প্রতিবেদকঃ
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘বিচার বিভাগকে বিক্ষুব্ধ করবেন না। বিচার বিভাগীয় যত কর্মকর্তা ডেপুটেশনে (প্রেষণে) দিয়েছি, যদি তাদের প্রত্যাহার করি, তাহলে কারো কিছু করার থাকবে না।’ বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ সংক্রান্ত মাসদার হোসেন মামলায় আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেষণে থাকা বিচারকদের উদ্দেশ্যে সোমবার প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশের জন্য আবারও দুই সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন করেন। এ নিয়ে গত পাঁচ মাসে ১০ বার সময় চাইল রাষ্ট্রপক্ষ। সবশেষ গত ১৫ মে গেজেট প্রকাশের জন্য রাষ্ট্রপক্ষকে দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবারও শুনানির পর রাষ্ট্রপক্ষকে দুই সপ্তাহরে মধ্যে ফের গেজেট প্রকাশের জন্য সময় দেওয়া হয়েছে। সোমবার রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে একটি আবেদন উপস্থাপন করলে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কী ?’ জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সময়।’ তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কারণটা কী ?’ জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘প্রসেস চলছে।’ এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা হাসব না কাঁদব? হাসার জন্য তো মনে একটা কষ্ট হয়। যাই হোক, আমি কিছু বলছি না। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হয়ে গেছে। কিছু ত্রুটি রয়ে গেছে। কিছু অনিয়ম আছে। এগুলো নিয়ে সারা জীবন নয়। আমরা চাচ্ছি, একটা সিস্টেমে চলে আসতে। প্রধান বিচারপতি অনিয়ম থেকে নিয়মে আসতে গেলে বলে গেল গেল।’ প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘পত্রিকায় বলা হয়, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সরকারের দন্ড। আপনার মিনিস্ট্রিকে (আইন মন্ত্রণালয়) বলবেন, জেনারেল ক্লজ অ্যাক্টের ২১ পড়তে। সরকারকে বলবেন, যেসব বিচারক প্রেষণে আছে, তারা সরকারি কর্মচারী নয়। সুপ্রিম কোর্ট জানতে চেয়েছিল, প্রেষণে থাকাদের মধ্যে কারা বিদেশে যায়, তাদের নাম।’
প্রেক্ষাপট:
মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করা সংক্রান্ত মাসদার হোসেন বনাম সরকার মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থী ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কাযক্রম শুরু হয়। তবে আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে অধস্তন আদালতের জন্য পৃথক শৃঙ্খলা ও আচারণ বিধিমালা এখনো প্রনীত হয়নি। আর এ নিয়েই সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে টানাপড়েন চলছে।