ফিলিস্তিনের জন্য আপনার প্রতিদিনের চব্বিশ ঘণ্টা থেকে ১০ মিনিট বরাদ্দ করুন!

0
69
SanjidAmin
SanjidAmin - ফিলিস্তিন পরিস্থিতি - শাইখুল ইসলাম তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম-এর বয়ান

সানজিদ আমিন  :

Advertisement

কোনো কিছুতেই থামছে না ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলি বর্বরতা। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

নতুন করে আরও ৪৩ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ৩৭ হাজার ৯০০ জনে। চলমান ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৮৭ হাজার ফিলিস্তিনি। এই তথ্য জানিয়েছে মধ্যপ্রাচের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য সংবাদ মাধ্যম – বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

প্রিয় পাঠক – আমি জানি আমার মতো আপনাদেরও – নিকৃষ্ট ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরতায় নীরিহ ফিলিস্তিনীদের নিহতের ও আহতের সংখ্যা নিয়ে একটু ভাবলেই কষ্টে কলিজা ফেটে যাবার উপক্রম হয়, কিন্তু আমরা কি তাদের জন্য কিছুই করতে পারবোনা? এতদূর থেকে আমাদের কিছু করতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে – দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়া বা জোর করে ভুলে থাকার চেষ্টা করা বা মাঝে মাঝে মোনাজাতে একটু কান্না করা ছাড়া কি আরো কিছু করার আছে?  জ্বি অবশ্যই কিছু করার আছে,

চলুন একটি উপায় জেনে নিই – বিশ্বনন্দিত মুসলিম স্কলার ও বর্তমান বিশ্বের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন, মুফাক্কিরে ইসলাম, শাইখুল ইসলাম, জাস্টিস আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানী হাফিজাহুল্লাহ এর জুমআর বয়ানের কিছু অংশ থেকে…..

সম্মানিত উপস্থিতি! আপনাদের সকলের খেদমতে আমার অত্যন্ত বেদনা-ভারাক্রান্ত নিবেদন-

আমরা এ মুহূর্তে এমন এক‌ বিষ‌য় নি‌য়ে আলোচনা কর‌তে ও শুন‌তে এক‌ত্রিত হ‌য়ে‌ছি, য‌দি ব‌লি অতিরঞ্জন হ‌বে না, এটি পা‌কিস্তা‌নের ২২ কো‌টি মানু‌ষ ও বি‌শ্বের দুই শ’ কো‌টি মুস‌লি‌মের হৃদ‌য়ের স্পন্দন। আর তা হ‌লো- ফি‌লি‌স্তিন সমস্যা।


যদি আমাদের সাধ্যে আর কিছু না-ও থাকে, তাহলে এতটুকু তো করতে পারি যে, আল্লাহ তাআলার নিকট ফিলিস্তিনী ভাইদের জন্য দুআ করব।

আমাদের অস্ত্রশস্ত্র নেই, যা ফিলিস্তিনী ভাইদের কাছে পৌঁছে দিতে পারি, আমাদের পথ জানা নেই যে, সেখানে পৌঁছতে পারি। কিন্তু আমরা আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি এতটুকু তো করতে পারি যে, আল্লাহ তাআলার নিকট তাদের জন্য দুআ করব। আল্লাহর অভিমুখী হব এবং আল্লাহ তাআলার নিকট তাদের জন্য সাহায্য ও বিজয়ের দুআ করব।

এটা আল্লাহ তাবারাকা ও তাআলারই ফযল ও করম যে, যুদ্ধের ছয় মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হয়েছে, কিন্তু ফিলিস্তিনী মুজাহিদগণ এখনো শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত। এত বড় সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে এত ভারী ভারী অস্ত্রের মোকাবেলায় তাঁরা বীরত্বের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত তাঁদেরকে পরাস্ত করা সম্ভব হয়নি। এটা আল্লাহ তাআলার বিশেষ ফযল ও করম, তিনিই এটা করাচ্ছেন।

আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ করুন। তিনি যেন মুসলমানদেরকে এই মসিবত থেকে নাজাত দান করেন। এখন দুআ করার এক তরীকা তো হল, আমরা নামাযের পর দুআ করব, চলতে-ফিরতে দুআ করব এবং আমাদের দিলে এই চিন্তা প্রবল থাকবে। কিন্তু মানুষ বিষয়টি ভুলে যায়। অন্তরে চিন্তা এলেও আবার তা ভুলে যায়। তাই এ বিষয়ে আমার ভাবনায় একটি উপায় এসেছে। আশা করি আপনারা এটির সমর্থন করবেন। তা হল, প্রত্যেক মুসলিম দিন-রাতের দশ মিনিট সময় ফিলিস্তিনীদের জন্য ওয়াকফ [বরাদ্দ] করবেন। দশ মিনিট। এই দশ মিনিটে আল্লাহ তাআলার দরবারে হাজির হয়ে পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতে কারীমা পাঠ করবেন-

لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنْتَ سُبْحٰنَکَ اِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظّٰلِمِيْنَ.

