সূরা আল-বাকারার অলৌকিক প্রভাব: শাইখ খালিদ আল-হিবশির বর্ণনায় বাস্তব কিছু ঘটনা

কুরআনুল কারিমের প্রতিটি সূরাই মুমিনের জন্য হিদায়াত ও রহমতের উৎস। তবে সূরা আল-বাকারাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে জাদু (সিহর), বদনজর এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে সুরক্ষার এক শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে। এর নিয়মিত তিলাওয়াত ও এর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে বহু মানুষ আল্লাহর ইচ্ছায় কঠিন বিপদ ও দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
বিশিষ্ট আলেম ও রুকইয়াহ বিশেষজ্ঞ শাইখ খালিদ আল-হিবশি (হাফিযাহুল্লাহ) তার অভিজ্ঞতার আলোকে এমনই কিছু বাস্তব ও বিস্ময়কর ঘটনা বর্ণনা করেছেন, যা সূরা আল-বাকারার অসীম ক্ষমতার প্রমাণ বহন করে।
১. হারিয়ে যাওয়া স্বামীর প্রত্যাবর্তন
একজন নারী শাইখের কাছে ফোন করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার স্বামী বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন এবং আর ফিরে আসেননি। আমরা জানি না তিনি কোথায় আছেন। শাইখ, দয়া করে আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দিন!”
শাইখ তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, “আমি তো জাদুকর নই বা জিন নিয়েও কাজ করি না। আমি কীভাবে জানব তিনি কোথায়? আপনি আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন এবং বেশি বেশি দুআ করুন।”
নারীটি উপায় জানতে চাইলে শাইখ তাকে পরামর্শ দেন, “আপনি বেশি করে সালাত আদায় করুন এবং সূরা আল-বাকারা তিলাওয়াত করুন। এভাবে দুআ করুন— ‘হে আল্লাহ! সূরা আল-বাকারাকে আমার স্বামীর ফিরে আসার ওসিলা বানিয়ে দিন এবং এর দ্বারা আমাকে বরকত দান করুন’।”
কিছুদিন পর সেই নারী অত্যন্ত আনন্দের সাথে ফোন করে জানান, “আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। আমি মাত্র তিন দিন সূরা আল-বাকারা পড়েছি, আর হঠাৎ আমার স্বামী দরজায় কড়া নাড়েন। তিনি ফিরে এসেছেন, আলহামদুলিল্লাহ!”
২. ২০ বছরের মাইগ্রেন থেকে আরোগ্য লাভ
একজন নারী দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তীব্র মাইগ্রেনের যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। তিনি দেশ-বিদেশে বহু চিকিৎসা করিয়েছেন, এমনকি জার্মানি পর্যন্ত গিয়েছিলেন, কিন্তু কোনো কিছুতেই লাভ হয়নি।
শাইখ তার ওপর রুকইয়াহ করার পর হিংসা ও বদনজরের লক্ষণ দেখতে পান এবং তাকে নিয়মিত সূরা আল-বাকারা তিলাওয়াতের পরামর্শ দেন।
কিছুদিন পর সেই নারী অত্যন্ত উৎফুল্ল হয়ে ফিরে এসে বলেন, “ওয়াল্লাহি! আমি প্রতিদিন তিনবার করে এবং সপ্তাহে একদিন দশবার করে সূরা আল-বাকারা পড়তাম। হঠাৎ একদিন আমি মাথার ভেতরে একটি তীব্র বিস্ফোরণের মতো শব্দ এবং ভয়ার্ত চিৎকার শুনতে পাই। এরপর থেকেই আমার মাথা একেবারে হালকা হয়ে যায়। সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত আমার আর কোনো মাইগ্রেন হয়নি, আলহামদুলিল্লাহ।”
৩. তীব্র জাদুর প্রভাব থেকে মুক্তি
একজন রোগী অত্যন্ত শক্তিশালী কালো জাদুর শিকার হয়েছিলেন। তাকে এক খ্রিষ্টান মারিদ বা উড়ন্ত শয়তানের মাধ্যমে আক্রমণ করা হয়েছিল। বহু জায়গায় চিকিৎসার চেষ্টা করেও তিনি সুস্থ হতে পারছিলেন না।
শাইখ তাকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে সূরা আল-বাকারা পড়ার পরামর্শ দেন। রোগীটি প্রতিদিন সাতবার করে সূরাটি তিলাওয়াত করতে শুরু করেন এবং পাশাপাশি রুকইয়ার অন্যান্য চিকিৎসাও চালিয়ে যান।
কিছুদিনের মধ্যেই শয়তানের শক্তি শেষ হয়ে আসতে থাকে এবং জাদু ভেঙে যেতে শুরু করে। এক রাতে রোগীটি স্বপ্নে দেখেন যে শয়তান আত্মহত্যা করছে। পরদিন সকালে তার পেট থেকে ধাতব টুকরা ও অন্যান্য অপরিচিত বস্তু বেরিয়ে আসতে শুরু করে, যা ছিল গিলে খাওয়ানো জাদুর অংশ।
৪. নিখোঁজ সন্তানের ফিরে আসা
একবার ফজরের সময় একজন পাকিস্তানি ব্যক্তি কান্নায় ভেঙে পড়া অবস্থায় শাইখের কাছে আসেন। তিনি জানান যে, তার ১৬ বছরের ছেলে চার দিন আগে পাকিস্তান থেকে নিখোঁজ হয়েছে এবং এখনো ফেরেনি।
শাইখ তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, “আমি আপনার ও আপনার সন্তানের জন্য দুআ করব। আপনি আল্লাহর কাছে ফিরে আসুন, সূরা আল-বাকারা পড়ুন এবং দুআ করুন যেন আল্লাহ আপনার সন্তানকে ফিরিয়ে দেন।”
ছয় দিন পর, যখন সেই বাবা সূরা আল-বাকারা তিলাওয়াত করছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে তার ছেলে বাড়িতে ফিরে আসে, আলহামদুলিল্লাহ।
৫. পেটের ভেতর থেকে জাদুর বস্তু বের হওয়া
এক ১৭ বছর বয়সী মেয়ে বহুবার জাদুর শিকার হয়েছিল। শাইখ তাকে প্রতিদিন সাতবার সূরা আল-বাকারা পড়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, “শয়তান এই সূরা সহ্য করতে পারবে না। সে কীভাবে এমন একটি শক্তিশালী সূরার মুখোমুখি হবে?”
চিকিৎসা শুরু করার পর, মেয়েটির পেট থেকে জাদুর বস্তু মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। কাঠ, প্লাস্টিক এবং পাথরের টুকরোর মতো জিনিস একটু একটু করে বেরিয়ে আসে। তীব্র ব্যথা ও কষ্টের পর, আল্লাহ তাআলা তাকে ধৈর্য ও অধ্যাবসায়ের বিনিময়ে আরোগ্য দান করেন।
এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, সূরা আল-বাকারা আল্লাহর পক্ষ থেকে এক عظیم নেয়ামত এবং সকল প্রকার শয়তানি শক্তির বিরুদ্ধে এক অমোঘ অস্ত্র।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এই বরকতময় সূরার মাধ্যমে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ দান করুন। আমীন।



