অপরাধআইন ও বিচারআইন, ও বিচারচট্টগ্রাম বিভাগজাতীয়দুর্নীতিদেশপরিবেশবাংলাদেশবিভাগরাষ্ট্রনীতি

কুমিল্লার গোমতী নদী: ৫০৮ অবৈধ স্থাপনা ৬ মাসে উচ্ছেদের নির্দেশ হাইকোর্টের

ঢাকা: কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী গোমতী নদী থেকে অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ছয় মাসের মধ্যে গোমতী নদীর পাড়ের ৫০৮টি অবৈধ দখল/স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্য কুমিল্লার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে তিন মাসের মধ্যে ড্রেজিংয়ের প্রস্তাবনা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এবং প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে গোমতী নদীর দখল ও উচ্ছেদ বিষয়ক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর জনস্বার্থে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (HRPB) ২০১১ সালে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। সেই রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি মোঃ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত আদালত ২০১১ সালের ০২ মার্চ রুল জারি করেন। ওই রুলে গোমতী নদীর জরিপ করে সীমানা নির্ধারণ এবং অবৈধ স্থাপনা ও দখলদারদের তালিকা আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক কর্তৃক পরিচালিত জরিপে ৬২৩টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়, যার মধ্যে ২৬৫টি স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে আদালতকে এফিডেভিটের মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছিল।

সম্প্রতি রিট মামলাটি শুনানির জন্য আবেদন জানানো হলে বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি মোঃ বশির উল্লাহ এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে HRPB-এর আইনজীবী, সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ যুক্তি তুলে ধরেন যে, জলাধার আইন ২০০০, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এবং পানি আইন ২০১৩ এর বিধান অনুসারে নদীর জায়গা ভরাট বা দখল করা আইনগত অপরাধ। তিনি আরও উল্লেখ করেন, HRPB-এর জনস্বার্থের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ ঘোষণা করে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন। এই রায়ের পর নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি, সীমানা সংকোচন এবং মাটি ভরাট করে স্থাপনা তৈরি করা সম্পূর্ণ বেআইনি। মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, যদিও গোমতী নদীর অবৈধ দখল ও স্থাপনার তালিকা ও ঠিকানা তৈরি করা হয়েছে, তবে শত শত দখলদারকে এখনও উচ্ছেদ করা হয়নি।

আদালত শুনানি শেষে গোমতী নদীর পাড়ের ৫০৮টি অবৈধ দখল/স্থাপনা আগামী ৬ মাসের মধ্যে উচ্ছেদের জন্য কুমিল্লা জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। এছাড়া, আদালত পুলিশ সুপার এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন তারা নিয়মিত তদারকি করেন যাতে ভবিষ্যতে কেউ গোমতী নদীতে নতুন করে দখল বা মাটি ভরাট করতে না পারে।

এই রিট মামলায় HRPB এর পক্ষে বাদী ছিলেন অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সিদ্দিক ও এখলাস উদ্দিন ভূঁইয়া। বিবাদীরা হলেন পরিবেশ সচিব, অর্থ সচিব, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলজিইডি সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জেলা প্রশাসক কুমিল্লাসহ মোট ১৮ জন।

আদালতে বাদী পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ, তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট সঞ্জয় মন্ডল ও অ্যাডভোকেট নাসরিন সুলতানা। সরকার পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (DAG) মোঃ মহসিন কবির।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button