অপরাধঢাকাঢাকা বিভাগসংগঠন

সাংবাদিকদের হুমকি স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিবন্ধকতা

এজাজ রহমান: বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘রবিবার রাজশাহীতে এনসিপির শীর্ষ নেতা মিডিয়াকে যে হুমকি দিয়েছেন, তা স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিবন্ধক। ওই এনসিপি নেতার বক্তব্যে আমরা ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি-


ঐ উক্তির পরিপ্রেক্ষিতে কঠোর প্রতিবাদ জানান- ফরিদ খান, সভাপতি, বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব, এস.এম মোর্শেদ, সভাপতি-ফেডারেশন অব বাংলাদেশ জার্নালিষ্ট অর্গানাইজেশন, এফ.এম রূপক, সভাপতি-বাংলাদেশ রিপোর্টার্স ইউনিটি, ঢাকা। মিডিয়ার ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ, হুমকি প্রদানের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ ও সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভ্্ূঁইয়া, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন ও মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম এবং ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্র্যাব)-এর সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল ও সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশা। এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে পৃথক পৃথক বিবৃতি দেন তারা। এ ছাড়া আরও অর্ধ শতাধিক সাংবাদিক এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।


বিবৃতিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘মিডিয়াকে হুমকি প্রদানের ঘটনা এবং মিডিয়াকর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়েরের প্রবণতা জুলাই চেতনার পরিপন্থি।’ নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী গণ অভ্যুত্থান যেসব কারণে সংগঠিত হয়েছিল, তার অন্যতম ছিল মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ। মিডিয়াকে হুমকি সেই লক্ষ্য অর্জনের অন্তরায় ও হস্তক্ষেপের শামিল।’ বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘রবিবার রাজশাহীতে এনসিপির শীর্ষ নেতা মিডিয়াকে যে হুমকি দিয়েছেন, তা স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিবন্ধক। ওই এনসিপি নেতার বক্তব্যে আমরা ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। মনে রাখতে হবে, সাংবাদিকদের হুমকি কিংবা মব জাস্টিসের জন্য ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে জুলাই অভ্যুত্থান সংঘটিত করেনি।’ তারা বলেন, ‘স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার শাসনামলে রুদ্ধ বাকস্বাধীনতা পুনরুদ্ধার ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম লক্ষ্য। সেই চেতনা থেকে সরে এসে জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধানসহ নেতাদের কেউ কেউ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার ও হুমকি দিয়ে চলেছেন।

সংবাদমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে বিকশিত হতে না দিয়ে উল্টো এ ধরনের হুমকি প্রদর্শন নিতান্ত অনভিপ্রেত ও অগ্রহণযোগ্য।’ হুমকিদাতা এনসিপির ওই নেতাকে উদ্দেশ করে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে ৬০ জনের বেশি সাংবাদিক খুন হয়েছেন। শুধু জুলাই বিপ্লবের সময় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ছয়জন সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, জুলাই-আগস্টে ছাত্রদের আন্দোলনের সমর্থনে সাংবাদিকরা নিয়মিত রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।’ বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘জুলাইয়ের রক্তক্ষয়ী ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থান যেসব কারণে সংঘটিত হয়েছিল, তার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ। আজ এনসিপি নেতা সাংবাদিকদের যে হুমকি দিয়েছেন তা জুলাই বিপ্লবের চেতনাবিরোধী। জুলাই বিপ্লবের একজন ছাত্রনেতার কাছে এটা আমাদের প্রত্যাশিত ছিল না।’

নেতারা বলেন, ‘সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা অর্জনের ঐতিহ্যবাহী প্লাটফর্ম হিসেবে আমরা অতীতেও এ ধরনের অযাচিত ও অন্যায় হস্তক্ষেপ মেনে নিইনি, এখনো মেনে নেব না।’ সংশ্লিষ্ট মহলকে এ ধরনের তৎপরতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে নেতারা বলেন, ‘মিডিয়ার ভূমিকা সম্পর্কে কারও কোনো আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সেগুলোর প্রতিবিধানের জন্য আইন, আদালত ও প্রেস কাউন্সিলের শরণাপন্ন হতে পারেন। কিন্তু এ ধরনের আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা নিন্দনীয়।’ কারাবান্দি সাংবাদিকদের জামিন দাবি, গণমাধ্যমকে হুমকি, সাংবাদিকদের হয়রানির ঘটনায় অর্ধ শতাধিক সাংবাদিক নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেন। তারা বলেন, দেশ এখন মব সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button