জীবনের পরিবর্তনটাকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন জন এফ কেনেডি। জীবনের কাঁধে হাত রেখে তাই কেনেডি বলেছিলেন, ‘পরিবর্তন জীবনেরই একটি আইন, আর এই পরিবর্তনটাকে পকেটে পুরতে অতীত এবং বর্তমানটাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যৎ গড়ে নিন।’ জীবনে এই পরিবর্তনটা চিরন্তন সত্যের মতোই। কারও কাছে পরিবর্তনটা ধরা দেয় অল্প সময়ের মধ্যে। অনেকটা নাটকীয়ভাবে। যে যাই বলুক, যে যাই করুক আমরা কোনোভাবেই এই পরিবর্তনটাকে ঠেকাতে পারি না বা পারব না। তবে কিছু ক্ষেত্র অবশ্যই আছে। যেগুলো চাইলেই আপনি ঘষামাজা করে জীবনটাকে বশে আনতে পারেন। বদলে দিতে পারেন ছোট্ট জীবনটাকে। এমন কিছু অভ্যাস জীবনে বাস্তবায়িত করতে পারলে বদলে যেতে বাধ্য আপনার জীবন। চলুন, জীবন বদলে দেওয়া এমন ১০টি অভ্যাসের মুখোমুখি হই_
জীবনের মানে
আপনার জীবন, হোক না সেটা ছোট। তবু এই জীবনটা কেন আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, এই প্রশ্ন খুঁজে বেড়ান। কিংবা জীবনকে গুরুত্বপূর্ণ করতে কোন পথে হাঁটতে হবে আপনাকে? ছোট জীবনে আপনি কী অর্জন করতে চান? আপনার স্বপ্ন কী? চলার পথে কী আপনাকে সুখী করে তুলতে পারে? জীবনের অর্থ এবং জীবনের উদ্দেশ্য কী আপনার কাছে? এমন রাজ্যের প্রশ্নের উত্তর খোঁজা এবং তার সমাধান নিজের ভেতর থেকে বের করে আনার মাধ্যমটাকেই অভ্যাসে পরিণত করুন। সেই সঙ্গে আপনি কীভাবে বাঁচতে চান? জীবনের কোন দিকটাকে ফোকাস করতে চান; অর্থাৎ মূল লক্ষ্যটা কী হবে_ এসবের ভেতর সামনের জীবনটা খুঁজুন। বদলে যাবে জীবন!
স্বপ্ন বোর্ড নির্মাণ মনে পড়ে ছোট্ট বেলার কথা? যেই সময়টার শরীরজুড়ে ছিল স্বপ্ন। তখন স্বপ্ন দেখার জন্য গভীর রাতের দরকার পড়ত না। মধ্য দুপুরেও আমরা দিবা স্বপ্ন দেখতে পেতাম অনায়াসে। শুধু তাই নয়, স্বপ্নের হাত ধরে আমরা পেঁৗছে যেতাম অসম্ভবের দেশেও। কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা স্বপ্ন দেখা ভুলতে শুরু করি। সব কিছুকেই আস্তে আস্তে অসম্ভব মনে হতে শুরু করে। এই স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার বয়সটাকে কিন্তু চাইলেই লাগাম টেনে থামাতে পারেন একটি স্বপ্ন বোর্ডের মাধ্যমে। যেই বোর্ড ফের আপনাকে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করবে। যেই বোর্ডের হাত ধরে আপনি আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করবেন। শুধু তাই নয়, স্বপ্ন দেখা জগৎটাকে বিশ্বাসের কাতারেও নামিয়ে আনতে পারবেন। তো বানিয়ে ফেলুন আপনার স্বপ্নের বোর্ড। যার সামনে দাঁড়ালেই ধরা দেবে স্বপ্নরা।
লক্ষ্য নির্ধারণের পরে এক জীবনে কত চাওয়া-পাওয়া থাকে মানুষের। সব একসঙ্গে ধরতে চাওয়াটা বোকামির খাতায় নাম লেখানোর মতো। আপনি কী করতে চান? কোন পথে হাঁটতে চান? এসব ঠিক করে তার ওপর পরিকল্পনা করুন দীর্ঘমেয়াদি, মাঝারি এবং স্বল্পমেয়াদি। এসব ঠিক করেই লক্ষ্যের দিকে ছুটে চলুন এবং তার ওপর স্বপ্ন দেখুন। তবে আপনার লক্ষ্য যে পরিবর্তন হতে পারে সেটাও মাথায় রাখুন। তাই বিকল্প পদ্ধতিতে আপনাকে যে আগাতে হতে পারে তারও কিছুটা প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন। তার ওপরও স্বপ্ন দেখুন। তবে কোনো অবস্থাতেই স্বপ্ন ধাওয়া করার কথা ভুললে চলবে না!
দুঃখবোধের দেয়াল ভেঙে ফেলে আসা দিন থেকে পাওয়া কষ্ট চাইলেই ভোলা যায় না। তাই বলে সেই কষ্টদের ভিড়ে নিজেকে কখনও হারানো যাবে না। অতীতের এই দুঃখবোধ থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন দিনের কথা ভাবুন। ফেলে আসা কষ্টের কথা ভেবে ভেবে সময়টা শেষ করে দেবেন না। এতে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন না।
যদি কোনোভাবেই সেই কষ্টদের কথা ভুলতে না পারেন তো খোলা জায়গায় গিয়ে দাঁড়ান কিছু গ্যাস বেলুন নিয়ে। সেইসব বেলুনের গায়ে দুঃখ-কষ্ট আর আক্ষেপের কথাগুলো লিখে তাদের উড়িয়ে দিন আকাশে। তারা মেঘেদের কাছে দিয়ে দিক আপনার কষ্টগুলো। এরপর নতুন করে জীবনে মন দিন। ভেঙে ফেলুন দুঃখবোধের দেয়াল। শুরু করুন নতুন জীবন।
ভয়ের মুখে লাগাম আপনি যদি লক্ষ্য ঠিক করুন নিজেকে বক্তা হিসেবে দেখার। তো বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান জনসমক্ষে। হতে পারে সেটা পল্টন ময়দানে। বিষয়টা হাস্যকর হতে পারে অন্যের কাছে। তাতে আপনার কী যায়-আসে। যদি আপনি বিষয়টাতে ভয় পান, মানে কোথাও গিয়ে বক্তৃতা দিতে হাঁটু কাঁপান তবে চলবে না। এমন ভয় পিছু টান দিতে পারে যে কোনো পেশার যে কাউকেই। বলি, কিছুতেই ভয়দের কাছে আসতে দেওয়া যাবে না। ভয় এড়াতে চাইলে আপনি ভয়ানক বিষয়গুলোর একটা লিস্ট করুন। তারপর তার প্র্যাকটিস শুরু করুন একান্তে। কাউকে ভালোবাসলে সেটা বলতেও যদি ভয় পান তারও প্র্যাকটিস করতে পারেন আয়নায়। ভয় কাটলে দাঁড়ান তার সামনে। বলে দিন মনের কথা। জীবনের লক্ষ্যে বা জীবন পরিবর্তনেও এভাবে কাটিয়ে উঠতে পারেন ভয়।
ভারসাম্য জীবন মাথায় রাখবেন, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন ঘটে আমাদের স্বাস্থ্য, শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক অবস্থার। এই পরিবর্তনের সঙ্গে নিজের রুটিনও বদলাতে হবে। বিশেষ করে মন আর শরীরটাকে ভালো রাখতে এই পরিবর্তনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে পারেন। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরটাকে বশে আনতে পারেন। ভারসাম্যও আনতে পারেন চলাফেরায়।