প্রবাসীকে নিয়ে বাড়ি ফেরা হলো না, খালে মাইক্রোবাস পড়ে একই পরিবারের ৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু

নোয়াখালী প্রতিনিধি:
ওমানফেরত প্রবাসীকে বিমানবন্দর থেকে বরণ করে বাড়ি ফেরার পথে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের সাত সদস্যের সলিল সমাধি ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছে তিনটি শিশু। মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের খালে পড়ে গেলে এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে।
আজ (৬ আগস্ট) ভোরে লক্ষ্মীপুর-চৌমুহনী সড়কের নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়ারপুর ইউনিয়নের পূর্ব জগদীশপুর গ্রামে লক্ষ্মীপুর সীমান্তের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন—প্রবাসীর মা মুর্শিদা বেগম (৫০), স্ত্রী কবিতা (২৫), মেয়ে মিম (২), ভাতিজি রেশমি (৯), আরেক শিশু লামিয়া আক্তার (৮), ছোট ভাইয়ের স্ত্রী লাবণী (২৫) এবং দাদি ফয়জুন্নেসা (৭০)। তারা সবাই লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের পশ্চিম চৌপল্লী গ্রামের বাসিন্দা।
পরিবারের সদস্যরা ওমানফেরত প্রবাসী বাহারকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাইক্রোবাসে করে লক্ষ্মীপুরের বাড়িতে ফিরছিলেন। ফেনী পার হওয়ার পর তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের খালে পড়ে যায়। দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রবাসীর বাড়ি ছিল অল্প কিছু দূরে।
এই দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসে থাকা সাতজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। তবে প্রবাসী বাহার, তার শ্বশুর ইস্কান্দার মির্জা এবং গাড়ির চালকসহ মোট পাঁচজন কোনোক্রমে গাড়ি থেকে বের হতে সক্ষম হন।
চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক হোসেন ভূঁইয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, দুর্ঘটনা কবলিত মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিমানবন্দর থেকে ফেরার পথে চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে গাড়িটি খালে পড়ে যায়। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা প্রবাসীর শ্বশুর ইস্কান্দার মির্জা বলেন, চালক গাড়ি চালানোর সময় ঘুমে ঝিমুচ্ছিলেন এবং তাকে বারবার গাড়ি থামিয়ে বিশ্রাম নিতে বলা হয়েছিল।
তিনি বলেন, “আমরা তাকে কাছের একটি বাজারে গাড়ি থামিয়ে প্রয়োজনে ঘুমিয়ে নিতেও অনুরোধ করেছিলাম। সে অল্প সময়ের জন্য গাড়ি থামালেও, কিছুক্ষণ পরেই আবার ঘুম জড়ানো চোখেই গাড়ি চালাতে শুরু করে। বারবার সতর্ক করার পরও সে আমাদের কথায় কর্ণপাত করেনি।”
এর কিছুক্ষণ পরেই চালক গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে মাইক্রোবাসটি খালে পড়ে যায়। ইস্কান্দার মির্জা বলেন, “চালক, আমার জামাই বাহার এবং আমি কোনোমতে বের হতে পারলেও, চারদিকে ছিল অন্ধকার। সাহায্যের জন্য চিৎকার করেও লাভ হয়নি। ভোরের দিকে একজন ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে তারা সকাল ৬টার দিকে এসে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করে। এর আগ পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা আমরা পানিতেই ছিলাম।”
এই মর্মান্তিক ঘটনায় পশ্চিম চৌপল্লী গ্রামটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রবাসীর বাড়িতে শত শত মানুষ জড়ো হয়ে এই অপূরণীয় ক্ষতিতে শোক প্রকাশ করছেন।



