মানুষের উপকার করতে গিয়ে আইনের প্যাঁচে চালক, হয়রানির অভিযোগ

নাছির হাওলাদার, চট্টগ্রাম:
ট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত এক বৃদ্ধকে সাহায্য করতে গিয়ে উল্টো হয়রানির শিকার হয়েছেন এক সিএনজি চালক। মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেও আইনের কাছে অপরাধী হতে হয়েছে চালক সোহেলকে। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে এবং জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোও একটি অপরাধ?
জানা যায়, সাতকানিয়া উপজেলায় এক অজ্ঞাত বৃদ্ধ ব্যক্তি সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে রাস্তায় ছটফট করছিলেন। পথচারীরা যখন ইতস্তত করছিলেন, ঠিক তখনই নিজের সিএনজি (নাম্বার: ১২/১০৪১) থামিয়ে এগিয়ে যান চালক সোহেল। তিনি নিজ দায়িত্বে আহত বৃদ্ধকে উদ্ধার করে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যান।
কিন্তু হাসপাতালের প্রধান ফটকে পৌঁছানোর পরই ঘটে বিপত্তি। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল শওকত ঘটনা যাচাই না করেই সিএনজিটি আটক করেন। চালক সোহেলের ভাষ্যমতে, তিনি কেবল একজন মুমূর্ষু মানুষকে বাঁচাতে নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে এসেছিলেন। কোনো অপরাধের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা না থাকলেও কনস্টেবল শওকতের হস্তক্ষেপে তাকে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাখ্যা দিতে হয় এবং তার গাড়িটি জব্দ করা হয়।
এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ পুলিশের এই পদক্ষেপকে রুটিন দায়িত্ব বললেও, বেশিরভাগ মানুষই মনে করছেন, এমন মানবিক কাজে উৎসাহ না দিয়ে উল্টো হয়রানি করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। স্থানীয় এক মানবাধিকারকর্মী এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “এই ধরনের মানবিক কাজে এগিয়ে আসা মানুষদের যদি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে ভবিষ্যতে কেউ আর সাহায্য করতে সাহস পাবে না।”
ভুক্তভোগী চালক সোহেল বলেন, “আমি কোনো সমাধানের জন্য বিশ বারের বেশি থানায় এবং ফাঁড়ির ইনচার্জ আশিকের কাছে গিয়েছি, কিন্তু কোনো সুরাহা পাইনি। আমার কী অপরাধ ছিল?”
এদিকে, যে আহত বৃদ্ধকে নিয়ে এতকিছু, সেই আক্তার হোসেন বলেন, “অ্যাক্সিডেন্ট করে যতটা না কষ্ট পেয়েছি, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি পুলিশের কাছ থেকে।”
ঘটনাটি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা চট্টগ্রাম পাঁচলাইশ থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। ফলে চালক সোহেলের এই হয়রানির কোনো সুরাহা এখনো হয়নি, যা জনমনে পুলিশি কর্মকাণ্ড নিয়ে গভীর প্রশ্ন রেখে গেছে।



