পেপারলেস ট্রেড চুক্তিতে বাণিজ্যমন্ত্রীর প্রথম স্বাক্ষর ডিজিটাল সুবিধায় রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাণিজ্যমন্ত্রীর আশাবাদ

0
397

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, পেপারলেস ট্রেড এর সুবিধা গ্রহনের জন্য বাংলাদেশ এ চুক্তিতে স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বাণিজ্যে জটিলতা দূর এবং দ্রুত কাজ সম্পাদন করতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানি অফিস, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি অফিস, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোসহ গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলোকে অটোমেশনের আওতায় আনা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য ইনফরমেশন পোর্টাল, গ্লোবাল ট্রেড ডানা চালু করা হয়েছে। এখন এ সব কাজ অন-লাইনে সম্পন্ন করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা এখন অতি অল্প সময়েই ব্যবসায়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে পারছেন। আমদানি ও রপ্তানি সহজ করতে  বিমান বন্দর, সমুদ্র বন্দর ও স্থল বন্দর, কাস্টমস, ভ্যাট ব্যবস্থাপনা ডিজিটার পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৫ হাজারের বেশি ডিজিটাল সেন্টার চালু করা হয়েছে। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি ৯ লাখ এবং ৬ কোটি ৭ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ই-গভর্নেন্স, ই-কমার্স, ই-ব্যাংকিং সুবিধা দেশের মানুষ ভোগ করছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা, ল্যান্ড রেজিষ্ট্রেশন সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় ৩৪.৮৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। এ বছর ৩৭.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পন্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সার্ভিস সেক্টরসহ এ রপ্তানি আয়ের পরিমান হবে ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালে বাংলাদেশের রপ্তানি ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী আজ (২৯ আগষ্ট) থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ‘হাইলেভেল ডায়ালগ অন এনহানসিং রিজিওন্যাল ট্রেড থ্রো ইফেকটিভ পার্টিসিপেশন ইন দি ডিজিটাল ইকোনমি’  শীর্ষক ডায়ালগে প্রথম প্যানেলিষ্ট হিসেবে বক্তৃতা প্রদানের সময় এসব কথা বলেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বৈদেশিক বাণিজ্যে সক্ষমতা অর্জনে পেপারলেস ট্রেড সহায়ক ভূমিকা রাখবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গালি জাতির স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশকে সোনার বাংলা গড়তে সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। তিনি বাঙ্গালী জাতিকে একটি স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন। আজ তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঙ্গালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি তথা দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সফল ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহন করে ভিশন ২০২১ ঘোষণা করেছেন। ২০২১ সালে বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ হবে  ডিজিটাল মধ্য আয়ের দেশ। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত দেশ।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘ ঘোষিত এমডিজি অর্জন করে পুরষ্কার লাভ করেছে। এখন ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করতে সফল ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত দশকে বাংলাদেশে জিডিপি ছিল গড়ে ৬ ভাগের বেশি, গত বছর অর্জিত হয়েছে ৭.১১ ভাগ। ফলে, বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষের হার ২৪.৮ ভাগ এবং হত দরিদ্র মানুষের হার ১১.৯ ভাগে নেমে এসেছে। এসডিজি অর্জনের মধ্যদিয়ে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৩ শতাংশের নীচে নেমে আসবে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, তৈরী পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয়। বিশ^বাজারে বাংলাদেশের ঔষধ, আইসিটি, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পন্য, জাহাজ নির্মাণ, হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য এবং কৃষিজাতপণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এ সকল পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের আইসিটি রপ্তানি করা সম্ভব হবে। বিদেশী বিনিয়োােগর জন্য বাংলাদেশ এখন খুবই আকর্ষনীয় স্থান। বর্তমান সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতি ও পরিবেশের কারনে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ছে। ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশ এখন একটি বড় বাজার। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সরকার আইন করে রক্ষা করেছে। এখন শিল্পে শতভাগ বিনিয়োগ ও বিনিয়োগকৃত অর্থ লাভসহ যে কোন সময় ফেরত নেওয়ার সুবিধা পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ১০০টি স্পেশাল ইকনোমিক জোনে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ছে। ফরেন ডাইরেস্ট ইনভেষ্টমেন্ট গত বছরের চেয়ে ৪৪ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
পরে ইউএনএসকাপ এর সদর দপ্তরে জাতিসংঘের ইকোনমিক এন্ড সোস্যাল কমিশন ফর এশিয়া এন্ড দি প্যাসিফিক(ইউএনএসকাপ)-এর সিদ্ধান্ত মোতাবের ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অন ফেসিলিটেশন অফ ক্রস-বর্ডার পেপারলেস ট্রেড ইন এশিয়া এন্ড দি প্যাসিফিক-এ বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ (আজ ২৯ আগষ্ট, ২০১৭ তারিখে) আনুষ্ঠানিকভাবে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। বাংলাদেশ এ চুক্তিতে প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ। এছাড়া চীন ও কম্বোডিয়া এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে । পরে তোফায়েল আহমেদ কম্বোডিয়ার বাণিজ্য মন্ত্রীর সাথে একান্ত বৈঠক করেন। থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনিম বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
এসকাপ-এর আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এন্ড এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি ড. শামসাদ আক্তার এর সভাপতিত্বে ডায়ালগে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন থাইল্যান্ডের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার কিয়েটচাই সোফাসটিনফং(করধঃপযধর ঝড়ঢ়যধংঃরবহঢ়যড়হম), কম্বোডিয়ার কমার্স মিনিস্টার পান সোরাসাক(চধহ ঝড়ৎধংধশ) এবং থাইল্যান্ডে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত।
বাণিজ্যমন্ত্রী  ৩০ আগষ্ট, ২০১৭ তারিখ বাণিজ্যমন্ত্রী শ্রীলংকা যাবেন। সেখানে শ্রীলংকার ইন্টারন্যাশনাপল ট্রেড এবং বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রীর সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং এফটিএ সম্পাদন বিষয়ে মতবিনিময় করবেন। এর পর তিনি ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে ৩১ আগষ্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর কল¤ো^ায় অনুষ্ঠিতব্য ’সেকেন্ড ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স-২০১৭’-এ যোগদান করে ১ সেপ্টেম্বর মিনিস্টার প্যানেলে বক্তৃতা করবেন। এতে ২৯ টি দেশের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন। এ কনফারেন্সের প্রতিপাদ্য বিষয় হলে“ পিস, প্রোগ্রেস এন্ড প্রোসপারিটি”। কনফারেন্সে বাণিজ্যমন্ত্রী  ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলের দেশসমুহের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও নীতিনির্ধারকদের সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত  বিষয়ে আলোচনা করবেন। এতে করে বাংলাদেশের সাথে দেশগুলোর বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Advertisement
Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here