দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, ‘সেবা প্রদানে দুর্নীতি করলে জেলে যেতে হবে। জনগণের প্রাপ্য সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম শৈথিল্য প্রদর্শন করা যাবে না। যদি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন তাহলে তাকে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। ব্যাংকের টাকা যারা তসরুফ করেছেন তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনা হবে। দুর্নীতি সহ্য করব না। দুর্নীতি করলে রেহাই নেই।’ বুধবার দুুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে ‘দুর্নীতি মুক্ত সরকারি সেবা : দুর্নীতির অভিযোগের প্রকৃতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন।
কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুদকের মামলা ক্যান্সারের মতো। এটা থেমে থাকে না, শেষ হয়। ক্যান্সার যেমন একটা মানুষকে শেষ করে দেয়, তার পরিবারকেও শেষ করে দেয়; তেমনি দুদকের মামলাও একটা মানুষকে তার পরিবারসহ শেষ করে দেয়। এজন্য আমরা কোনো মামলা দিতে চাই না; এ মামলা যাতে কারও বিরুদ্ধে না হয়। আমরা চাই আপনারা সতর্ক হোন। দুর্নীতি যাতে না হয়।’ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. রুহুল আমীনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার শংকর রঞ্জন সাহা, দুদকের মহাপরিচালক ড. মো. শামসুল আরেফিন, জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী, সিএমপি কমিশনার মো. ইকবাল বাহারসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, কোনো কিছু গোপন কিংবা লুকিয়ে রাখার দিন শেষ। কে কোথায়, কিভাবে, কখন ঘুষ খান বা দুর্নীতি করেন, তা একদিন সবাই জেনে যায়। একবার, দু’বার বাঁচতে পারলেও বারবার বাঁচার কোনো সুযোগ নেই। দুদক গত ১ বছরে প্রায় ৫৫০ জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। এর মাধ্যমে আমরা দুর্নীতিবাজদের একটা বার্তা দিতে চেয়েছি যে, তারা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। আমরা ছোট-বড় বিবেচনা না করে প্রায় সব সেক্টরেই হাত দিয়েছি। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সরকারি কর্মকর্তাদের বুঝতে হবে প্রতিটি কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা তার দায়িত্বের অংশ। নথিতে আলোচনা করুন লিখে ফাইল আটকে রাখলাম- এটাও দুর্নীতি। সচিবালয়ের নির্দেশিকা সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে। এ বিষয়গুলোও দুদকের নজরদারিতে রয়েছে। সময় এসেছে সত্য কথা বলার। কারও অন্যায় চাপের কাছে নতিস্বীকার না করার। চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে আইনানুগভাবে সব কাজ সম্পন্ন করুন। জনগণের কাছে নতিস্বীকার করুন; চাপের কাছে নয়। আইনানুগভাবে জনস্বার্থের কাজ করলে দুদক কোনো মামলা করবে না। তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ আসে। আমরা গত এক বছরে ১২ জন কর্মকর্তাকে আমাদের বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছি। তাদের বলেছি তোমাদের দরকার নেই আমাদের। এছাড়া ১৫ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে। কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, আপনি জনসেবা করতে গিয়ে যদি ভুল করেন, তা যদি উদ্দেশ্যমূলক কিংবা ইচ্ছাকৃত না হয়, তাহলে আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি আপনার বিরুদ্ধে মামলা হবে না। কিন্তু ছোট অপরাধ থেকে বড় অপরাধে যাওয়া যাবে না।
চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ কমিশনে আসা বিভিন্ন অভিযোগের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের কাছে অভিযোগ আসে বন্দরে স্ক্যানিং ছাড়া কনটেইনার চলে যায়, কিন্তু সেই কনটেইনার দিয়ে অস্ত্রও তো যেতে পারে। অস্ত্র যে যায়নি সেটি আমরা কিভাবে বলি? প্রতিটি কনটেইনার স্ক্যানিং করিয়ে ছাড় দিতে হবে।’
দুদক চেয়ারম্যান ভূমি অফিসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসে উল্লেখ করে বলেন, বেশিরভাগ দুর্নীতি হয়েছে ভূমি অফিসে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরাও দুর্নীতিতে জড়িত- মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা কুমিল্লায় শুনানি করেছি। সেখানে দেখলাম উচ্চমাধ্যমিকের একজন শিক্ষক, তিনি থাকেন ঢাকায়। কিন্তু তিনি তার বদলে একজনকে কিছু টাকার বদৌলতে সেখানে দিয়েছেন। এটা কেন হবে। শিক্ষকরা কেন দুর্নীতিগ্রস্ত হবেন। দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে সবাইকে।