অল্প বৃষ্টিতেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতা:

0
1233

অনলাইন ডেস্ক: এবার অল্প বৃষ্টিতেই রাজধানী ঢাকায় সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা, যা জনজীবনের সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। মাত্র ঘন্টা খানেকের ভারি বৃষ্টিতেই প্রধান প্রধান সড়ক তলিয়ে যাচ্ছে। এমনকি রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সচিবালয়েও জমছে পানি। এজন্য রাজধানীর ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা।

Advertisement

রাজধানীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল দশার কারণে জলাবদ্ধতা যেন নিয়তির লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিষ্কাশনের ভাল ব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই জমছে পানি। বৃষ্টি শুরু হলেই থমকে যায় রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক। শাহবাগ থেকে টঙ্গীগামী প্রধান সড়ক, নিউমার্কেট থেকে মিরপুরগামী সড়ক, মিরপুর কাজীপাড়া, রামপুরা, বনশ্রী, মৌচাক, মালিবাগ, পল্টন, যাত্রাবাড়ীসহ প্রায় সব সড়কে জলাবদ্ধতা ও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট ও জলজটে নাকাল হয়ে পড়ে নগরবাসী।

ঢাকায় জলাবদ্ধতায় নাকাল নগরবাসী

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে উন্নয়নের নামে বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের রাস্তা কাটা যেন নিয়মে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত কাজ শেষ না করার ফলে এসব এলাকা হয়ে ওঠে চলাচলের অনুপযোগী। তার ওপর বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। কিন্তু এ জলাবদ্ধতার দায় নিতে রাজী নয় কোনো সংস্থায়। জলাবদ্ধতা, যানজট ও জলজটের ঠেকাতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়ার কথা থাকলেও দায় এড়াতে চান সবাই।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, এটি বহুদিনের বহু বঞ্চনা, অবহেলা আর দায়িত্ব অবহেলার ফসল। তাই সমস্যা সমাধানে বহুমাত্রিকতা দাবি রাখে। সেইঅর্থে ঢাকা শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার জন্য এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ও সমন্বিত মহাপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ নেয়া হয়নি। এর ফলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এ বিষয়ে সমন্বিতভাবে না করে আংশিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। তারা এখন কোনো না কোনভাবে দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টায় লিপ্ত। তাই এখন সমন্বিত ও সময় নির্ভর মহাপরিকল্পনা দরকার। আর এটি বাস্তবায়নের জন্য সিটি কর্পোরেশনকে দায়িত্ব দেয়া জরুরি। কারণ, তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। আর জলাবদ্ধতা নিরসনে জনসম্পৃক্ততা দরকার হবে।

এদিকে, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা-ডেমরা-নারায়ণগঞ্জ (ডিএনডি) বাঁধ সংস্কারে ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর মতিঝিলে এক কর্মশালায় তিনি এ তথ্য জানান।

রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কেরই বেহাল দশা

 

অনলাইন ডেস্ক:টানা বর্ষণ আর জলাবদ্ধতায় সাময়িক বিরতি। কিন্তু রয়ে গেছে রেশ। পানির নিচে দীর্ঘ সময় তলিয়ে থাকায় রাজধানীর বেশির ভাগ সড়কেরই এখন বেহাল দশা। ফলে দেখা দিয়েছে নতুন ভোগান্তি।

বনশ্রী, আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার ভাঙ্গাচোরা রাস্তা তো রোজকার আতঙ্কের নাম। গেল কয়েকদিনের বৃষ্টি, যা বাড়িয়েছে বহুগুন। যানবাহন সেটা হালকাই হোক কিংবা ভারী- বিকল্প থাকলে হয়তো কেউই এই রাস্তা মাড়াতে চাইতেন না। কিন্তু তা নেই বলেই- এই বুঝি উল্টালো- এমন শঙ্কা নিয়ে প্রতিদিন রাজধানীর বনশ্রীবাসী এই রাস্তায় যাতায়াত করছেন।

রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরাদিয়া পর্যন্ত রাস্তাটির দশাকে বেহাল বললেও কমই বলা হয়। ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় খানা-খন্দের কোন কমতি নেই। বর্ষায় কাদা-পানি ও শুস্ক মৌসুমে ধুলোবালি। যানজটও ছাড়িয়েছে সহনীয় মাত্রা। আর গাড়ি উল্টে দুর্ঘটনা তো নিত্যদিনের। হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে কোন ভারি যানবাহন এই রাস্তায় চলবেনা। কিন্তু কে শোনে কার কথা!  আর এই অবস্থা তদারকি করার কথা যাদের, তাদের উদাসীনতাও বনশ্রীবাসীর দুর্ভোগের মতোই সীমাহীন।

রাজধানীতে প্রতিবছরই বর্ষায় ভাঙে রাস্তাঘাট। পরে তা মেরামতও হয়। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তা আবার ফিরে আসে আগের চেহারায়। এ নিয়ে নিদারুণ ভোগান্তিতে পড়ে সিটি করপোরেশনের দায়সারা সংস্কার কাজকেই দায়ী করেছেন নগরবাসী। যদিও দায় অস্বীকার করছে সংস্থাটি।

তারা বলছে, অনেক এলাকাতেই কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে রাস্তা বানানো হচ্ছে। তবে নগরপরিকল্পনাবিদ বলছেন, পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা রেখে রাস্তা না বানালে তা টেকসই হবে না।

গত ছ’মাস ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রাজধানীর আরেক প্রান্তে মিরপুরের বাসিন্দারা। মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায়, শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে পল্লবী পর্যন্ত যানজট বেড়েছে কয়েকগুণ। সেবাসংস্থার লাইনগুলো মাটির নিচ দিয়ে নেয়ায় রাস্তার প্রায় অর্ধেক কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে সরু রাস্তায় চলতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকে। শুধু মিরপুর বা বনশ্রীর রাস্তার চিত্রটাই যে এমন তা নয়, গেলো কয়েকদিনের বৃষ্টিতে নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় চিত্রটাও এখন প্রায় একই। মূল সড়ক তো বটেই অলিগলির রাস্তাগুলোর অবস্থা আরও খারাপ।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থেকে ডেমরামুখী সড়ক। কোথাও হাটুসমান খাল তো কোথাও ছোট ছোট গর্ত। রাস্তার পিচ উঠে গিয়ে এমনই দশা যে, তা হার মানাবে গ্রামের মেঠোপথকেও। অথচ বর্ষার আগে এটা নাকি ছিলো পাকা সড়ক।

এবার আসা যাক ঢাকার অন্যতম একটি প্রবেশ পথ গাবতলীতে। এই সড়কে তৈরি হওয়া অসংখ্য গর্ত ঢাকতে ফেলা হয়েছে কংক্রিটের স্তুপ। আর তাতে যেন ভোগান্তি আরো বেড়েছে গাড়ির চালক এবং যাত্রীদরে।

রাজধানীর প্রায় সব এলাকাতেই এখন কমবেশি এরকম বেহাল অবস্থা সড়কগুলোর। যে কারণে নিদারুণ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নগরবাসী।

সিটি করপোরেশন বলছে, নগরীর রাস্তা টেকসই না হওয়ার জন্য দায়ী অবিরাম বৃষ্টি আর ভারী যানচলাচল। তবে এরমধ্যেই যেখানে সম্ভব কংক্রিটের ঢালাই এর মাধ্যমে টেকসই রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। তবে নগরপরিকল্পনাবিদ বলছেন, সড়ক নির্মাণের সঙ্গে জলজট আর পানি নিষ্কাশনের সমন্বিত পদক্ষেপ না থাকলে সেই রাস্তা টিকবে না। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে রাস্তা রয়েছে দুই হাজার ৪শ কিলোমিটার।

Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here