আমার সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখতে দিলো না স্কয়ারের ডাক্তার

0
1454

পৃথিবীর আলো দেখা হলো না আমাদের প্রথম সন্তান আনজার আল জাহিদের। স্কয়ার হাসপাতালের গায়নোকোলজিস্ট ডা. কাজী শামসুন নাহার ও তার সহযোগীদের ভুল চিকিৎসা এবং মিথ্যা নাটকে পৃথিবীতে আসার আগেই আনজারকে চলে যেতে হলো অন্য জগতে, যেখান থেকে কেউ ফিরে আসে না।

Advertisement

গত ৭ মে আমার স্ত্রী আনিকা রহমানকে গর্ভকালীন ব্যথা নিয়ে তার নিয়মিত চিকিৎসক গায়নোকোলজিস্ট ডা. কাজী শামসুন নাহারের কাছে গেলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন। ডাক্তারের ভাষ্যমতে আনিকার প্রি-ম্যাচিয়ুর্ড ডেলিভারি ব্যাথা হচ্ছে, এখনই এটা বন্ধ করতে হবে, না হলে মা ও শিশু দু’জনেরই বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

ওইদিন বিকেল ৩টা ৩০ মিনিট থেকে রাত আনুমানিক ১০টা পর্যন্ত লেবার ইউনিটে রেখে বিভিন্ন রকম ইনজেকশন, ওষুধ দিয়ে আমার স্ত্রীর ডেলিভারি ব্যথা বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়। অথচ রোগীকে তাৎক্ষণিকভাবে আল্ট্রাসাউন্ড করে বাচ্চার অবস্থান নির্ণয় করা উচিত ছিল, কিন্তু বারবার অনুরোধ করার পরও তিনি সেটা না করে সময়ক্ষেপণ করেন এবং ডেলিভারি পেইন বন্ধ করার বৃথা চেষ্টা করেন।

রাত দশটার পর ডা. কাজী শামসুন নাহার জানান, মা ও শিশু দু’জনেই সুস্থ আছেন। পরদিন ৮ মে বেলা ১১টায় আমি ও আমার মা অ্যাডভোকেট উম্মে সালমা জাহিদ ডা. শামসুন নাহারের স্কয়ার হাসপাতাল চেম্বারে গেলে তিনি শিশুর মৃত্যু সংবাদ জানান। এসময় ডাক্তার বলেন, গর্ভে শিশুটি একবারেই প্রাথমিক অবস্থায় ছিল এবং ওজন ছিল মাত্র ৯০০ গ্রাম। মৃত্যুর কারণ হিসেবে বলা হয় গর্ভেই শিশুটি কর্ড (নাঁড়ি) পেঁচিয়ে মারা গেছে।

পরবর্তীতে ডাক্তার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে ডেলিভারি করানোর জন্য বিভিন্ন রকম ওষুধ প্রয়োগ করেন এবং বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে মৃত বাচ্চা প্রসব করানো হয়। আনুমানিক রাত ৮টার দিকে ডেথ সার্টিফিকেট নেওয়ার সময় যখন আমি রেজিস্টারে স্বাক্ষর করি, তখন দেখি শিশুটির ওজন ২ কেজি। তৎক্ষণিকভাবে আমি লেবার ও ডেলিভারি ইউনিট থেকে বের হয়ে ওজনের বিষয়টি উপস্থিত আত্মীয় স্বজনদের জানাই।

কিছুক্ষণ পর মৃত শিশুটিকে দেখানো হলে সবাই অবাক হয়ে দেখলাম শিশুটি সম্পূর্ণ ম্যাচিয়ুর্ড এবং শিশুর সাইজ অন্য নবজাতকের মতই। শিশুটিকে দেখার পর থেকেই উপস্থিত সবার মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ডা. কাজী শামছুন্নাহারকে জিজ্ঞাস করা হলে উনি কোনো সদুত্তোর দিতে পারেননি।

৯ মে হাসপাতাল থেকে রিলিজ নেওয়ার পর অন্য অভিজ্ঞ গায়নোকোলজিস্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার উচিত ছিল প্রথমেই বাচ্চার অবস্থান নির্নয় করা (আল্ট্রাসাউন্ড) এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। অন্য ডাক্তাররা আরও বলেন, আমার স্ত্রীর মূল সমস্যা ছিলো উচ্চ রক্তচাপ, যা আমাদের একবারও জানাননি ডাক্তার।

এখন আমার প্রশ্ন:
১. কেন হসপিটালে ভর্তির দিন আল্ট্রাসনো করা হয়নি?
২. কেন ইচ্ছেমতো একের পর এক ইঞ্জেকশন পুশ করা হয় এবং তা গোপন করা হয়?
৩. কেন ০৭/০৫/১৭ তারিখ রাতে বলা হয় মা ও শিশু সম্পূর্ণ সুস্থ?
৪. কেন ০৮/০৫/১৭ তারিখ সকালে আল্ট্রাসাউন্ড করা হয়?
৫. কেন 4D আল্ট্রাসাউন্ড না করে স্কয়ারের মতো হাসপাতালে 2D (ঝাপসা) আল্ট্রাসাউন্ড করা হয়?
৬. কেন আল্ট্রাসাউন্ড করার আগ পর্যন্ত শিশু সম্পূর্ণ সুস্থ আছে বলা হয় এবং আল্ট্রাসাউন্ডের পর শিশু মারা গেছে বলা হয়?
৭. কেন শিশুর ওজন মাত্র ৯০০ গ্রাম বলা হয়?
৮. কেন ৩০ সপ্তাহ বয়সের শিশুকে প্রি-ম্যাচিয়ুর্ড এর চেয়েও
৯. কেন গলায় কর্ড পেঁচিয়ে শিশুটি মারা গেছে বলা হয়?
১০. ডেথ সার্টিফিকেটসহ মৃত্যুর পরবর্তী সব ডকুমেন্টে শিশুর বয়স ২৭ সপ্তাহ ২ দিন দেখানো হয়?
১১. কেন লেবার ইউনিটে ০৭/০৫/১৭ তারিখে প্রয়োগ করা ইঞ্জেকশন এবং ওষুধের নাম রিলিজের সময় জানানো হয়নি?
১২. কেন শিশুর মরদেহটি একটি কাগজের শপিং ব্যাগের মধ্যে করে দেওয়া হয়?
১৩. কেন মৃতদেহ হস্তান্তরের পরপরই সিকিউরিটি বাহিনী এনে হাসপালের ৭ তলা (লেবার ইউনিট এবং ডা. কাজী কাজী শামছুন্নাহারের চেম্বার) বোঝাই করে ফেলা হয়?
১৪. স্কয়ার হাসপাতালের মতো এরকম সু-প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালে ডা. কাজী শামসুন নাহারের মতো অনভিজ্ঞ ডাক্তারকে কেন রোগী সেবার দায়িত্ব কেন দেওয়া হয়?
১৫. কেন স্কয়ার হসপিটালের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করা যাবে না?

অবশেষে বলতে চাই, শোককে শক্তিতে পরিণত করতে চাই। আমাদের সন্তানকে তো আর ফেরত পাবো না, কিন্তু অন্য কোনো বাবা মা-কে যেন এরকম ভুল চিকিৎসার কারণে সন্তান হারাতে না হয় সে জন্যেই ‘হাতুড়ে’ ডাক্তারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম। অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে আপনারা কি থাকবেন আমাদের পাশে?
অভিযোগকারী
আব্দুলাহ আল জাহিদ
ব্যবসায়ী
ভুক্তভোগীর অভিযোগ হুবহু তুলে ধরা হলো।

Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here