ফ্লোরিডা বিএনপি খালেদা-তারেকের বিরোধিতাকারী জেনারেল মঈনের পাশের চেয়ারে চাকলাদার-আশরাফ

0
713

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্য বিএনপি নিয়ে আবারও ষড়যন্ত্র শুরু করেছে পুরনো সেই চক্রটি। মোহাম্মদ এমরানুল হক চাকলাদার ও আরিফ আহমদ আশরাফের নেতৃত্বাধীন সেই চক্রটি এখন আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে বিএনপির ফ্লোরিডা কমিটির নেতৃত্বে আসার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
ফ্লোরিডা বিএনপির একাধিক সূত্র অভিযোগ তুলেছেন, এই চক্রটি নিজেদের বিএনপি নেতা-কর্মী দাবি করলেও তারা সবসময় আওয়ামী লীগের সাথেই আঁতাত করে চলে। এমনকি ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সেই আলোচিত মঈন ইউ. আহমদের সাথেও এই চক্রটি সখ্যতা গড়ে তুলেছে। অথচ ওই মঈন ইউ. আহমদই বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ করতে ফর্মূলা দিয়েছিলেন। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করে বিএনপিকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করেছিলেন। ওই সময়ের ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিন সরকারের রোষানলের শিকার হয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা গণহারে নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
ফ্লোরিডা রাজ্য বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, সম্প্রতি বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ফ্লোরিডা আয়োজিত ফোবানা কনভেনশনে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে এই চক্রটির কুশীলবদের একান্ত ভাবে দেখা গেছে।
তাদের মতে, ওই কনভেনশনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও বিশেষ অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন ইউ. আহমদ। আর ফ্লোরিডা রাজ্য বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরিফ আহমদ আশরাফ ও সহ-সভাপতি মোহাম্মদ এমরানুল হক চাকলাদার সেই সম্মেলনে মঈন ইউ. আহমদের দুই পাশে বসেছিলেন।
সূত্র মতে, ফোবানা কনভেনশনের নৈশ্যভোজে প্রধান অতিথির সারিতে ডানপাশের একটি চেয়ারের পরই বসেন সাবেক সেনাপ্রধান মঈন ইউ. আহমেদ। মন্ত্রীর সামনে বিপরিত সারিতে সোজাসুজি বসেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম. জিয়াউদ্দিন। একই সারিতে রাষ্ট্রদূতের বামে কয়েকটি চেয়ার পরেই এবং মঈন ইউ. আহমেদের মুখোমুখি বসেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম চৌধুরী।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এই আরিফ আহমদ আশরাফ ও মোহাম্মদ এমরানুল হক চাকলাদারই আওয়ামী লীগের মন্ত্রী জাতীয় পার্টি নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও সাবেক সেনাপ্রধান মঈন ইউ. আহমদকে ফোবানা কনভেনশনে আমন্ত্রণ জানানোর প্রক্রিয়ায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এই দুই নেতা নিজেদের বিএনপি নেতা দাবি করলেও বিগত দেড়বছরে দলের কোন কর্মসূচিতে তাদের দেখা যায়নি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্ক সফরকালে বিএনপির প্রতিরোধ কর্মসূচিতেও তারা অংশ নেননি। অথচ, এই দুই ব্যক্তি আবারও ফ্লোরিডা বিএনপির নেতৃত্বে আসার জন্য দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। যদিও বিগত ৮ বছর ধরে তাদের প্রকাশ্য কোন কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায়নি। বরং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরোধিতাকারি সেই আলোচিত-সমালোচিত মঈন ইউ. আহমদের কর্মসূচিতেই প্রকাশ্যে এসেছেন। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এরা বিএনপি নেতা পরিচয়ে বিএনপির বিরুদ্ধেই গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছেন।
