ইসলামের দৃষ্টিতে পুরুষের ধ্বংসের আটটি কারণ: বর্জনীয় বিষয়সমূহ

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণের পথনির্দেশ করে। পুরুষের জন্য কিছু বিষয়কে ধ্বংসের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা বর্জন করা অত্যাবশ্যক। নিচে কোরআন ও হাদিসের আলোকে এমন আটটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো:
১. নেশায় আসক্তি (সিগারেট, মদ, জুয়া ইত্যাদি):
যেকোনো ধরনের নেশা বা মাদকদ্রব্য ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। মদ ও জুয়াকে শয়তানের কাজ এবং ঘৃণ্য বস্তু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। নেশা শুধু শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিই করে না, বরং এটি নৈতিক ও আত্মিক অবক্ষয়েরও কারণ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা নিজেদের হত্যা করো না।” (সূরা নিসা: ২৯) নেশা মানুষকে আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে বিরত রাখে এবং সমাজে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ছড়ায়।
২. কাঁচা হলুদ ও গাঢ় লাল রঙের কাপড় পরিধান করা:
পুরুষদের জন্য অবিমিশ্র উজ্জ্বল লাল ও কাঁচা হলুদ (জাফরান বা কুসুম রঙের) পোশাক পরিধান করা মাকরুহ বা হারাম হিসেবে বিবেচিত। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) হলুদ রঙের কাপড় দেখে সাহাবীকে তা পরিধান করতে নিষেধ করেছেন এবং কাফেরদের পোশাক বলেছেন। ইমাম নববী (রহ.) এর ব্যাখ্যায় বলেন, এই ধরনের পোশাক অমুসলিম সাধু-সন্ন্যাসীদের ধর্মীয় পোশাক ছিল, তাই এগুলোর সাথে সাদৃশ্য পরিহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে, যদি লাল বা হলুদ রঙের সাথে অন্য কোনো রঙ মিশ্রিত থাকে, তবে তা পরিধানে কোনো বাধা নেই।
৩. পুরুষ হয়েও স্বর্ণ ব্যবহার করা:
ইসলাম পুরুষদের জন্য যেকোনো পরিমাণ স্বর্ণের অলংকার ব্যবহারকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “সোনা ও রেশম আমার উম্মতের নারীদের জন্য হালাল এবং পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে।” (তিরমিজি, নাসায়ী, মিশকাত ৪৩৪১ নং) তিনি এক সাহাবীর হাতে সোনার আংটি দেখে তা খুলে ফেলে দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, “তোমাদের কেউ কি ইচ্ছাকৃত দোজখের অঙ্গারকে হাতে নিয়ে ব্যবহার করে?” তবে, বিশেষ প্রয়োজনে (যেমন- দাঁত বা নাক বাঁধানোর ক্ষেত্রে) সোনার ব্যবহার জায়েজ হতে পারে।
৪. যেসব পুরুষ নারীদের সাজগোজ অনুকরণ করে:
পুরুষদের জন্য নারীদের বেশভূষা, চালচলন, সাজগোজ বা আচরণ অনুকরণ করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং এর জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) অভিশাপ দিয়েছেন। যেমন- নাক বা কান ফোঁড়ানো ইত্যাদি। এটি ফিতনা সৃষ্টি করে এবং ইসলামী সমাজের শৃঙ্খলা নষ্ট করে। হাদিসে এসেছে, “নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষ হিজড়াদের উপর এবং পুরুষের বেশধারী মহিলাদের উপর লানত করেছেন।” (সহিহ মুসলিম: ৫৮৮৬)
৫. সিল্কের জামা পরিধান করা:
পুরুষদের জন্য রেশমের (সিল্ক) পোশাক পরিধান করা হারাম। হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “রেশমের পোশাক ও সোনার জিনিস আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে এবং তাদের নারীদের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে।” (তিরমিজি, নাসায়ী: ৫১৪৪)
৬. পুরুষের টাখনুর নিচে প্যান্ট বা পোশাক পরা:
পুরুষদের জন্য টাখনুর (গোড়ালির) নিচে পোশাক ঝুলিয়ে পরা ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “এটা জাহান্নামী পুরুষদের লক্ষণ।” (আবু দাউদ: ৩১৪০) তিনি আরও বলেছেন, “টাখনুর নিচে কাপড়ের যেটুকু থাকবে তা জাহান্নামে যাবে।” (বুখারী: ৫৭৮৭) এটি অহংকারের পরিচায়ক।
৭. ইচ্ছাকৃতভাবে জামাতে সালাত আদায় না করা এবং ফরজ সালাতে অলসতা:
সালাত (নামাজ) ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ এবং বান্দা ও কুফরের মধ্যে পার্থক্যকারী। ইচ্ছাকৃতভাবে ফরজ সালাত ছেড়ে দেওয়া বা জামাতে সালাত আদায়ে অলসতা করা অত্যন্ত মারাত্মক গুনাহ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ছেড়ে দিল সে কাফেরের কাজ করল।” (মুসলিম: ৮২, তিরমিজি: ২৬১৯) নামাজ না পড়ার পরকালীন শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ; জাহান্নামে তাদের স্থান হবে।
৮. দৃষ্টি সংযত রাখতে না পারা:
পর্ণোগ্রাফি দেখা, গান-বাজনা শোনা কিংবা সিনেমা দেখার মতো হারাম কাজে লিপ্ত থাকা দৃষ্টির সংযম নষ্ট করে এবং ব্যক্তিকে গুনাহের দিকে ধাবিত করে। ইসলামে দৃষ্টির সংযম (গদ্দে বাশার) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিশ্চয়ই কান, চোখ ও অন্তকর্ণ— এদের প্রত্যেকটির হিসাব দিতে হবে।” (সূরা বনী ইসরাঈল: ৩৬) গান-বাজনা এবং বাদ্যযন্ত্রকে হারাম করা হয়েছে এবং যারা এগুলোকে হালাল মনে করে, তাদের জন্য অপমানজনক শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদের এই সকল কাজ থেকে বিরত থাকার হেদায়েত দান করো। আমিন।