[(হে আল্লাহ!) তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তুমি সকল ত্রুটি থেকে পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি অপরাধী। -সূরা আম্বিয়া (২১) : ৮৭]

কারণ কুরআনে পাকের ওয়াদা হচ্ছে, এর মাধ্যমে আল্লাহ বিপদ থেকে পরিত্রাণ দেবেন। অভিজ্ঞতাও তাই বলে। হযরত ইউনুস আ. মাছের পেটে গিয়ে এ বাক্য পাঠ করে আল্লাহ তাআলাকে ডেকেছেন, তখন আল্লাহ তাকে মুক্তি দিয়েছেন।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَ نَجَّيْنٰهُ مِنَ الْغَمِّ.

[আমি তাকে সে দুশ্চিন্তা থেকে নাজাত দিয়ে দিয়েছি।]

অর্থাৎ এ বাক্যসমূহের বদৌলতে আমি তাকে বিপদ থেকে মুক্তি দিয়েছি। শুধু তাই নয়। সামনে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন-

وَکَذٰلِکَ نُـنْجِي الْمُؤْمِنِيْنَ.

[আর এভাবে আমি মুমিনদেরকে নাজাত দিয়ে থাকি। -সূরা আম্বিয়া (২১) : ৮৮]

এর অর্থ কি এটা যে, প্রত্যেক মুমিন মাছের পেটে প্রবেশ করবে আর আল্লাহ তাকে এভাবে নাজাত দেবেন? না! বরং অর্থ হচ্ছে কোনো মুমিন যখন তার বিপদাপদে এই কালিমা পাঠ করে আমাকে ডাকে, তখন আমি তাদেরকেও সেভাবেই নাজাত দিয়ে থাকি, যেভাবে আমি ইউনুস (আ.)-কে নাজাত দিয়েছি।

সুতরাং ভাইয়েরা আমার!

আমার নিবেদন, দশ মিনিট এ কালিমা পাঠের জন্য বরাদ্দ করুন। আমাদের বিভিন্ন মহল্লায় অতীতে নিয়ম ছিল, বিভিন্ন খান্দানে এই আয়াতে কারীমা পাঠ করে দুআ করা হত। সোয়া লাখ (১ লাখ ২৫ হাজার) বার পড়ে দুআ করা হত। এখনো যেখানে এটা সম্ভব, সেখানে এভাবে সোয়া লাখবার এই কালিমা পাঠ করে দুআ করুন। ইনশাআল্লাহ, আমি দারুল উলূমে এ আমলের ধারা চালু করব।

সাধারণ সকল মুসলমানের খেদমতে আমার নিবেদন, দৈনিক দশ মিনিট সময় বের করুন এবং এই কালিমা পাঠ করুন। যে কয়বার পড়তে পারেন। এই কালিমা পাঠ করে আল্লাহ তাআলার নিকট এই বলে দুআ করুন-

‘হে আল্লাহ! আমাদের হৃদয় কাঁদছে। আমরা পেরেশান, কিন্তু আমরা নিরুপায়। আপনি আপনার ফযল ও করমে উপায় বের করে দিন। মুসলমানদেরকে যুলুম অত্যাচার থেকে নাজাত দান করুন। হামাসের মুজাহিদদেরকে ফাতহে মুবীন [সুস্পষ্ট বিজয়] দান করুন।’

প্রত্যেকে মাত্র দশ মিনিট এই আমল করুন। আরে ভাই মাত্র দশ মিনিট। যদি এতটুকুও না করেন, করতে না পারেন, তাহলে আশঙ্কা হচ্ছে, আমরা আল্লাহ তাআলার পাকড়াও-এর শিকার হব। বলা হবে, তোমাদের চোখের সামনে মুসলমানদের রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল, গণহত্যা হচ্ছিল, তোমাদের কি আমাকে ডাকার তাওফীকটুকুও হয়নি?

কী ভাই আপনারা আমল করবেন তো? ওয়াদা করছেন তো? ওয়াদা করুন, এ আমল আমরা সকল মুসলমান করব। কেউ আমল ছাড়া থাকবেন না। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ দুআ ফিরিয়ে দেবেন না। যখন আল্লাহকে অন্তর দিয়ে, ব্যাকুলতা নিয়ে ডাকা হয়, আল্লাহ সে ডাক কখনো ফিরিয়ে দেন না। তাঁর ওয়াদা হচ্ছে-

وَکَذٰلِکَ نُـنْجِي الْمُؤْمِنِيْنَ.

[এভাবে আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করি। -সূরা আম্বিয়া (২১) : ৮৮]

ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ তাআলার সে ওয়াদা পূরণ হবে।

وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.



স্থান : ১লা যিলকদ, ১৪৪৫ হিজরী – জামিয়া দারুল উলূম করাচির জামে মসজিদ থেকে

অনুবাদ : খন্দকার মনসুর আহমদ (বাইতুস সালাম) – মাসিক আল কাউসার

অনুলিখন : সানজিদ আমিন

মূল উর্দু বয়ানটি শুনতে – ইউটিবে Ahal-e-Palestine ke liye Ayat-e-Kareema ke Khatam ki Appeal  অথবা  Musalman ke Musalman par Haqooq | مسئلۂ فلسطین کے تناظر | Mufti Muhammad Taqi Usmani | 10-05-2024  লিখে সার্চ করুন।

Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here