মোছাঃ নিলুফা ইয়াসমিন ঃ
রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওÑউত্তরাঞ্চলের এই সাতটি জেলার প্রবেশদ্বার বলা হয় রংপুরের মডার্ন মোড়কে। ঐতিহাসিক ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবসে নিহত বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতিস্তম্ভ ‘অর্জন’ এই মডার্ন মোড়েই অবস্থিত। মডার্ন মোড় দিয়ে ঢুকেই কুড়িগ্রাম রোড দিয়ে যাওয়ার পথে হাতের বামেই পড়বে রংপুর ক্যাডেট কলেজ। আর একটু সামনে এগোলেই হাতের বাম পাশে পর পর কয়েকটি লাল-সাদার মিশ্রণে তৈরি কিছু বড় বড় দালান দৃষ্টিগোচর হয়। সবক’টি দালান মোটামুটি একই উচ্চতায় তৈরি। এটি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির পাশেই ১০০ বছর ধরে বিভিন্ন ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অসম্ভব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বেষ্টিত উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ রংপুর কারমাইকেল কলেজ। বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল এর নেতৃত্বে ১৯১৬ সালে রংপুর শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে লালবাগ এলাকায় ৯শত বিঘা জমির উপর নিরিবিলি পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত হয় এই কলেজটি। প্রতিষ্ঠিাতা লর্ড কারমাইকেল এর নামানুসারে কলেজটির নামকরণ করা হয়। উত্তরাঞ্চলের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত এই কারমাইকেল কলেজ।
সবুজ বৃক্ষরাজী কলেজটির প্রাণ। কলেজের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকলে দুই পাশে সারি সারি গাছ চোখে পড়ার মতো। বসন্তের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে ডালপালাগুলো। বসন্ত এলেই পূর্ণ যৌবনে ভরে ওঠে এসব ডালপালা। এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে এসে ভিড় করেন দর্শনার্থী। রোড দিয়ে যোজা ভেতরে ঢুকলেই বামপাশে চোখে পড়ে একতলা বিশিষ্ট সরকারি দালান। এটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এলাকার মধ্য বিত্ত থেকে শুরু করে নি¤œ বিত্তদের সন্তানেরা এখানে লেখাপড়া করে। এর চারদিকে একই রকম ডিজাইন করা। একটু সামনে এগোলেই কেন্দ্রীয় মসজিদ। এর ডানপাশে মোড় নিয়ে সোজা ভেতরে ঢুকলেই প্রজাপতি আকারের বিশাল প্রশাসনিক ভবন। প্রশাসনিক ভবনের পূর্ব পাশেই অবস্থিত রয়েছে ভাস্কর্য ‘প্রজন্ম ৭১’। তার পেছনেই ছাত্রছাত্রীদের প্রিয় বৃন্দাবন। সেখানে বসে কেউ খেলছে, কেউ গোল হয়ে বসে দেশ-বিদেশ নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠেছে, কেউবা গিটার নিয়ে বসে এলোমেলো সুর তৈরি করছে, আবার কেউ কেউ বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা জমাতে ব্যস্ত, কেউ আবার ক্লাস পরীক্ষার টেনশনে অস্থির কেউ কেউ আবার তাদের প্রিয়জনকে নিয়ে মধুর সময় কাটাচ্ছে। এছাড়া কলেজটিতে রয়েছে দুটি বিশালাকার খেলার মাঠ। প্রতিবছর কলেজ কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুটবল, ক্রিকেটসহ অন্যান্য খেলার আয়োজন করা হয়। বর্তমানে কলেজটিতে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। উচ্চ মাধ্যমিকসহ ১৫ টি বিষয়ে অনার্স এবং ¯œাকোত্তর (শেষ পর্ব) পড়ানো হয় ও প্রাইভেট ¯œাতক (পাশ) পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে কলেজটিতে। প্রতিটি বিভাগের জন্য রয়েছে সেমিনার লাইব্রেরী। এছাড়া কলেজটির প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে একটি বিশালাকার কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, যেটিতে বিভিন্ন বিভাগের প্রয়োজনীয় প্রায় লক্ষাধিক বইপত্র সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও বিস্তৃত পরিসর নিয়ে কলেজের অফিস রুম, কনফারেন্স রুম, শিক্ষক ক্লাব, কর্মচারীদের ক্লাব, ছাত্রছাত্রীদের পৃথক বিশ্রামাগার, ক্যান্টিন, শিক্ষকদের বাসভবন, অধ্যক্ষের বাসভবন, ৪টি একাডেমিক ভবন, শহীদ মিনারসহ অনেক স্থাপনায় কলেজটি পূর্ণতা লাভ করেছে। এছাড়া ছাত্রদের জন্য রয়েছে জি.এল ছাত্রাবাস, কে.বি ছাত্রাবাস, সি.এম ছাত্রাবাস ও ওসমানী ছাত্রাবাস এবং ছাত্রীদের জন্য রয়েছে বেগম রোকেয়া ছাত্রীনিবাস, তাপসী রাবেয়া ছাত্রীনিবাস ও শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ছাত্রীনিবাস (বর্তমানে ছাত্রবাস ও ছাত্রীনিবাস গুলো বন্ধ রয়েছে)। কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ, শিক্ষকদের নিরবচ্ছিন্ন পাঠদান, শিক্ষার্থীদের কৃতিত্ব কলেজটিকে গৌরব অর্জনে বিভিন্নভাবে সাহায্য করছে। কলেজটি তার পড়াশুনার মান, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও খেলাধুলাসহসহ বিভিন্ন রকম কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। গত কয়েক মাস আগে কলেজটি গর্বের সাথে শতবর্ষে পদাপর্ণ করেছে। শতবর্ষ ধরে কলেজটি তার ঐতিহ্য ধরে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে।