ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে শুনানিতে প্রধান বিচারপতি আমরা বিচারকরা তো ইলিশের গন্ধ পাই না

0
421

 নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় স্থগিতের মেয়াদ আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়িয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চ গতকাল এ আদেশ দেন। গতকাল শুনানির একপর্যায়ে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের কথার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা বিচারকরা তো ইলিশের গন্ধ পাই না। ’ এর আগে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে বলেন, ‘আমার বাড়ি পদ্মার পারে। এখনো দেখি কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ করা হচ্ছে। অথচ এই কারেন্ট জাল বন্ধ হওয়ার কারণে দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। ’ শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রসঙ্গে বলেন, ‘মোবাইল কোর্ট আইন সিআরপিসির (ফৌজদারি কার্যবিধি) কয়েকটি ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমরা আপনাকে এর একটি তালিকা দেব। ’  এর আগে দেশের সর্বোচ্চ আদালত গত ২১ মে এক আদেশে ২ জুলাই পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছিলেন। পরে আরো কয়েক দফা এ স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গতকাল পর্যন্ত এ মেয়াদ ছিল।

Advertisement

এ অবস্থায় গতকাল সকালে অ্যাটর্নি জেনারেল হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত মূলতবি রাখার আবেদন জানান। তিনি বলেন, প্রস্তুতির জন্য এ সময় দরকার। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি আপনাকে একটা তালিকা দেব। মোবাইল কোর্টের কয়েকটি ধারা সিআরপিসির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এগুলো ঠিক হওয়া উচিত। আমরা আইনের অধীনেই বিচার করব। আইনের বাইরে যাব না। ’অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, মোবাইল কোর্ট তো বেশ কিছু ভালো কাজ করেছে। কারেন্ট জালের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের কাজ প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু এখনো কারেন্ট জাল বন্ধ হয়নি।   এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা তো কারেন্ট জাল বন্ধ করে আদেশ দিয়েছি। ’জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমার বাড়ি পদ্মার পারে। এখনো কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। আদালতের আদেশের পর কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ হয়েছিল। জাটকা ধরা বন্ধ হওয়ার কারণে দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। ’প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি তত্পর না হয় তাহলে আমাদের কী করার আছে?’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বিচারকরা তো ইলিশের গন্ধ পাই না। ’এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ‘আমি শুনলাম, আপনি জাতীয় সংসদ নির্বাচন করছেন। আপনি তো এলাকায় যান। আপনি তো আপস করে চলছেন। মনে রাখবেন, যত তাড়াতাড়ি এটা (মোবাইল কোর্ট নিয়ে শুনানি) করবেন ততই সরকারের লাভ। ’তিন সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ : খাদ্য সহায়ক (ফুড সাপ্লিমেন্ট) হিসেবে মালয়েশিয়া থেকে দেশান (বাংলাদেশ) প্রাইভেট লিমিটেডের আমদানি করা সাত লাখ ৩৩ হাজার ৯৮০ পিস স্পিরুলিনা ট্যাবলেট ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জব্দ করেন ওষুধ প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। পাশাপাশি ওই কম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল বিন ইলিয়াসকে দুই লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। হাইকোর্ট ওই বছরের ১৮ মে এক আদেশে জব্দ করা ট্যাবলেট ছাড় দেওয়ার নির্দেশ দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত ওই বছরের ২৭ জুন হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। পরবর্তী সময়ে নিয়মিত আপিল আবেদন দাখিল করা হয়। এরপর রিটকারী এ আদেশ স্থগিত করতে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আবেদন করেন। এ আবেদনে গতকাল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ স্পিরুলিনা ট্যাবলেট খাদ্য সহায়ক নাকি ওষুধ, এর মধ্যে অ্যালকোহল আছে কি না তা পরীক্ষার জন্য তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে ওষুধ প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক, ফার্মোকোলজি বিভাগের একজন অধ্যাপক ও একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞকে রাখতে বলা হয়েছে। এ কমিটিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে অধ্যাদেশ জারি করে। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর জাতীয় সংসদে পাস করে তা আইনে পরিণত করে। এ আইন চ্যালেঞ্জ করে তিনটি রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট গত ১১ মে রায় দেন। রায়ে আইনের ৫, ৬(১), ৬(২), ৬(৪), ৭, ৮(১),  ৯, ১০, ১১, ১৩ ও ১৫ নম্বর ধারা অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। এর বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের ওপর শুনানির জন্য রয়েছে।

 

Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here