অপরাধ বিচিত্রা রিপোর্টঃ
বখাটেদের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় নিজের সুরক্ষার্থে বনানী থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছিলেন এক গার্মেন্টকর্মী। পুলিশ তার সুরক্ষায় সামান্যতম উদ্যোগও নেয়নি। উল্টো জিডি দায়েরের ‘অপরাধে’ ওই গার্মেন্টকর্মীকে তুলে নিয়ে রাতভর গণধর্ষণ করেছে সেই বখাটেরা!
ধর্ষিতার অসহায়ত্বের চিত্র এখানেই শেষ হয়ে যায়নি।
গণধর্ষণের শিকার হয়ে গুরুতর অবস্থায় তিনি চিকিৎসা নেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে। হাসপাতাল থেকে যথাযথ সনদ নিয়ে ফের থানায় যান ওই গার্মেন্টকর্মী। না, এবারও থানা থেকে কোনোরকম সহায়তা মেলেনি।
তবে ধর্ষিতা ওই গার্মেন্টকর্মীও ছেড়ে দেবার পাত্রী নন। তিনি লেগে থাকেন অভিযোগ হাতে নিয়ে। কিন্তু অভিযোগ গ্রহণ না করে তাকে নানারকম কুরুচিপূর্ণ প্রশ্ন করা হয় থানায়। মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে দিনের পর দিন অবহেলা করা হয়।
ঘটনার ১৭ দিন পর ওসির সামনে হাজিন হন ধর্ষিতা। আবারও তার ভাগ্যে চরম ভর্ৎসনা। অভিযোগ না নিয়েই গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয় ধর্ষিতাকে। উপায়ান্তর না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। আদালতে মামলাটি গ্রহণের জন্য থানাকে নির্দেশ দেন। আর, তাতে সেই প্রভাবশালী ওসির চোখরাঙানি আরও বেড়ে যায়।
সম্প্রতি দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর গণধর্ষণের ঘটনাটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করতেও টালবাহানা দেখিয়েছিলেন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বি এম ফরমান আলী। ভুক্তভোগীরা টানা দুই দিন থানার বারান্দায় ঘুরিয়েছিলেন। পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুরোধের পর মামলাটি গৃহীত হয়।
গার্মেন্টকর্মীর ধর্ষণের ঘটনা অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৩ মার্চ বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি নম্বর-১৯২) মাধ্যমে বখাটেদের উৎপাত থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য পুলিশি সহায়তা চেয়েছিলেন তিনি। তবে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় একদিন পর ৪ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে গার্মেন্ট থেকে বাসায় ফেরার পথে মেয়েটিকে অপহরণ করে কড়াইল বস্তির জুনায়েদ, নায়েব আলী, সোহাগ ও নাতি বালী নামের চার বখাটে।
অভিযোগ রয়েছে, রাতভর জুনায়েদের বাড়িতে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। গার্মেন্টকর্মীরা অপরাধ ছিল পুলিশকে অবহিত করা। গুরুতর অবস্থায় তাকে এক নারী উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে টানা আট দিন চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে সরাসরি ধর্ষণের সার্টিফিকেট নিয়ে থানায় চলে যান রুবি। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বি এম ফরমান আলী ১২ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ভুক্তভোগীকে নানা অজুহাতে ঘুরাতে থাকেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী।
তিনি বলেন, ওসি সাহেব আমার সঙ্গে অনেক খারাপ আচরণ করেছেন। আমাকে একের পর এক মানহানিকর প্রশ্ন করতেন। একদিন আমাদের গলাধাক্কা দিয়ে থানা থেকে বের করার জন্য নির্দেশ দেন অন্য পুলিশ সদস্যদের। বাধ্য হয়ে ঢাকার আদালতে গিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করি।
মামলার আইনজীবী জিয়াউর রহমান খান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী। একজন ধর্ষিতাকে যেভাবে থানার ওসি হয়রানি করেছেন তা সত্যিই বেদনাদায়ক। এখন আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। একই সঙ্গে মামলা ভিন্নখাতে ঠেলে দেওয়ার জন্য আমাকে নানাভাবে ফোন করাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গত ২৯ মার্চ নালিশি মামলা হিসেবে আমলে নেয় আদালত। তবে ওই সময় বিচারক ছুটিতে থাকায় গত ১৮ এপ্রিল আদালত থেকে থানায় নির্দেশনা পাঠানো হয় মামলা রেকর্ড নেওয়ার জন্য। এরপরও থানার হয়রানি চলতে থাকে। গত ২ মে অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়।
হতভাগা ধর্ষিতার ভাই আনিস জানান, আদালতে মামলার পর থেকেই আসামিরা তার বোনকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। মামলা তুলে না নেওয়া হলে তাকে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছে। তাদের এই হুমকির ফলে সে এখন আর গার্মেন্টে যেতে পারছে না। এমনকি মামলার পর থেকে কড়াইল বস্তির ঘর ছেড়ে বোনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছে। ধর্ষকদের উপযুক্ত বিচার দাবি করেন আনিস।
জানা গেছে, জুনায়েদ কড়াইল বস্তিতে অবৈধ বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবসা করেন। তিনি বনানী থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে নির্বিঘ্নে এসব কাজ করে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে বস্তির কেউ কথা বলার সাহস পায় না।