
অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক:
সাব-রেজিস্ট্রার শাহীন আলম, যিনি তার কর্মজীবনের প্রতিটি পর্যায়ে দুর্নীতির মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। ঘুষ, জাল দলিল তৈরি এবং বেনামি সম্পদে তিনি মাত্র ১০ বছরে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চাকরিই তার একমাত্র বৈধ আয় হলেও তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে রয়েছে বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট, মাছের ঘের এবং হোটেলসহ বিপুল সম্পদ।
অবৈধ সম্পদের বিবরণ:
শাহীন আলমের নামে ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে একাধিক সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে তেজগাঁওয়ে দুটি দশতলা বাড়ি, বকশিবাজার ও কামরাঙ্গীরচরে দুটি বাড়ি এবং দুটি ফ্ল্যাট উল্লেখযোগ্য। তিনি নিজে মোহাম্মদপুরের চাঁন মিয়া হাউজিংয়ের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। এছাড়া সাভার, বাড্ডা, ফতুল্লা, রূপগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ এবং বছিলায় তার নামে-বেনামে জমি রয়েছে। তিনি তার স্ত্রী সারমিন সুলতানা, মা ফরিদা ইয়াসমিন, ভাই ইকবাল হোসেন এবং শ্বশুর-শাশুড়ির নামে ঢাকা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জে প্রায় ৫০ বিঘার বেশি জমি কিনেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে দুই একরের মাছের ঘের এবং তার ভাইয়ের নামে কেনা জমিতে নির্মিত একটি ছয়তলা ভবন।
আয় এবং জীবনযাত্রা:
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শাহীন আলম তার আয়কর নথিতে মাত্র ৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা আয় দেখিয়েছেন, যেখানে তার বেতন প্রায় ৩৮ হাজার টাকা। অথচ তিনি প্রতি সপ্তাহে বিমানযোগে যশোর থেকে ঢাকায় ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে আসতেন বলে জানা যায়। তার ঘোষিত সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৫০ লাখ টাকা হলেও তার প্রকৃত সম্পদ এবং বিলাসবহুল জীবনযাত্রার সঙ্গে এর কোনো মিল নেই।
দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ:
সম্প্রতি যশোরের ঝিকরগাছায় ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধিগ্রহণ করা একটি জমির জাল দলিল রেজিস্ট্রি করে তিনি আলোচনায় আসেন। পূর্বের সাব-রেজিস্ট্রার যে দলিলটি বাতিল করে দিয়েছিলেন, শাহীন আলম যোগদানের পরই সেটি রেজিস্ট্রি করেন। এছাড়া, তিনি ডেভেলপার কোম্পানির সিন্ডিকেটের মাধ্যমেও কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্পদ লুকানোর চেষ্টা ও ঔদ্ধত্য:
২০২৪ সালের আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার নির্দেশ দিলে শাহীন আলম বিপাকে পড়েন। তিনি দ্রুত নিজের ও স্ত্রীর নামে থাকা সম্পত্তি তার শ্বশুর-শাশুড়ির নামে লিখে দেন। শুধু তাই নয়, এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তিনি অন্যান্য সাব-রেজিস্ট্রারদের নিয়ে সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের হুমকি দেন এবং অশোভন আচরণ করেন, যা তার ঔদ্ধত্যের প্রমাণ দেয়।
এই অভিযোগগুলো জানতে সাব-রেজিস্ট্রার শাহীন আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন কেটে দেন এবং পরে নম্বর ব্লক করে দেন। কর্মস্থলেও তাকে পাওয়া যায়নি।



