মোঃ রোকনুজ্জামান শরীফ
ঊর্মি, একটি নাম, একটি স্বপ্ন। এক মা-বাবার নাড়ী ছেড়া বন্ধন। এক দাদা-দাদীর আদরের ধন। একটি বিদ্যালয়ের সতীর্থদের নিখাদ ভালবাসা। আগামী বাংলার সু-নাগরিক। কিন্তু না, মনুষ্যরূপী জানোয়াররা বঙ্গললনার স্বপ্নটাকে বাচতে দিল না। হয়তবা হতে পারতো ভবিষ্যতে বাংলার মুখ উজ্জলকারী নতুন কিছুর উদ্ভাবক। হতে পারতো বিশ্ব জয় করা বীর নারী। ছিনে আনত মহামূল্যবান সম্মান। আলোকিত হত বাংলার মুখ। কিন্ত না হিং¯্র দানবের কুরুচির লালসার শিকারে জীবন দিতে হল উর্মিকে। জানোয়ারের হিং¯্র থাবায় ঊর্মির সোনালী স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বড় মাছুয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান সাংবাদিক জুলফিকার আমিন সোহেল এর চতুর্থ শ্রেনীতে পড়ুয়া কন্যা ঊর্মি (১০)। দাদা প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন আকন।
ঘটনা শুরু: শিশু উর্মি বড় মাছুয়া গ্রামে দাদী মোসাঃ মেহেরুননেছা এর তত্ত্বাবধানে ৬নং মধ্য বড় মাছুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেনীতে পড়াশুনা করতো। গত ২১-০৭-২০১৭ইং তারিখ উর্মি তার বান্ধবী সানজিদার বাড়ি রাত্রে থেকে পড়াশুনা করবে বলে তার দাদী মেহেরুননেছাকে জানিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায় এবং পরের দিন বাড়ি ফিরবে বলে তার দাদীকে জানায়। উর্মি প্রায়শই সানজিদাদের বাড়ি আসা-যাওয়া করতো। কিন্তু গত ২২-০৭-২০১৭ইং তারিখ যথারীতি বিদ্যালয় ছুটির পর উর্মি বাড়ি না ফেরায় তার বাবা, বোন শর্মী ও দাদী মেহেরুননেছা, উর্মিকে বিভিন্ন স্থানে খোজাখুজি করে না পেয়ে মসজিদের মাইক দিয়ে উর্মি হারানোর খবর প্রচার করে। অবশেষে মঠবাড়িয়া থানায় হারানো গিয়েছে মর্মে সকাল ১০.৩০ সময় সাধারন ডাইরী করে। ডাইরী নং ১০০২, তাং ২৩-০৭-২০১৭ইং। সাধারন ডাইরী শেষে ঐ দিনই সকাল ১১টায় উর্মির কাকা মনিরুল আমিন পাভেল উর্মির বাবা সাংবাদিক জুলফিকার আমিন সোহেলকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানায় যে প্রতিবেশী কুরছিয়া বেগম জানতে পেরেছে ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম আকন এর বাড়ির পিছনে জব্বার মোল্লার পরিত্যাক্ত বাগানের সীমানা বেড় এর মধ্যে উর্মির মৃতদেহ পানির মধ্যে উপুর অবস্থায় ভাসতে ছিল। উর্মির মৃতদেহ ভাসমান অবস্থায় তার ব্যবহৃত ওড়নার এক মাথা দিয়ে গলায় ফাস লাগানো এবং অন্য মাথা দিয়ে দুই হাত একত্র করে বাধা আছে । তার কান, মুখ, নাক দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। এমনকি উর্মির নি¤œাংগ বিবস্ত্র অবস্থায় ছিল ও পায়ের জুতা ছিল না। অনুমান করা হয় ২১-০৭-২০১৭ইং তারিখ থেকে ২৩-০৭-২০১৭ইং তারিখ এর মধ্যে কোন এক সময়ে উর্মিকে ধর্ষন শেষে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।
মামলা দায়ের: চাঞ্চল্যকর উর্মি হত্যার ঘটনার দিন রাতে অজ্ঞাত আসামী করে মঠবাড়িয়া থানায় ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় একটি হত্য মামলা দায়ের করেন উর্মির বাবা সাংবাদিক জুলফিকার আমিন সোহেল । মামলা নং ২৪/২৫৫। পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোঃ ওয়ালিদ হোসেন ও মঠবাড়িয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কাজী শাজ নেওয়াজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশ ঘটনার দিন উর্মির লাশ উদ্ধার করে পিরোজপুর জেলা মর্গে প্রেরন করে ময়না তদন্তের পরে গত ২৪-০৭-২০১৭ইং তারিখ নিহতের লাশ রড় মাছুয়া পৌছলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পরে জানাযা শেষে পারিবারিক করস্থানে উর্মির লাশ দাফন করা হয়।
মানববন্ধন: এ দিকে চঞ্চল্যকর এ শিশু হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবীতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড ও এলাকাবাসী একাধিকবার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
গ্রেফতার: চাঞ্চল্যকর উর্মি হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে স্থানীয় উত্তর বড় মাছুয়া গ্রামের মৃত কুদ্দুস আকনের পুত্র ছগীর আকন (৩৫)কে উর্মি হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন দেখিয়ে ২৮-০৭-২০১৭ইং তারিখ গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরন করেছে পুলিশ। পরে গত ৩১-০৭-২০১৭ইং তারিখ পুলিশ ৩ (তিন) দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে ১৬-০৮-২০১৭ইং তারিখ মঠবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক বেল্লাল হোসেন ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত রিপোর্ট: চাঞ্চল্যকর উর্মি হত্যার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মঠবাড়িয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাজহারুল আমিন ঘটনার ১৯ দিন পর ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ায় সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন’ ময়না তদন্তের রিপোর্টে উর্মিকে হত্যার পূর্বে ধর্ষন ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। এমনকি যৌনাঙ্গে আঘাত করে থেতলে দেয়া হয় বলে উল্লেখ করা হয়।
নিহতের পিতার বক্তব্য: নিহতের পিতা সাংবাদিক জুলফিকার আমিন সোহেল বলেন, আটককৃত ছগীর আকনই তার কন্যা উর্মির হত্যাকারী। ছগীর প্রায়শই উর্মিকে ডেকে পেয়ারা দিত। উর্মি ছগীরদের ঘরে আসা যাওয়া করতো। গত ২১ জুলাই শুক্রবার বিকেলে উর্মিকে ফুসলিয়ে ছগীরের বসতঘরের দোতলায় নিয়ে পাশবিক নির্যাতন শেষে শ্বাসরোধে হত্যার পর শক্তবস্তু দিয়ে আঘাত করে যৌনাঙ্গ থেতলে দেয়। এরপর ওড়না দিয়ে দুই হাত বেধে গলায় পেচিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে বাড়ির পাশের বাগানে ডোবায় ফেলে রাখে।
পাঠশেষাবস্থা: চাঞ্চল্যকর উর্মি হত্যার ঘটনায় মঠবাড়িয়ার সর্বস্তরে ক্ষোভের পরিবেশ বিরাজ করছে বলে জানায় সাংবাদিকবৃন্দ ও এলাকাবাসী। তারা বলছে এখন পর্যন্ত চাঞ্চল্যকর উর্মি হত্যার ঘটনায় পুলিশ কোন রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি।
কুরুচির থাবা ছিনিয়ে নিল ঊর্মির প্রান
Advertisement
Advertisement