উদ্ধার হয়নি সরিষাবাড়ী পৌর মেয়র নিখোঁজের ১২ ঘণ্টা আগে মৃত্যুর আশঙ্কায় ফেসবুকে স্ট্যাটাস

0
446

নিখোঁজের দু’দিন অতিবাহিত হলেও সন্ধান পাওয়া যায়নি জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ রুকুনুজ্জামান রুকনের। ঢাকার উত্তরার ১৩নং সেক্টর থেকে সোমবার সকালে নিখোঁজ হন তিনি। তাকে উদ্ধারে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের একটি টিম, র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ ও ডিবি একযোগে কাজ করছে। কিন্তু মঙ্গলবার রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার সন্ধান মেলেনি। নিখোঁজ মেয়রের বড় ভাই মো. সাইফুল ইসলাম টুকন জানান, তার ছোট ভাই রুকন সোমবার সকালে ঢাকার উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৬০ নম্বর বাসা থেকে বের হয়ে স্থানীয় পার্কে যান। সেখানে তার জন্য একজন লোক অপেক্ষা করছে বলে পরিবারের লোকজনকে বলে যান। এর পর থেকে আর ফিরে আসেননি রুকন। তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে। সম্ভাব্য সব স্থানে খুঁজে না পেয়ে সোমবার রাত ৯টায় উত্তরা পশ্চিম থানায় জিডি করেছেন তিনি। নিখোঁজ হওয়ার ১২ ঘণ্টা আগে রোববার রাত ৯টা ১৩ মিনিটে মেয়র রুকন ফেসবুকে মৃত্যুর আশঙ্কা করে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি লেখেন, ‘তোমাদের এই ভালোবাসা আমি কোনোদিন ভুলতে পারব না। তোমাদের এই ভালোবাসার কাছে মনে হয় আমি হেরে গেলাম। আমি তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারলাম না। তারপরও বলতে চাই- ‘ভালোবাসি ভালোবাসি’। এই ভালোবাসা নিয়েই সবকিছু জয় করতে চাই এবং এই ভালোবাসা নিয়েই মরতে চাই। নতুন প্রজন্মের কাছে আমার আহ্বান যে আমাকে হত্যা করা হলেও তোমাদের সিক্ত ভালোবাসা যেন অটুট থাকে এবং আমার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা তোমরা ধরে রাখবা।’

Advertisement

রুকনের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী (গানম্যান) শিহাব উদ্দিন জানান, কিছুদিন ধরে সরিষাবাড়ীর রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে মেয়র হতাশা ও শঙ্কার মধ্যে ছিলেন। তিনি সব সময় বলতেন, ‘দলের কতিপয় লোক তার ভালো কাজ পছন্দ করছে না।’ দেহরক্ষীর ধারণা, মেয়র নিখোঁজের পেছনে দলের কিছু লোক জড়িত থাকতে পারে। মেয়রের স্ত্রী কামরুন্নাহার হ্যাপি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘কি কারণে আমার স্বামী নিখোঁজ হয়েছেন, তা সরিষাবাড়ীবাসী জানেন। আমি আর কিছুই বলব না। দুটি সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও দ্রুত জীবিত অবস্থায় আমার স্বামীকে উদ্ধারের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ মেয়রের শ্বশুর নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি রাজনীতি বুঝি না। তবে এ টুকু বলতে পারি, রাজনৈতিক কারণেই আমার জামাই নিখোঁজ হয়েছে।’

মেয়রের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম টুকন জানান, সরিষাবাড়ী পৌরসভায় স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে তার ভাইয়ের দায়িত্বকালীন সময়ে। রাজনৈতিক একটি গ্রুপ তার এ কাজে ঈর্ষাপরায়ণ হয়েই এ ঘটনা ঘটাতে পারে। এদিকে নিখোঁজ মেয়রের উদ্ধারের দাবিতে মঙ্গবার বেলা ১১টায় পৌরসভা কার্যালয় সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে লিখিত বক্তব্য দেন প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ আলী। এ সময় পৌর কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক গণি মিয়া, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান, আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোফাজ্জল হোসেন, জহুরুল ইসলাম মানিক উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মেয়র রুকন পৌর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি। তিনি বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করে ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সরিষাবাড়ী পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি রাজধানীর উত্তরা ১৩নং সেক্টরে গাউসুল আযম এভিনিউর নাহার প্লাজা নামে ৬০ নম্বর ভাড়া বাসায় দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করে ব্যবসা করে আসছেন। সপ্তাহে ২-৩ দিন তিনি সরিষাবাড়ী আসেন। জানা যায়, পৌরসভার ঠিকাদারি লাইসেন্স নবায়ন নিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় ঠিকাদার রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মেয়র রুকনের বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর হামলার ঘটনা ঘটে। এ কারণে পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়। একপর্যায়ে মেয়রকে প্রাণনাশের হুমকি দেন ওই ঠিকাদার। এরই মধ্যে পৌরসভার প্রধান কর আদায়কারী মিয়া হাসান মাসুদ মুন্নাফকে অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করেন মেয়র। এ কারণে কর আদায়কারী মুন্নাফ ক্ষুব্ধ হয়ে মেয়রকে দেখে নেয়া হবে বলে হুমকি দেন। এ ছাড়া নেশায় আসক্ত থাকায় মেয়র তার সাবেক গানম্যান পল্লব মিয়াকে চাকরিচ্যুত করেন। এ কারণে মেয়রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় পল্লব। এসব বিষয় নিখোঁজের কারণ কি-না তা খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের একটি টিম, র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ ও ডিবি মেয়রকে উদ্ধারে একযোগে কাজ করছে। উত্তরা পশ্চিম থানার ইন্সপেক্টর অপারেশন শাহ আলম যুগান্তরকে জানান, মোবাইলের কললিস্ট এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মেয়রকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। মেয়রের কেয়ারটেকার মিজান জানান, গাজীপুরে মেয়রের ফ্যাক্টরি এবং বনানীতে বায়িং হাউসের ব্যবসা রয়েছে। তিনি সপ্তাহে রাজনৈতিক কাজে ২-৩ দিন সরিষাবাড়ীতে যান।

Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here