বহুরূপী রাশেদের গোমর ফাঁসে সাংবাদিক মহলে তোলপাড়

0
437

বিশেষ সংবাদদাতা ঃ
ভেল্কিবাজিকেও হার মানিয়েছেন বহুরূপী রাশেদুল হক। তার গোমর ফাঁস হওয়ায় সাংবাদিক মহলে তাকে নিয়ে চলছে তোলপাড়। আওয়ামীলীগার পরিচয়ে মাদ্রাসার পূর্ণকালীন শিক্ষক হিসেবে সরকারী পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিচ্ছেন। অন্যদিকে সরকার বিরোধী পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। আওয়ামীলীগ বিরোধী  হিসেবেও তিনি পরিচিত বিএনপি- জামায়াত নেতা-কর্মীদের কাছে । কিভাবে দাপটের সঙ্গে উভয় কূল ম্যানেজ করে চলছেন, তা নিয়ে ধান্ধায় আছে তার সহকর্মী ও ঘনিষ্ঠরা।
গত ১৪ আগস্ট ২০১৭ সাপ্তাহিক অপরাধ চিত্র পত্রিকায় “একই অঙ্গে কত রূপ ত্যাগী আওয়ামীলীগার দিনকাল বার্তা সম্পাদক!” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহল থেকে নানা প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। আওয়ামীপন্থী সাংবাদিকরা এ ঘটনাকে চাঞ্চল্যকর ও উদ্বেজনক উল্লেখ করে বলেছেন, রাশেদুল হক শুধু সাংবাদিক হিসেবে নয়- ব্যক্তিগতভাবেও বিএনপির ঘোর সমর্থক হিসেবে পরিচিত। সাংবাদিকদের সংগঠনেও তার পরিচিতি বিএনপিপন্থী হিসেবে। তাছাড়া রাজনৈতিক কানেকশনেই তিনি দলীয় মুখপত্র ‘দৈনিক দিনকালে’ বার্তা সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। তিনি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করেই কিভাবে একটি মাদ্রাসার পূর্ণকালীন শিক্ষক হিসেবে সরকারী সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তারা এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে বলেছেন, এতে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসার মতো সরকারের ভেতর থাকা আরো অনেক বিভীষণের সন্ধান মিলতে পারে।
অন্যদিকে বিএনপিপন্থী সাংবাদিকরাও রাশেদুলের কারিশমা নিয়ে বিস্মিত। বর্তমান সরকারের আমলেও একজন ঘোর বিএনপি সমর্থক কিভাবে আওয়ামী লীগার সেজে একের পর এক সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছেন, তার হিসেব মিলাতে পারছেন না তারা। রাশেদুলের বিরুদ্ধে আরো চমকপ্রদ তথ্য মিলেছে। জানা গেছে, বিএনপিমনা এই সাংবাদিক ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ‘মসজিদুল আকবার ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক’ হিসেবে মিরপুরের মণিপুর উচ্চ বিদ্যালয় বালিকা শাখা কেন্দ্রে এ দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম)  থেকে তিনি সম্প্রতি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সম্প্রতি।
নব্য আওয়ামী লীগার রাশেদুল হক দীর্ঘদিন ধরে শাহআলী থানাধীন মসজিদুল আকবার ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি চার দলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০১ সালের ২৫ অক্টোবর এ নিয়োগ লাভ করে সরকারী সুবিধাসহ বেতনভাতা নিচ্ছেন। তার এমপিও ইনডেক্স নম্বর ৬৪৪২৬৬। পাশাপাশি ক্ষমতাসীনদের বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত দৈনিক দিনকাল এর ভারপ্রাপ্ত বার্তা সম্পাদক পদে থেকেও পাচ্ছেন পূর্ণ বেতন-ভাতা। তিনি সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠনের সাথেও জড়িত। এছাড়া তিনি নিজেকে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর পিএস পরিচয় দেন সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক মহলে। শিগগিরই তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি নিযুক্ত হচ্ছেন বলেও তার ঘনিষ্ঠরা প্রচারণা চালাচ্ছেন।
জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে রাশেদুল হক ওই মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক (কৃষি) হিসেবে চাকুরি লাভ করেন। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেই দ্রুত এমপিওভুক্ত ছাড়াও ক্ষমতার বিস্তার ঘটান। মাদ্রাসায় দিনের পর দিন অনুপস্থিত থেকেও মাস শেষে নিয়মিত বেতন উত্তোলন করছেন। কর্তব্য কাজে ফাঁকির বিরুদ্ধে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দূরের কথা, কেউ কোনো কথা বলারও সাহস পায়নি। কারণ একদিকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাধর, অন্যদিকে জাঁদরেল (!) সাংবাদিক। তিনি তুচ্ছ ঘটনায়ও পত্রিকায় রিপোর্ট করার হুমকি দেন। সাংবাদিকতার সুবাদে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদ্রাসা বোর্ড কিংবা মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তার সঙ্গেই রয়েছে তার বিশেষ সম্পর্ক। তাছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার বাড়ি কাপাসিয়ায় হওয়ায় তার পোয়াবারো। এ সম্পর্ক এবং নিজের পরিচিতিকে পুঁজি করেই মাদ্রাসার অন্যান্য শিক্ষক এবং পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তাদের দাবড়িয়ে বেড়ান। চারদলীয় জোট সরকারের পতন হলেও রাশেদুলের অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। বরং বোল পাল্টে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং আওয়ামী পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে সুবিধা বাগিয়ে নিচ্ছেন।

Advertisement
Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here