ঃ মোঃ রাসেল কবির ঃ
রিং বাজছে, পকেট থেকে বের হলো নকিয়া সাদামাটা একটা মোবাইল ফোন। কানে দিতেই ঐ প্রান্ত থেকে ভেসে এলো “আব্বু আমার খুব জ্বর, তুমি বাসায় চলে এসো।” না রে মা, ডিউটি শেষ না করে আমি যদি আগে বাসায় চলে আসি, তাহলে অন্য সবার বাবারা যে তাদের সন্তানদের কাছে আগে যেতে পারবে না। রাস্তায় জ্যাম লেগে যাবে মা। আমার তো অনেক দায়িত্ব। কথা গুলু বলছিলেন, জুরাইন রেলগেইট মোড়ে দাড়িয়ে ট্রাফিক সার্জেন্ট পোলক।
আকাশ ভেঙ্গে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে, গগণ বিদূর্রী আওয়াজ করে কান ফাটিয়ে কাছে কোথাও বজ্রপাত হচ্ছে। সদ্য বিবাহিত ট্রাফিক সার্জেন্ট বদরুল ভি.ভি.আই.পি ডিউটিতে দোলাইপাড় মোড়ে ব্যাস্ত। ওয়ারল্যাসে ঘন ঘন ম্যাসেজ আদান প্রদান চলছে। নব বিবাহিতা স্ত্রীর ফোন…. বাহিরে মোষল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে, একটু নিরাপদে থাকবেন। তুমি টেনশন করো না, বলেই কথা শেষ না করে ফোন রেখে দিল। বিড়বিড় করে শুধু বলল, মোষল ধারের বৃষ্টি আর বজ্রপাতের ভয় করি না, ভি.ভি.আই.পির জন্য রাস্তা ক্লিয়ার রাখতে হবে এটা আমার দায়িত্ব, এটাই স্যারের নির্দেশ।
হৃদয়ে নাড়া দেওয়ার মত এমনি হাজারো ঘটনাকে সাক্ষী করে, চৈত্রের প্রচন্ড তাপদাহের রৌদ্দ্রে দাড়িয়ে, মেঘ-বৃষ্টি আর রাস্তায় জমে থাকা হাটু পানি কে উপেক্ষা করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ট্রাফিক) এ.সি ফয়সাল মাহমুদের নেত্রীত্বে দায়িত্ব পালন করছেন এক ঝাক ট্রাফিক ইনেসপেক্টর ও ট্রাফিক সার্জেন্ট।
যে কাজে ঘনঘনই বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় তাদেরকে। দয়াগন্জ চৌরাস্তার মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট হাতের ইশারায়, কনষ্টেবল বাশি ফুকিয়ে যখন সবগুলু রাস্তা সচল রাখায় ব্যাস্ত তখন একপাশ থেকে সাইরেন বাজিয়ে এম্বুলেন্স, আর একপাশ থেকে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ওয়াও ওয়াও করতে করতে মোড়ের দিকে আসছে তার মধ্যে দেখা গেল অন্য কোন এক রাস্তা দিয়ে বিচারপতির গাড়ি বা স্থানীয় এম.পি মহাদয়ের গাড়ি। কি বিব্রতকর অবস্থা, কি কঠিন সিদ্বান্ত। তার মধ্যে সারাক্ষন মাথায় টেনশন রাস্তা সচল রাখতে হবে, কোন অব¯থাতেই রাস্তায় জ্যাম লাগতে দেয়া যাবে না।
৩০ মিনিট পর পর জুরাইনে ট্রেনের সিগন্যাল, রাস্তা ভাঙ্গা-চূড়া, মাঝে মাঝে গর্ত, আর রাষ্ট্রের সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান গুলুর রাস্তা খোড়াখুড়ি তো আছেই। সমস্যাকে পেছনে ফেলে রাস্তার যানবাহনকে সচল রাখতে সর্বদা ছুটে চলছেন ট্রফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা।
অথচ সি.এন.জিতে জ্যামে বসে যে ট্রাফিক পুলিশের চৌদ্দি গুষ্টি উদ্বার করছেন, সে ট্রাফিক পুলিশ কিন্তু রাস্তা বানানোর পরিকল্পনাবিদ নন। রাস্তা খোড়াখুড়ির কন্ট্রেকদার বা ঠিকাদারও নন। বরং ঐ লোকগুলুই হাত নেড়ে, বাশি ফুকিয়ে গর্তে পড়ে যাওয়া রিক্সাটাকে ধাক্কা দিয়ে উঠিয়ে রাস্তাকে সচল রেখে, সময়মত আপনাকে আপনার স্ত্রী সন্তানের কাছে পৌছে দেয়ার প্রানন্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর এক ঈদে ছুটি মিলে নাই তাই আরেক ঈদে ছুটি চেয়ে আবেদন করেছে, ছোট্ট বোনের জন্য নতুন জামা কিনেছে, মা কে ফোন করে বলেছে…. “মা এই ঈদে ছুটি পাবো, তোমার সাথে ঈদ করব”। এমন আশাবাদী টি.আই- সার্জেন্টারাও ছুটি বিষর্জন দিচ্ছে। তাদেরকে নিয়ে দোলাইপাড়, জুরাইন, পোস্তগোলার প্রতিটি পয়েন্ট সচল রেখে ঈদে ঘরমুখো মানুষদের যাত্রা নির্বিঘœ করতে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন কঠোর পরিশ্রমি ট্রাফিক পুলিশের এই উর্দ্বতন কর্মকর্তা।
তার অধিনস্ত ট্রাফিক ইনেসপেক্টর (টি.আই) মোঃ জাকির হোসেন, টি.আই মাবিয়ান, টি.আই মোস্তফা, সার্জেন্ট জয়দেবের সাথে আলাপকালে এ.সি ফয়সাল মাহমুদের ব্যাপারে জানতে চাইলে, তারা তাদের স্যারের ব্যাপক প্রশংসা করেন। এবং বলেন স্যার অতিশয় সৎ-নিষ্ঠাবান ও দক্ষ অফিসার। সদা হস্যউজ্জ্বল স্যার নিয়মিত পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন এবং আমাদেরকে সব সময় মটিবেটেড করে রাখেন। তার প্রেরনায় কাজে উৎসাহ বেড়ে যায়।