চলতি মৌসুমে ৫০০ হেক্টর জমিতে সুপারির আবাদ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার ঐহিত্যবাহি সুপারি রফতানি হচ্ছে বিদেশেও!

0
487

,রাজাপুর(ঝালকাঠি)থেকে: দক্ষিনাঞ্চলে সুপারি কেনাবেচার হাট ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার ঐহিত্যবাহি বাগড়ি সাতুরিয়া সহ জমে উঠেছে বিভিন্ন জেলা উপজেলাসহ বাদুরতলা,নলছিটি ও মীরেরহাটে.
প্রতিদিন বাইরে থেকে ভীড় জমাচ্ছেন শত শত কৃষক এবং পাইকার। বিনা খরচে ও পরিচর্যায় উৎপাদিত এ সুপারি প্রতিদিন কেনা-বেচা চলছে লক্ষ লক্ষ টাকার। রাজাপুরের ৬ ইউনিয়নেই এবার সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। স্থানীয় বাজারগুলোতে এ বছর সুপারির দামও ভালো। ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় খুশি চাষিরা। রাজাপুরে উৎপাদিত সুপারি জেলার চাহিদা মিটিয়ে বস্তায় প্যাকিং করে ট্রাকে করে পাঠানো হচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে এমনকি রফতানি হচ্ছে বিদেশেও। সুপারি কিনতে দূর-দূরান্তের পাইকাররা এখন স্থানীয় বাজারগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন। সরেজমিনে রাজাপুরের বাগড়ি, পুটিয়াখালি, বাদুরতলা, লেবুবুনিয়া, গালুয়া ও সাতুরিয়া সুপারি কেনাবেচার হাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিদিন এ হাটে জেলা ও জেলার বাইরে থেকে ভিড় জমাচ্ছেন শত শত কৃষক এবং পাইকার। বেচাকেনা হচ্ছে লাখ লাখ টাকার সুপারি। পাইকাররা এখান থেকে সুপারি কিনে মজুদদারদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে থাকেন। এক সময় ফিলিপাইন ও নিকোবর থেকে আমদানিকৃত এশীয় পামগাছ এরিকা কাটচু জাতের এ ফলটি বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায় আবাদ হলেও বরিশাল ও খুলনা বিভাগে বেশি জন্মে। একবার এ গাছ লাগালে তেমন কোন পরিচর্যা ছাড়াই ৩০-৩৫বছর ফলন দেয়। কৃষকরা জানিয়েছেন, একবার এ গাছ লাগালে তেমন কোনো পরিচর্যা ছাড়াই ৩০-৩৫ বছর ফলন দেয়। এতে আয় হয় ধানের চেয়ে তিন-চারগুন বেশি। তেমনিভাবে সুপারিও বেশি ফলে। তাই এ অঞ্চলের কৃষকরা সুপারি চাষের দিকে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তা ছাড়া সুপারি বাগানে অনায়াশে লেবু, হলুদসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা যায়। রাজাপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজাপুর উপজেলার ৫৪টি গ্রামের ৩০০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা সুপারির বাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে। অনেকে আবার বাড়ির পাশে সুপারি গাছ লাগিয়েও ভালো ফলন পেয়েছেন। গত এক যুগের মধ্যে এ বছর সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে বলে দাবি করছে কৃষি বিভাগ। বর্তমানে স্থানীয় বাজারগুলোতে সুপারির দামও বেশ ভালো থাকায় সুপারি বাগান মালিকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। বাজারগুলোতে স্থানীয় হিসাব মতে প্রতি কুড়ি (২১০টি সুপারিতে এককুড়ি) সুপারির মূল্য ২শ’ থেকে ৩শ’ ৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় বাজার ও বাগানগুলো থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এসে সুপারি কিনে নিচ্ছেন। তাদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্নস্থানে চলে যাচ্ছে রাজাপুরের সুপারি। দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে রাজাপুরের সুপারির সুখ্যাতি থাকায় পাইকারদের হাত ঘুরে বড়জাতের সুপারি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। রাজাপুরের চাড়াখালি এলাকার সুপারির বাগান মালিক কিসমত ফরাজী বলেন, কয়েক বছরের চেয়ে এ বছর ফলন হয়েছে তিনগুন। আর সুপারির আকারও হয়েছে অনেক বড়। এ বছর আমি লক্ষাধিক টাকার সুপারি বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। একই গ্রামের রাসেল বেপারী বলেন, আমার দুই একর জমিতে সুপারির বাগান রয়েছে। এ বছর বৃষ্টির কারণে সুপারির ফলন ভাল হয়েছে। কোনো পোকার আক্রমণও নেই। আমি ইতোমধ্যে দুই লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করেছি। বাগানে আরও সুপারি রয়েছে। মীরেরহাট গ্রামের বাসিন্দা মোসলেম আলী বলেন, আমার বাপ দাদার আমলের সুপারির বাগান। এ বছরের মত এত ফলন আগে দেখিনি। আমাদের বাগানের সুপারি বাজারে বিক্রির জন্য নেয়া লাগে না। পাইকাররা বাগান থেকেই সুপারি কিনে নেন। রাজাপুরের বাঘরি বাজারে ভ্যানে করে সুপারি নিয়ে আসা মো. হাসান বলেন, এক ভ্যান সুপারি এক হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। এগুলো পাইকাররা কিনে ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রামের বাজারে বিক্রি করেন। চট্টগ্রাম থেকে সুপারি কিনতে আসা পাইকার গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমরা এখান থেকে সুপারি কিনে ট্রাকযোগে চট্টগ্রাম নিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে আড়তে সুপারির আকার নির্ধারণ করে বড় সাইজগুলো বিদেশে রফতানির জন্য মজুদ করি। অন্যান্য সুপারিগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চালান করছি। রাজাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিয়াজ উল্লাহ বাহাদুর বলেন, এ বছর সুপারি চাষের জন্য অনুকূল আবহাওয়া সৃষ্টি হওয়ায় এ অঞ্চলে সুপারির ফলন অত্যাধিক ভালো হয়েছে। যা দেখে এলাকার মানুষ সুপারি চাষে আরো উৎসাহী হবে। সুপারি বাগান মালিকরা প্রতি বছরই সুপারি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শেখ আবুবকর সিদ্দিক জানান, জেলায় চলতি মৌসুমে ৫০০ হেক্টর জমিতে সুপারির আবাদ হয়েছে। লাভজনক হওয়ায় এ ফসলটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে।

Advertisement
Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here