পিনাক-৬ দুর্ঘটনার পুনঃতদন্ত ও দায়ীদের শাস্তি দাবি

0
1425

নিজস্ব প্রতিবেদক : যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল পিনাক-৬ দুর্ঘটনার পুনঃতদন্ত ও প্রকৃত অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি।

Advertisement

এছাড়া পবিত্র ঈদুল আজহায় নৌ-নিরাপত্তার জন্য ৯টি সুপারিশ উত্থাপন করেছে জাতীয় কমিটি।

শুক্রবার রাজধানীর কমরেড মণি সিংহ সড়কের মুক্তি ভবনে আয়োজিত এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি ও সুপারিশ উত্থাপন করা হয়।

পিনাক-৬ ট্রাজেডির তিন বছর পূর্তি ও আসন্ন ঈদে নৌ নিরাপত্তাবিষয়ক সুপারিশমালা উত্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, বিআইডব্লিউটিএর সাবেক পরিচালক এমদাদুল হক বাদশা, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের সদস্য সচিব আমিনুর রসুল বাবুল, সাবেক সাংসদ অ্যাডভোকেট তাসনিম রানা, জাতীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল ও সেকেন্দার হায়াৎ, অর্থ সম্পাদক পুষ্পেন রায়, প্রচার সম্পাদক জসি সিকদার প্রমুখ।

পিনাক-৬ দুর্ঘটনার পুনঃতদন্তের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নৌ দুর্ঘটনা তদন্তে সরকার যে ‘স্থায়ী তদন্ত কমিটি’ গঠন করেছে সেখানে নৌ প্রকৌশলী, পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবিদ, নৌ পরিবহনবিষয়ক গবেষক এবং নৌযান মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী প্রতিনিধি রাখা হয়নি। এ ধরনের একটি ত্রুটিপূর্ণ কমিটি পিনাক-৬ দুর্ঘটনার তদন্ত করায় শুরু থেকেই নানা প্রশ্ন উঠেছিল এবং এই কমিটির প্রতিবেদনে মূল অভিযুক্তদের আড়াল করে ‘উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে’ চাপানো হয়েছে। প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি না পাওয়ায় পরবর্তী সময়ে অয়েল ট্যাংকার বিস্ফোরণে সুন্দরবন ট্রাজেডিসহ গত তিন বছরে বেশ কয়েকটি আলোচিত নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব কারণে বিশেষজ্ঞ মহলসহ সাধারণ মানুষ নৌ নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত।

সংবাদ সম্মেলনে পিনাক-৬ দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি জাতীয় তদন্ত কমিটি গঠন, প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, সব নৌ দুর্ঘটনায় নিহতদের জনপ্রতি ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি প্রদান এবং নৌযান মালিকসহ দায়ীদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের অর্ধেক টাকা আদায় এবং নৌ দুর্ঘটনায় নিখোঁজদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও তাদের ‘মৃত’ হিসেবে গণ্য করে সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানানো হয়।

লিখিত বক্তব্যে আসন্ন ঈদুল আজহায় নৌপথে নিরাপদ যাতায়াতের জন্য ৯টি সুপারিশ উত্থাপন করে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি। সেগুলো হলো-

১. জননিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন।

২. চলমান দুর্যোগ মৌসুম ও পবিত্র ঈদুল আজহাকে অগ্রাধিকার দিয়ে ২০ আগস্ট থেকে গুরুত্বপূর্ণ নৌপথসমূহে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম শুরু

৩. নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের পাশাপাশি উপকূলীয় জেলাগুলোর পুলিশ প্রশাসনকে নৌ নিরাপত্তার কাজে সম্পৃক্তকরণ।

৪. ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন লঞ্চসহ সব ধরনের অবৈধ নৌযান চলাচল বন্ধে সারা বছর নৌ পরিবহন অধিদপ্তর ও বিআইডব্লিউটিএর অভিযান পরিচালনা।

৫. অবৈধ নৌযান শনাক্তকরণে নৌপথ বেষ্টিত প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীদের সমন্বয় ‘নৌ নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষ টাস্কফোর্স’ গঠন।

৬. ঈদের ১৫ দিন আগে সব টার্মিনাল ও গুরুত্বপূর্ণ লঞ্চঘাটে ক্লোজ সার্কিট টিভি স্থাপনসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।

৭. সব টার্মিনাল ও লঞ্চঘাটে টেলিভিশন, বেতার ও লাউড স্পিকারে নিয়মিত আবহাওয়ার সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রচার এবং সব নৌযানকে আবহাওয়া বার্তা মেনে চলতে বাধ্যকরণ।

৮. ঈদে ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চ চলাচল বন্ধে ঈদ-পূর্ববর্তী ১০ দিন যাত্রীবাহী নৌযানের সার্ভে বন্ধ স্থগিত রাখা।

৯. সব টার্মিনালের শৌচাগারগুলো সার্বক্ষণিক পরিচ্ছন্ন রাখা ও সেখানে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করা।

Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here