কেবল অবৈধ স্যামসাং মোবাইল সেটেই রাজস্ব ক্ষতি ৪৬৪ কোটি টাকা

0
1250

দেশে অবৈধ মুঠোফোনের আমদানি কমানো যাচ্ছে না। অবৈধ মুঠোফোন আমদানির বিরুদ্ধে আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও অবাধে বিক্রি হচ্ছে এসব মুঠোফোন। এ জন্য শুধু একটি ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন আমদানি থেকে সরকার বছরে ৪৬৪ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
অবৈধভাবে আমদানি হওয়া ও অনুমোদনহীন মুঠোফোন বিক্রির বাজারকে বলা হয় ‘গ্রে মার্কেট’। এসব অবৈধ ফোনের আমদানি ও বিক্রি বন্ধের বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার মুঠোফোন নির্মাতা স্যামসাং বাংলাদেশ ঢাকা জেলা আদালতে মামলা করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ আগস্ট আদালত অবৈধ আমদানি বন্ধে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। স্যামসাং বাংলাদেশ মামলায় ১১টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কমলাপুরের আইসিডি শুল্ক কর্তৃপক্ষ, কুর্মিটোলা শুল্ক কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম শুল্ক কর্তৃপক্ষকে বিবাদী করেছে।
স্যামসাং কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিদিন বাংলাদেশের বাজারে বৈধভাবে গড়ে স্যামসাং ব্র্যান্ডের ১ হাজার ৭০০ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি হয়। একইভাবে প্রতিদিন অবৈধভাবে আমদানি হওয়া ১ হাজার ৭০০ ইউনিট স্যামসাং স্মার্টফোন বিক্রি হয়।
প্রতিটি স্মার্টফোনের গড় বিক্রয়মূল্য ১৫ হাজার টাকা হিসাবে স্যামসাংয়ের বার্ষিক আয় দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। গ্রে মার্কেটে বিক্রির এ আয় থেকে সরকার বছরে রাজস্ব হারাচ্ছে ৪৬৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
মুঠোফোন আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) হিসাবে দেশে বর্তমানে বছরে বৈধভাবে দুই কোটির বেশি মুঠোফোন আমদানি হয়। অবৈধভাবে আনুমানিক ৪০ লাখ ইউনিট মুঠোফোন আমদানি হয়, যার বাজারমূল্য দাঁড়ায় ২ হাজার কোটি টাকা।
বিএমপিআইএর সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক বলেন, মুঠোফোন আমদানিতে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্কের পাশাপাশি বাড়তি মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও সারচার্জ আরোপ হওয়ায় অবৈধভাবে মুঠোফোন আমদানি বাড়ছে। এটি বন্ধ করতে হলে আমদানি শুল্ক কমানোর সঙ্গে বাজার পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
এই খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রে মার্কেটে তিন ধরনের মুঠোফোন পাওয়া যায়। প্রথম ধরনের হ্যান্ডসেটগুলো একেবারে নতুন এবং আসল। দ্বিতীয় ধরনের হ্যান্ডসেটগুলো ব্যবহৃত, তবে নতুন বলে বিক্রি করা হয়। আর তৃতীয় ধরনের হ্যান্ডসেটগুলো একেবারেই নকল। এই তিন প্রকারের কোনোটিতেই গ্রাহকেরা পাচ্ছেন না বিক্রয়োত্তর সেবার নিশ্চয়তা, আর সরকার পাচ্ছে না রাজস্ব।
বৈধভাবে মুঠোফোন আমদানির জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) অনুমোদন প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য বিটিআরসির কাছ থেকে নির্ধারিত মডেলের জন্য অনাপত্তি সনদ নিতে হয়। নির্দিষ্ট মডেলের আমদানি সংখ্যা এবং এর প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্যও জানাতে হয় বিটিআরসিকে। এর ওপর ভিত্তি করেই আমদানি ছাড়পত্র দেয় বিটিআরসি।
অবৈধ মুঠোফোন আমদানি বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন,অবৈধ মুঠোফোন আমদানিতে একটি চক্র কাজ করে। এতে সরকারের কেউ জড়িত থাকলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। অবৈধ আমদানি বন্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শুল্ক কর্তৃপক্ষ, বিটিআরসিকে চিঠি দেওয়া হবে। আগামী সাত দিনের মধ্যে এর বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

Advertisement
Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here