হোসেন জানেনও না। তা ছাড়া অত্র অফিসে অদক্ষ নায়েব জালাল হোসেনের সহযোগী হিসাবে পিরোজপুর থেকে আসা (নায়েব) বন্ধু আলাউদ্দিন ও নায়েব এর খালাতো ভাই আলামিন এবং পূর্বে কম্পিউটারের কাজ করতো মানিক তার ভাই রতন কে নিয়ে অত্র অফিসে সেবা গ্রহিতাদের সাথে ঘুষ লেনদেন করছে। তারা ভূমি অফিসের সরকারি কোনো কর্মচারী বা আউটসোর্সিং কর্মচারী নন।

     সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, নায়েব জালাল হোসেনের টেবিলের ডানপাশে আছে কম্পিউটার নিয়ে সাইফুল ইসলাম রুমি, রুমির পার্শ্বে আছেন রতন ও আলাউদ্দিন। উল্লেখ্য ব্যক্তিগণ বহিরাগত হয়ে অফিসে রেজিষ্টার ২ বহিতে নাম-পত্তনের তামিল করেন এবং তামিল বাবদ পাঁচশ-হাজার এর অধিক টাকা নিয়ে থাকেন বলে জানা যায়। বারাকপুর মৌজার কোন ভূমি সেবা গ্রহীতা খাজনার দাখিলা (ভূমি উন্নয়ন কর),নাম্পত্তনের রিপোর্ট,খতিয়ান পর্চাসহ বিভিন্ন সেবা নিতে গেলে তাদেরকে দিতে হয় বাড়তি টাকা। নায়েব নিজেই বলেন কম্পিউটার ম্যান সরকারি কোন বেতন পান না, তাই ওকে খাজনা অনুমোদন,সমন্বয় ও নামপত্তনের রিপোর্ট বাবদ ৫শত-১ হাজার টাকা বেশি দিতে হয়। টাকা না দিলে কোন কাজ হয় না।

     নায়েব জালাল হোসেনের মনোনীত দালাল চক্রের মাধ্যমে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অন্তর্গত বিভিন্ন মৌজার অর্পিত সম্পত্তি (ভিপি),পরিত্যক্ত সম্পত্তি (এপি) ও সরকারি স্বার্থ জড়িত জমা জমির খাজনা সহ নামপত্তন করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। জালাল হোসেন তার মনোনীত আলাউদ্দিন, রতন,রুমি ও রমজানকে দিয়ে অবৈধ ঘুষ ও অন্যান্য লেনদেন করে থাকেন। অফিসের ভিতরে সর্বদা তাদের অবস্থান থাকে। দুপুরে একত্রিত হয়ে দুপুরের ভোজন বিলাশ করে থাকেন। রিপোর্ট,খাজনার অনুমোদন,সমন্বয় সহ ইত্যাদি কাজ করার সুযোগ পেয়ে রুমি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের বিভিন্ন দলিল লেখক ও দালালদের সাথে হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে খাজনা অনমোদন দিয়ে থাকন। এ বিষয়ে কোন ভুক্তভোগী যদি নায়েব জালাল কে বলেন রুমি টাকা চায় আমাদের কাছে নায়েবকে ওই ঘুষের টাকার কথা বললে জালাল হোসেন বলেন রুমি অফিস থেকে কোন বেতন পায় না যার কারনে অনুমোদন ও রিপোর্ট বাবদ নেয়।ভূমি সেবা গ্রহীতাগন কোন বিষয়ে জানতে চাইলে তাদের সাথে অকথ্য ভাষায় কথাবার্তা বলেন। 

     মহেশ্বরপাশা মৌজার মধ্যডাঙ্গা গ্রামের এক ভূক্তভোগী জানান, ভিপি খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তি যাহার দাগ নং এসএ ৪৫৫৫,আর এস দাগ-১১৬৩৪,জমির পরিমাণ ০.০২২৭। তিনি দীর্ঘ ২০/৩০ বছর যাবৎ ভোগ দখল করিতেছে। বারাকপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব জালাল হোসেন মোটা অংকের টাকার বিনিময় মহেশ্বরপাশার কালিবাড়ি গ্রামের কমল চক্রবর্তীর ছেলে কল্যান চক্রবর্তীর নামে নামজারি (নামপত্তন) করে দিয়েছে। এই অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে ৩০জুন খুলনা জেলা প্রশাসকের নিকট আব্দুল হাই আবেদন করেছে। এভাবে সরকারের স্বার্থ জড়িত ভূমি বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকের নামে মোটা অংকের উৎকোস নিয়ে নামপত্তন করে খাজনার দাখিলা কাটছেন জালাল হোসেন।

     ইতিপূর্বে নায়েব জালাল হোসেনের নামে খুলনা জেলার যতগুলো ভূমি অফিসে কর্মরত ছিলেন প্রতিটি ভূমি অফিসেই তার (জালাল) অনিয়ম, দুর্নীতি,অর্থ আত্মসাৎ নারী কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন রেকর্ড খুলনা ভূমি কর্মকর্তাগণ ও জেলা প্রশাসকের দপ্তর অবগত রয়েছেন। 

     এ বিষয়ে দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, বহিরাগত লোক দিয়ে ভূমি অফিসের কাজ করানো অপরাধ। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মহেশ্বরপাশাসহ বারাকপুরের ৯টি মৌজার সেবা গ্রহীতারা দাবি করেন, ভূমি অফিসের দালালদের দৌরত্ব থেকে পরিত্রান। কর্তৃপক্ষ অতিদ্রুত আমাদের দুর্ভোগ ও কষ্টের কথা বিবেচনা করে সরেজমিনে তদন্ত করে বারাকপুর ভূমি অফিসের দুর্নীতিবাজ ঘুষখোর (নায়েব) কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবী জানান। অন্যথায় এমন অত্যাচারী দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোর নায়েব এলাকায় থাকলে ভুক্তভোগীরা শীঘ্রই কঠোর মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন বলেও জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button