অপরাধএক্সক্লুসিভদুর্নীতিবাংলাদেশহবিগঞ্জ

হবিগঞ্জে প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই বিল তোলার চেষ্টা, প্রকৌশলী উধাও

হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় শিক্ষা অবকাঠামো উন্নয়নের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ শেষ না করেই প্রায় ৪৭ লাখ টাকার বিল তুলে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রকৌশলী আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নজরে আসায় বিল আটকে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিবিড় রঞ্জন তালুকদার। এর পরপরই বদলির আদেশ দেখিয়ে ওই প্রকৌশলী দ্রুত কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি-৪ (পিইডিপি-৪)-এর আওতায় আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য প্রায় ৮৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।এই প্রকল্পের অধীনে তিনটি প্যাকেজে বিদ্যালয়গুলোতে সীমানা প্রাচীর, প্রধান শিক্ষকের কক্ষ এবং টয়লেট নির্মাণের কথা ছিল। কাজটি পান স্থানীয় ঠিকাদার মো. গোলাম ফারুক।

সরেজমিনে কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, কাজের করুণ দশা। শিবপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক বছরের বেশি সময় ধরে সীমানা প্রাচীরের নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে, এতে সেখানে শ্যাওলা জমেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোহেল চৌধুরী জানান, কাজ বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরিদর্শনের পর সম্প্রতি কিছু নির্মাণসামগ্রী আনা হলেও কাজ পুনরায় শুরু হয়নি।

একই অবস্থা চৌধুরী হামদু মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। সেখানে কিছু নতুন কাজ শুরু হলেও পুরোনো অংশ এখনো অসমাপ্ত। সীমানা প্রাচীরের গ্রিল ও গেটের কাজ শুরুই হয়নি। মিজাজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত দুই বছরে শুধুমাত্র প্রধান শিক্ষকের কক্ষের ছাদ ঢালাই হয়েছে। টয়লেট নির্মাণের কাজ এখনো আরম্ভই করা হয়নি। এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকসানা পারভীন নির্মাণকাজের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

জানা গেছে, এই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ৬২ লাখ টাকার কাজের বিপরীতে তিন ধাপে ৩২ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু গত এপ্রিল মাসে প্রকৌশলী আয়েশা আক্তার কাজের অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ দেখিয়ে আরও ২০ লাখ টাকার বিল অনুমোদনের জন্য ইউএনও’র কাছে পাঠান।দাপ্তরিক হিসাব অনুযায়ী, তখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ মাত্র ৬৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছিল। এছাড়া আরও দুটি কাজের জন্য অতিরিক্ত ২৭ লাখ টাকার বিলও একই সময়ে উপস্থাপন করা হয়।

ইউএনও নিবিড় রঞ্জন তালুকদার বিলের এই অসামঞ্জস্য দেখে এবং কাজের প্রকৃত অগ্রগতি যাচাই করে বিলগুলো আটকে দেন তিনি বলেন, “কাজের অগ্রগতি ৬৫ শতাংশের কম হওয়ায় এবং নৈতিকতার জায়গা থেকে আমি বিলে সই করিনি। জনগণের করের টাকার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।”

অভিযুক্ত উপজেলা প্রকৌশলী আয়েশা আক্তার ছুটিতে আছেন জানিয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান। তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, বদলির আদেশ পেয়ে তিনি দ্রুত উপজেলা ত্যাগ করেছেন।কাজের ঠিকাদার গোলাম ফারুক বলেন, “ইউএনও চাইলে আংশিক বিল অনুমোদন দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি ক্ষোভ ও ক্ষমতা দেখিয়ে সব বিল ফেরত দিয়েছেন।”

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, কাজ শেষ না করে অতিরিক্ত বিল দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button