পরিণতি বয়সে এসে যেন দৌড়ের স্বীকৃতি পেলেন ওবায়দুল কাদের

0
447

আলোচনার মানুষ তিনি। আলোচনা হয় তাকে নিয়ে রাজনীতি এবং রাজনীতির বাইরেও। আলোচনায় থাকতেও তিনি পছন্দ করেন। আলোচনার খাতিরে জন্ম দিয়েছেন অসংখ্য ঘটনারও। তবে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে থেকেই কেবল রাজনৈতিক জীবন গড়েননি তিনি। এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন তার। প্রতিযোগিতার বাজারে তাকে দৌড়াতে হয়েছে সমতালে, তবে ঠিক ভিন্ন আঙ্গিকে। অন্যরা যখন থেমে গেছেন, ঠিক সেখান থেকেই তিনি দৌড় শুরু করেছেন। দৌড়াচ্ছেন এখনো। রাজনীতির এই পরিণতি বয়সে এসে সে দৌড়ের যেন স্বীকৃতি পেলেন ওবায়দুল কাদের। দৌড়ের এক তীব্র প্রতিযোগিতায় টিকে গিয়েই বিশেষ আস্থা অর্জন করেন দলীয় সভানেত্রীর। রাজনীতিক ওবায়দুল কাদের। এ পরিচয় ছাড়িয়ে তিনি আরো পরিচয় ধারণ করে চলছেন। পরিশ্রমী, একনিষ্ঠ, তোষামোদবিরোধী, সাহিত্যপ্রেমী নানা অভিধায় পরিচয় মেলে কাদেরের। নিষ্ঠা এবং পরিশ্রমের বলেই রঙিন রাজনীতিক ক্যারিয়ার গঠন করতে পেরেছেন তিনি। প্রমাণ মিলেছে অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাবার পর থেকেই। বিশেষ প্রেক্ষাপটে দায়িত্ব নিয়ে গোটা মন্ত্রণালয় ঢেলে সাজিয়েছেন আলোচনার মানুষ কাদের। কাজের মূল্যায়নে তিনিই সর্বেসর্বা। কারো ওপর শতভাগ নির্ভর না করে মাঠ-ময়দানে নিজেই চষে বেড়াচ্ছেন। দুর্নীতির আখড়া যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের রূপ পরিবর্তন করেছেন তিনি। বিভিন্ন অভিযানে নিজেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার নেতৃত্বে যোগাযোগ খাতে আমূল পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ, বিআরটিএ, সেতু বিভাগে এখন আগের চিত্র মেলে না। গতি এসেছে সর্বত্রই। দেশজুড়ে যানবাহনের বৈধতা নিশ্চিত এবং যানজট নিরসনে বিশেষ মুন্সিয়ানাও দেখিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক অঙ্গনেও বিশেষ বিচক্ষণতার পরিচয় তুলে ধরছেন। সবাই যখন স্রোতে গা ভাসিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন, তখন ওবায়দুল কাদের শালীন এবং রাজনৈতিক পরিভাষা ব্যবহার করে বিশেষ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। ব্যক্তিত্ব আর নিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সংস্কারপন্থীর অভিশাপ থেকে নিজেকে নিষ্কৃতি দিতে সক্ষম হয়েছেন বেশ আগেই। একই গুণে অন্য দুর্বলতাগুলোও ঢাকতে পেরেছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। ১৯৫২-এর ১ জানুয়ারি, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে জন্ম নেন ওবায়দুল কাদের। কলেজ জীবন থেকে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার কারাবরণ করেন। ১৯৭৫ এর পর এক নাগাড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর দুবার ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা ও লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ওবায়দুল কাদের বিগত (১২ জুন ’৯৬) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নোয়াখালী-৫ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এসময় তিনি যুব ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রাণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

Advertisement

২০০২ সালের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন থেকে ২০০৯-এর সম্মেলন পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তিনি ২০০৭ সালের ৯ মার্চ জরুরি বিধিতে গ্রেফতার হয়ে ১৭ মাস ২৬ দিন কারাবরণ করেন। এসময় তার বিরুদ্ধে দলের সংস্কার চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। তবে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হয়ে অভিযোগের ঊর্ধ্বে অবস্থান করেন। ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর মন্ত্রী হয়ে পুরস্কৃত হন সাবেক এ ছাত্রলীগ নেতা। এরই ধারাবাহিকতায় দলের ২০তম কাউন্সিলে জ্যেষ্ঠ নেতাদের পেছনে ফেলে সাধারণ সম্পাদকের মুকুট পরেন ওবায়দুল কাদের।

Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here