ফ্লোরিডা বিএনপি সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বিএনপি নেতা-কর্মীদের সাথে তাদের কোন ধরণের যোগাযোগ না থাকায় আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে বিএনপির আগামি কমিটিতে আসার অপচেষ্টা শুরু করেছেন।
ফ্লোরিডা কনভেনশনে উপস্থিত একাধিক বাংলাদেশি জানান, ওই কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও সাবেক সেনাপ্রধান মঈন ইউ. আহমদের সাথে একান্ত বৈঠক করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মোহাম্মদ চাকলাদার ও আরিফ আহমদ আশরাফ ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় আইনে অপরাধী হিসেবে সনাক্ত হয়েছেন এবং সাজাও ভোগ করেছেন। এদের মধ্যে আরিফ আহমদ আশরাফ তার নানা অপকর্মের জন্য ‘ডলার আলী’ ও ‘হুন্ডি আশরাফ’ হিসেবে কুখ্যাতি পেয়েছেন। এদের সাথে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্লোরিডা আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে দহরম মহরম সম্পর্ক। এদের ঘরেই প্রতিদিন রাতে আওয়ামী লীগ নেতাদের আড্ডা বসে।
একাধিক সূত্র মতে, মোহাম্মদ চাকলাদার ও আরিফ আশরাফ চক্রের হাত থেকে বিএনপিকে রক্ষা করতে ত্যাগী বিএনপি নেতা-কর্মীরা নানা কর্মসূচি নিয়ে নাঠে নামছেন। তারা কর্মসূচি নিয়েও ইতিমধ্যে আলোচনা করেছেন।
কে এই আশরাফ ও চাকলাদার ঃ
আরিফ আহমদ আশরাফ ও মোহাম্মদ চাকলাদার, এই দুই প্রবাসী বর্তমানে ফোরিডা শহরের বাইরে বসবাস করছেন। এদের মধ্যে চাকলাদার হোম স্টেটে ও আশরাফ ফোর্থ মায়ার্সে বসবাস করেন। ফ্লোরিডায় অবস্থান না করেও তারা ফ্লোরিডা বিএনপির কমিটি গ্রাস করার অপচেষ্টা করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্লোরিডার একাধিক সূত্র মতে, আরিফ আহমদ আশরাফের ভাই মুজিবুর রহমান বর্তমানে ফ্লোরিডা স্টেট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সেই সূত্র ধরে আরিফ আহমদ আশরাফের সাথে আওয়ামী লীগের রয়েছে দহরম মহরম সম্পর্ক। এই হৃদ্যতার সম্পর্কের কারণেই আরিফ আহমদ আশরাফের বাড়িতে প্রায় প্রতিরাতেই আওয়ামী লীগ নেতাদের আসর বসে।
অনেকেই মনে করছেন, আওয়ামী লীগের সাথে চক্রান্ত করেই ফ্লোরিডা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য তদবির শুরু করেছেন এই আরিফ আহমদ আশরাফ ওরফে ডলার আলী ওরফে হুন্ডি আশরাফ।
কে এই ‘ডলার আলী’ ও ‘হুন্ডি আশরাফ’ ঃ
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বস্থ সূত্রগুলোর দেয়া তথ্য মতে, এই আরিফ আহমদ আশরাফ ছিলেন চট্টগ্রামের আলোচিত সোনা চোরাচালানি ‘সোনা রফিক’র সহযোগী। তিনি সোনা রফিকের চোরাচালান ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন। পরে সোনা রফিকের একটি বড় চালান বিক্রি করে দিয়ে এই আশরাফ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমান।
সূত্র গুলো জানান, ক্যালিফোর্নিয়ায় গিয়েই আশরাফ ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি ‘ডলার আলী’ নামে কুখ্যাতি পান। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার একটি হত্যা মামলায় জেলও খেটেছেন। পরে নিজের নাম পাল্টে ফ্লোরিডায় বসবাস শুরু করেন। এখানে আসার পর এক প্রবাসী বাংলাদেশির স্ত্রী, এক সন্তানের জননীকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। ওই সূত্রগুলো মতে, আশরাফ ফ্লোরিডায় বসে।

Advertisement
Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here