জিতলেন মুশফিক হারল বাংলাদেশ

0
1188
বাংলাদেশ ২৭৮/৭, ৫০ : দক্ষিণ আফ্রিকা ২৮২/০, ৪২.৫ * ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ১০ উইকেটে জয়ী

সমালোচনার কশাঘাতে দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিল পিঠ। টানা দুই টেস্টে টস জিতে ফিল্ডিং নেয়ার বিস্ময়কর সিদ্ধান্ত, দলের ভরাডুবি এবং টিম ম্যানেজমেন্টের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেয়ার রেশ ধরে বিসিবির তোপের মুখে পড়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। টেস্ট দলের নেতৃত্ব থেকে তাকে সরিয়ে দেয়ার গুঞ্জনের মধ্যেই রঙিন পোশাকে ব্যাট হাতে সব সমালোচনার জবাব দিলেন মুশফিক। দুঃসময়কে পাল্টা জবাব দিয়ে দুর্দান্ত এক শতকে নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করার লড়াইয়ে জিতলেন তিনি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্টের পর ওয়ানডেতেও ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে থাকল বাংলাদেশ। রোববার কিম্বার্লির ডায়মন্ড ওভালে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে কুইন্টন ডি কক ও হাশিম আমলার রেকর্ড ভাঙা উদ্বোধনী জুটিতে দশ উইকেটের বিশাল জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। মুশফিকের অপরাজিত ১১০ রানের দুরন্ত ইনিংসে ভর করে সাত উইকেটে ২৭৮ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ডায়মন্ড ওভালের ব্যাটিং স্বর্গে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহটা লড়াই করার মতো যথেষ্ট ছিল না। দুই ওপেনারের সেঞ্চুরিতে ৪৩ বল হাতে রেখেই হেসেখেলে জয় তুলে নেয় স্বাগতিকরা। ডি কক ১৬৮ এবং আমলা ১১০ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। ওয়ানডেতে এটি ডি ককের ১৩তম ও আমলার ২৬তম সেঞ্চুরি। তাদের ২৮২ রানের অবিচ্ছিন্ন যুগলবন্দি শুধু বাংলাদেশ নয়, যেকোনো দলের বিপক্ষেই ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ জুটি। সব মিলিয়ে ওয়ানডে ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটি এটি। এক জুটিতেই ওয়ানডেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড গড়ল দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের সাত বোলারের কেউই দাঁত বসাতে পারেননি প্রোটিয়া ব্যাটিংয়ে। চার পেসারের মধ্যে শুধু অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজাই ওভারপ্রতি ছয়ের নিচে রান দিয়েছেন। ব্যাটিংয়ে যেমন তামিম, বোলিংয়ে তেমনি মোস্তাফিজুর রহমানের অনুপস্থিতি প্রবলভাবে অনুভূত হয়েছে। চোটের থাবায় প্রথম ওয়ানডেতে খেলা হয়নি তাদের। তবে এমন নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের পর সব অজুহাতই খোঁড়া মনে হতে বাধ্য। ডায়মন্ড ওভালের রানপ্রসবা উইকেটে পরে ব্যাট করে জেতাটা বেশি সহজ- ব্যাপারটা জানা থাকার পরও টস জিতে ব্যাটিং নেয়ার ব্যাখ্যা সম্ভবত টেস্টের দুঃস্মৃতি।

Advertisement
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের ইনিংসের মেরুদণ্ড ছিল নিঃসন্দেহে মুশফিকুর রহিমের অপরাজিত ১১০ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটি। তার হার না মানা শতকেই সাত উইকেটে ২৭৮ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। তবে রানটা অনায়াসে তিনশ’ ছাড়িয়ে যেতে পারত। কিন্তু শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েও স্লগ ওভারে প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। শেষ দশ ওভারে এসেছে ৭৬ রান। শেষ পাঁচ ওভারে ৪১। রানটা আরও বেশি না হওয়ার আরেকটি কারণ, একাই বুক চিতিয়ে লড়াই করা মুশফিককে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি কেউ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১ রান এসেছে ওপেনার ইমরুল কায়েসের ব্যাট থেকে। অথচ ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের আট ব্যাটসম্যানের সবাই অন্তত দুই অঙ্ক ছুঁয়েছেন। কিন্তু মুশফিক ছাড়া কেউই ভালো শুরুটাকে বড় ইনিংসে অনূদিত করতে পারেননি। উইকেটে থিতু হয়ে আউট হয়েছেন লিটন দাস (২১), ইমরুল কায়েস, সাকিব আল হাসান (২৯), মাহমুদউল্লাহ (২৬) ও সাব্বির রহমান (১৯)।

সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলের মধ্যে মুশফিক ছিলেন উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। টেস্ট সিরিজে ভরাডুবির পর নেতৃত্বের পাশাপাশি তার সাম্প্রতিক ব্যাটিং ফর্ম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। তার কিছু মন্তব্য বোর্ডের পছন্দ না হওয়ায় মুশফিকের সামনে টেস্ট দলের নেতৃত্ব হারানোর শঙ্কা। এমন কঠিন সময়ে চাপের মুখে ভেঙে না পড়ে উল্টো ব্যাট হাতেই সব সমালোচনার জবাব দিলেন মুশফিক। টেস্টের দুঃস্মৃতি পেছনে ফেলে রঙিন পোশাকে প্রথম ম্যাচেই ফিরলেন স্বরূপে। দারুণ সব শট খেলে ছড়ালেন মুগ্ধতা। ঘোচালেন দলের এক অপূর্ণতা। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান এই প্রথম সেঞ্চুরি করছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। সব ফরম্যাট মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম সেঞ্চুরি এটি। ১০৮ বলে ক্যারিয়ারের পঞ্চম ওয়ানডে শতক পূর্ণ করা মুশফিক শেষ পর্যন্ত ১১০ রানে অপরাজিত থাকেন। ১১৬ বলের ইনিংসটি তিনি সাজিয়েছেন ১১টি চার ও দুটি ছক্কায়। মুশফিকের মতো বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এদিন ওয়ানডেতে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়েছেন সাকিব। মাইলফলক ছুঁতে দরকার ছিল ১৭ রান। ওয়ানডেতে দুইশ’ উইকেটের মাইলফলক তিনি আগেই পেরিয়েছেন। ওয়ানডে ইতিহাসে সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে পাঁচ হাজার রান ও অন্তত দুইশ’ উইকেটের ‘ডাবল’ ছোঁয়ার কীর্তি গড়লেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। সাকিবের লেগেছে মাত্র ১৭৮ ম্যাচ।
টেস্ট সিরিজে টস জিতে ফিল্ডিং নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রবল সমালোচনা হওয়ায় প্রথম ওয়ানডেতে টস জিতে ব্যাটিং নেন মাশরাফি মুর্তজা। যদিও কিম্বার্লির ডায়মন্ড ওভালে রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডই বেশি। টসের আগেই অবশ্য জোড়া ধাক্কা হজম করতে হয় বাংলাদেশকে। আগেরদিন অনুশীলনের সময় পা মচকে যাওয়ায় প্রথম ওয়ানডেতে দর্শক হয়ে যান মোস্তাফিজুর রহমান। চোট পুরোপুরি না সারায় একাদশে নেই তামিম ইকবালও। দলের সেরা ব্যাটসম্যান ও সেরা বোলারকে ছাড়াই লড়াইয়ে নামতে হয় বাংলাদেশকে। বাজে ফর্মের কারণে কাল একাদশে জায়গা পাননি সৌম্য সরকারও। তামিম ও সৌম্যর অনুপস্থিতিতে ওপেনিংয়ে প্রথমবারের মতো জুটি বেঁধেছিলেন ইমরুল ও লিটন। শুরুটা একেবারে খারাপ হয়নি তাদের। নবম ওভারে লিটনের বিদায়ে ভাঙে ৪৩ রানের ওপেনিং জুটি। দলীয় ৬৭ রানে বিদায় নেন ইমরুল। এরপর টানা দুটি ফিফটি জুটিতে দলকে একাই এগিয়ে নেন মুশফিক। তৃতীয় উইকেটে সাকিবের সঙ্গে ৫৯, চতুর্থ উইকেটে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৬৯ এবং পঞ্চম উইকেটে সাব্বিরের সঙ্গে ৪২ রানের কার্যত জুটি গড়েন মুশফিক। স্লগ ওভারে ২১ বলে ১৯ করে সাব্বিরের বিদয়ের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি নাসির হোসেনও। আট বলে ১১ রান করে আউট হন তিনি। অভিষিক্ত মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ১১ বলে ১৬ করে ইনিংসের শেষ বলে কাগিসো রাবাদার চতুর্থ শিকারে পরিণত হন। ৪৩ রানে চার উইকেট নিয়ে রাবাদাই দক্ষিণ আফ্রিকার সফলতম বোলার।

Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here