বিনিয়োগ বাড়ছে সরকার-বেসরকারী খাতে

0
1316
  • ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সম্প্রসারণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

এম শাহজাহান ॥ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এবার সরকারী-বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। এজন্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সম্প্রসারণে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে সরকার। এসব খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তিসহ অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দেয়া হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ মনে করে, রূপকল্প-২১ বাস্তবায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর হতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আবার সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন বেসরকারী খাতে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সম্প্রসারণে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে হবে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা দলিল চূড়ান্ত করতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি মতামত উপস্থাপন করা হচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানা গেছে, ছয়টি বিষয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ গঠন, বিদ্যুত, জ্বালানি ও যোগাযোগ খাতে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা দূরীকরণ, কৃষিভিত্তিক শিল্পসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ, আইসিটি-স্বাস্থ্য-শিক্ষা সংক্রান্ত সেবা রফতানিতে সুনির্দিষ্ট নীতিকৌশল প্রণয়ন, সরকারী-বেসরকারী বিনিয়োগে গতিশীলতা আনয়ন এবং রফতানির গতিশীলতা আনতে পণ্যের বৈচিত্রায়ণ।
এছাড়া সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘাটতিসমূহ এবং ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা কার্যকর করা হবে। শুধু তাই নয়, আগামী পাঁচ বছরে (২০১৬-২০) মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৮ শতাংশ। এর আগে ২০১৮ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১৯ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ এবং পরিকল্পনার শেষ অর্থবছর ২০২০ সালে তা ৮ শতাংশে উন্নীত করা হবে। এছাড়া বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এক কোটি ৩২ লাখ কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে অতিদারিদ্র্য দূরীকরণের বাস্তবসম্মত উপায় গ্রহণ, দীর্ঘ ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের ওপর জোর দেয়া, দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি কৃষিতে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন শস্য বহুমুখীকরণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সঞ্চয়, বিনিয়োগ, সরকারী আয় ও ব্যয়, ঘাটতি অর্থায়ন, বৈদেশিক সহায়তা, সরকারী-বেসরকারী খাতের ভূমিকা, প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো ও সংস্কারের ধরন বিষয়েও নতুন পরিকল্পনা দলিলে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস জনকণ্ঠকে বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে। সরকারী খাতের পাশাপাশি বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ উৎসাহিত করা প্রয়োজন। কিন্তু দেশে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়ছে না। তবে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (এসএমই) খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। এজন্য এসএমই খাত যাতে সহজ শর্তে ও স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণ পায় সেই উদ্যোগ গ্রহণ করবে সরকার। তিনি বলেন, বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলোতে পর্যাপ্ত অলস মানি রয়েছে। এগুলো এখন বিনিয়োগে নিয়ে আসতে হবে। আর এজন্য অবকাঠামো উন্নয়ন বিশেষ করে গ্যাস ও বিদ্যুত খাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে শীঘ্রই একটি মতামত উপস্থাপন করা হবে। এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক করতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়িত করা। রূপকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে চায় বর্তমান সরকার। একই সঙ্গে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কর্মক্ষম সব বেকার ও প্রচ্ছন্ন বেকারদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া বর্তমান সরকারের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হচ্ছে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বের প্রথমসারির উন্নত দেশগুলোর কাতারে নিয়ে যাওয়া। এ লক্ষ্যে সামাজিক খাতের সাফল্য ধরে রাখতে গণমুখী কর্মকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে সবার আগে প্রয়োজন বিনিয়োগ।
ইতোমধ্যে অর্থ বিভাগের প্রকাশিত সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৭-১৮-তে বিনিয়োগ বৃদ্ধির এই কর্মপরিকল্পনা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বিনিয়োগনির্ভর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিকীতে আরও কয়েকটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এগুলোর সমন্বয়ে একটি কর্মপরিল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যা বাস্তবায়ন করতে পারলে ২০২১ সালের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দুই অঙ্কে পৌঁছানো সম্ভব হবে। অগ্রাধিকার এ বিষয়গুলো হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, মুদ্রা বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত, কর আধুনিকায়ন পরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের মূল্য নির্ধারণ কৌশল প্রণয়ন, বাজেটের ভর্তুকি যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা, সারাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগ (পিপিপি) ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে বিনিয়োগ বাড়ানো, দেশের মানব সম্পদের উন্নয়ন ও এর সদ্ব্যবহার, তৈরি পোশাক ছাড়া অন্যান্য পণ্যের রফতানি বাড়ানো ও প্রণোদনা কাঠামো প্রণয়ন, এ ক্ষেত্রে নতুন নতুন রফতানির বাজার সৃষ্টি করা, তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্য-শিক্ষাকেন্দ্রিক সেবা রফতানি ক্ষেত্র অনুসন্ধান, চাল ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য রফতানি এবং কৃষকদের মূল্য সহায়তা প্রদান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ এসব খাতে বৈচিত্র্য আনা, গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে সঠিক কর্মকৌশল নির্ধারণ করা। ইতোমধ্যে এসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

Advertisement
Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here