সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বীরেন্দ্রনগর সীমান্তে সিন্ডিকেডের মাধ্যমে চলছে চোরাই কয়লার জমজমাট বাণিজ্য। গতকাল ১৪.১০.১৭ইং শনিবার সকাল ১০টায় ও গত ১৩.০৯.১৭ইং শুক্রবার বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পৃথক অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৪লক্ষ টাকা মূল্যের সাড়ে ৪৩ মেঃটন (১৩০০বস্তা) চোরাই কয়লা আটক করেছে বিজিবি। কিন্তু চোরাচালানী ও তাদের সিন্ডিকেডের গডফাদারদের গ্রেফতার করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসী জানায়,উপজেলার উত্তরশ্রীপুর ইউনিয়নের বীরেন্দ্রনগর বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় অবস্থিত বাগলী শুল্কস্টেশন দিয়ে প্রায় ৫ মাস যাবত কয়লা ও চুনাপাথর আমদানী বন্ধ থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বীরেন্দ্রনগর গ্রামের সিদ্দিক ড্রাইভারের ছেলে নজরুল মিয়া,তার ভাগিনা একই গ্রামের মঞ্জু মিয়ার ছেলে লিটন মিয়া,মৃত লাল মিয়ার ছেলে হযরত আলী,মৃত জামাল মিয়ার ছেলে মঞ্জুল মিয়ার নেতৃত্বে বীরেন্দ্রনগর গ্রামের রহমান মিয়া,শাদত মিয়া,একাব্বর মিয়া,মফিজ মিয়া,শামিম মিয়া,রংগাছড়া গ্রামের অদুদ মিয়া গং সিন্ডিকেড তৈরি করে প্রতিদিনের মতো গত শুক্রবার ভোর ৪টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত বাগলী এলসি পয়েন্টের পশ্চিম দিকে অবস্থিত বাগলী নদী দিয়ে ভারত থেকে ২৪হাজার বস্তা (৮০০মেঃটন) কয়লা পাচাঁর করে বাংলাদেশ-ভারত সীমানার ১১৯৩পিলার সংলগ্ন এলাকায় মজুদ করে রেখে ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করছিল। এখবর পেয়ে বিজিবি অভিযান চালিয়ে ২৪হাজার বস্তার (৮০০ মেঃটন) মধ্যে ২৪০০বস্তা (৮০মেঃটন) কয়লা আটক করে। এরপর আটককৃত ২৪০০বস্তা (৮০মেঃটন) কয়লার মধ্যে ১১০০বস্তা (সাড়ে ৩৬ মেঃটন) কয়লা চোরাচালানীদের গডফাদারদের অনুরোধে ঘটনাস্থলে রেখে ১৩০০বস্তা (সাড়ে ৪৩ মেঃটন) কয়লা ইঞ্জিনের নৌকা দিয়ে ক্যাম্পের নিয়ে যায় বিজিবি। আর চোরাচালানী ও তাদের গডফাদারদের হাতেনাতে পেয়েও গ্রেফতার করেনি এবং বিজিবির সহযোগীতায় চোরাচালানীরা তাদের পাচাঁরকৃত বাকি কয়লার বস্তাগুলো ভারতের ভিতরে নিয়ে লুকিয়ে রাখে। এবং এদিনগত রাত ১১টা থেকে আজ ১৪.১০.১৭ইং শনিবার ভোর ৫টা পর্যন্ত উপরের উল্লেখিত চোরাচালানী ও তাদের গডফাদাররা ভারতের ভিতরে লুকিয়ে রাখা ২২ হাজার ৭শত বস্তা (প্রায় ৭৫৭ মেঃটন) কয়লা আবারও ভারত থেকে শতাধিক শ্রমিক দিয়ে পাচাঁর করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এনে ইঞ্জিনের নৌকা ও ঠেলাগাড়ি দিয়ে বাগলী এলসি পয়েন্টে অবস্থিত বুড়ার দোকানের পিছনে,নজরুল মিয়া,লিটন মিয়া,শাজাহান খন্দকার ও সুরুজ মিয়ার ডিপুতে নিয়ে মজুদ করলেও বিজিবি এব্যাপারে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। চোরাচালানীরা বিজিবির সহযোগীতায় এভাবেই সিন্ডিকেডের মাধ্যমে সরকারের লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন শতশত মেঃটন কয়লা পাচাঁর করে এবং পাচাঁরকৃত ১ বস্তা (৪৫কেজি) কয়লা থেকে ৪৫টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করে। আদায়কৃত চাঁদার টাকার মধ্যে বাগলী কয়লা ও চুনাপাথর আমদানী কারক সমিতির নামে এই সমিতির ক্যাশিয়ার নজরুল মিয়া ও তার ভাগিনা সমিতি সাধারণ সম্পাদক লিটন মিয়া নিচ্ছে ১৫টাকা,বীরেন্দ্রনগর বিজিবি ক্যাম্পের নামে নিচ্ছে ২০টাকা,জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত থাকা সাংবাদিক ও থানা-পুলিশের নামে নিচ্ছে ১০টাকা। আর এই চাঁদার টাকা উত্তোলন করছে সুনামগঞ্জ ২৮ব্যাটালিয়নের বিজিবির সোর্স পরিচয় দিয়ে চোরাচালানী মঞ্জুল মিয়া ও হযরত আলী। এর আগে গত ০৫.১০.১৭ইং বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে ০৬.১০.১৭ইং শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সাড়ে ৪ হাজার বস্তা (১৫০মেঃটন) কয়লা ওপেন পাচাঁর করলেও এব্যাপারে বিজিবি কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এব্যাপারে জানতে বাগলী কয়লা ও চুনাপাথর আমদানী কারক সমিতির ক্যাশিয়ার নজরুল মিয়ার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে বারবার কল করার পরও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাগলী শুল্কস্টেশনের কয়লা ও চুনাপাথর আমদানী কারক সমিতির সভাপতি শাজাহান খন্দকার বলেন,বিজিবি ১৩০০বস্তা (সাড়ে ৪ মেঃটন) চোরাই কয়লা আটক করেছে বলে জানতে পেরেছি,তবে আমি কোন চোরাচালান সিন্ডিকেডের সাথে জড়িত নই এবং অবৈধ কোন ব্যবসা করি না।
উপজেলার উত্তরশ্রীপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও কয়লা ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন সেলিম,কয়লা ব্যবসায়ী সাব্বির হোসেন,জমির আলী,আক্কাস আলী,ওলি উল্লাহ,ফয়সাল আহমেদসহ আরো অনেকেই বলেন,সরকারের লক্ষলক্ষ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সিন্ডিকেডের মাধ্যমে নজরুল মিয়া,লিটন মিয়া,হযরত আলী,মঞ্জুল মিয়া গং চোরাচালানীদেরকে নিয়ে বীরেন্দ্রনগর বিজিবি ক্যাম্পের বাগলী এলসি পয়েন্ট সীমান্ত এলাকা দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত অবাধে কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁর করলেও চোরাচালানীদের গ্রেফতারের ব্যাপারে প্রশাসন কোন পদক্ষেপ না নেওয়া ফলে এই সীমান্ত চোরাচালানের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।
বীরেন্দ্রনগর বিজিবি ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার নায়েক সুবেদার হাবিব এর সরকারি মোবাইল নাম্বারে বারবার কল করার পরও রহস্যজনক কারণে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক নাসির উদ্দিন অবৈধ চোরাই কয়লা আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধের ব্যাপারে আমার পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।