বিশেষ প্রতিবেদক,বরগুনাঃ বরগুনার এক সময়ের চিহ্নিত ডাকাত কালা রশিদ মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন না করেই দীর্ঘদিন মুক্তিযোদ্ধা জেলা কমান্ডারের চেয়ার দখল করে ছিলেন। বরগুনা জেলার ৮নং হেউলিবুনিয়া গ্রামের গমজদ্দিন হাওলাদারের পুত্র আঃ রশিদ। ১৯৭০ সালে সে এসএসসি পাস করে। হাই স্কুলে পড়াশোনা করাকালীন সময় থেকেই সে ডাকাত দলের সাথে যুক্ত হয়ে ডাকাতি করা শুরু করে। ১৯৭০ সালে এসএসসি পাস করার পর বরগুনা কলেজে ভর্তি হয়। পড়াশোনা ছিল তার ঢাল-স্বরূপ। ডাকাতি করা তার হয়ে উঠে একমাত্র নেশা ও পেশা। ঐ সময়ে বরগুনা থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতি মামলা রুজু হয়। মামলায় সে বহুবার গ্রেফতার হয়। থানায় নিয়ে গাছের সাথে টানিয়ে তাকে পুলিশ প্রায়ই মারধর করতো। ঐ সময়ে থেকেই সে এলাকায় ডাকাত কালা রৈশ্যা নামে কুখ্যাতি লাভ করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বরগুনার বাবুগঞ্জ বাজারে ডাকাতি করার সময় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে। বুকাবুনিয়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের কমান্ডার আলতাফ মিয়া তাকে গাছের সাথে টাঙ্গিয়ে পিটানো এবং এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। মার খেয়ে কালা রৈশ্যা সুন্দরবন চলে যায়। এদিকে ১নং বদরখালী ইউনিয়নের পাতাকাটা গ্রামের ছাবের আকনের পুত্র মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকতকে পাক-বাহিনী ধরার জন্য বাড়িতে হানা এবং তাকে বাড়িতে না পেয়ে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য রাজাকারদের নির্দেশ দিয়েছিল। প্রাণের ভয়ে লিয়াকত ১৩ হাজার ৫শ টাকা নিয়ে গৌরিচন্না বাজারের জনৈক আঃ রাজ্জাক মাঝির নৌকায় ১৮ জনের একটি দলের সাথে ভারতের উদ্দেশে সুন্দরবন গিয়ে পৌছে। সেখানে গিয়ে ডাকাত কালা রৈশ্যার সাথে তার সাক্ষাত হয়। কালা রৈশ্যা তাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে ১৩ হাজার ৫শ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় মাঝি আঃ রাজ্জাকও সেখানে উপস্থিত ছিল। অতঃপর তারা সবাই পৃথক পৃথকভাবে ভারত চলে যায়। কথায় আছে ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও বারা ভানে। ডাকাত কালা রৈশ্যা ভারত গিয়েও দল গঠন করে ডাকাতি শুরু করে। এভাবে কিছু দিন চলার পর ভারতীয় পুলিশ তাকে ধরার জন্য শরণার্থী ক্যাম্পে ক্যাম্পে রৈশ্যাকে খুঁজতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে ভারত থেকে সে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে নিজ এলাকায় পুনরায় ডাকাতি শুরু করে। বরগুনার বালিয়াতলী পাড়ার থান চা অং, লামিউ মাস্টার, অংসা চাংক , থ¤্রাউ সেইফা অং, রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান থানচা অং, লামিও মাস্টার, মংথান মাস্টার, তালতলীপাড়ার চাউ, মুনজা অং, লাফ্রু চান মাস্টার, চা অং, মনজু মাস্টার, আগাঠাকুরপাড়ার নুরুল ইসলাম ডাক্তার, পিতাঃ করিম পাহলান, বরগুনার বাবুগঞ্জ বাজার, শিয়ালিয়া গ্রামের গাজী বাড়ি, পদ্মা খালের গোড়ায় মাখম বিশ্বাসের বাড়িতে ডাকাতি করে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কুখ্যাত ডাকাত কালা রৈশ্যা তার আত্মীয়-স্বজনসহ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্ত হয়! বর্তমানে সে বরগুনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নির্বাচিত হয়েছি। ইতিপূর্বেও সে আরেক বার জেলা কমান্ডার ছিল। জেলা কমান্ডার হওয়ার সুবাদে নতুন নতুন মুক্তিযোদ্ধা তৈরী করে অর্থাৎ অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত করে দিয়ে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারী ভাতা পাইয়ে দিতে, বকেয়া বিল পাইয়ে দিতে, সরকারী চাকরি পাইয়ে দিতে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণ করে আজ সে কোটিপতি। জেলা কমান্ডারের প্রভাব খাটিয়ে তালতলী উপজেলার শান্তি কমিটির সদস্য কালু হাওলাদারের পুত্র মোসলেমকে তালতলী উপজেলা কমান্ডার বানিয়ে দেয়। শ্যালক মোসলেমও ভগ্নিপতির আশির্বাদে আজ লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের কোটায় তার সব সন্তানদের সরকারী চাকরী হয়েছে।
বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এই লক্ষ্যে প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে। বরগুনা জেলা কমান্ডার আঃ রশিদ ওরফে কালা রৈশ্যা জেলা এবং প্রত্যেকটি উপজেলার যাছাই-বাছাই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছি। সরকারের আশির্বাদে এই যাছাই-বাছাই কাজে সে নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা তৈরী এবং তালিকাভুক্ত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে বাতিল করার কারসাজিতে লক্ষ লক্ষ টাকা বাণিজ্য করার সুযোগ হাতে পেয়েছে। তার এই অনৈতিক কারসাজি এবং দুর্ব্যবহারের শিকার বেশ কিছু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আতংকের মধ্যে থেকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।