ফের ঝুলে গেল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান এবং তার স্ত্রী হাসিনা সুলতানার বিরুদ্ধে করা অবৈধ সম্পদ অর্জন মামলার বিচার কাজ। ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতে মান্নান খান দম্পতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় চার্জ (অভিযোগ) গঠনসংক্রান্ত শুনানি শেষে তৎকালীন বিচারক আবু আহমেদ জমাদার আদেশের দিনও ধার্য করেছিলেন। কিন্তু এরই মধ্যে তিনি অবসরে গেছেন। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত বিচারক দিয়ে আদালতের কার্যক্রম চলছে। নতুন বিচারক এসে পুনরায় চার্জ গঠনসংক্রান্ত শুনানি নিয়ে মামলার পরবর্তী কার্যক্রম চালাবেন। এতে করে ফের ঝুলে গেল মান্নান খান দম্পতির দুর্নীতির বিচার কাজ।
রোববার এ মামলায় চার্জ গঠনসংক্রান্ত আদেশের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু এদিন আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক চার্জ গঠনসংক্রান্ত শুনানি করেননি বলে জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম। তিনি বলেন, আদালত জানিয়েছেন- যেহেতু নতুন কোর্ট (বিচারক) আসছেন, সেহেতু নতুন কোর্টই (বিচারক) এ শুনানি নেবেন।
এদিন মান্নান খান দম্পতি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী অসুস্থ থাকায় এদিন সময় আবেদন করা হয়। আদালত তা মঞ্জুর করে চার্জ শুনানির জন্য আগামী ২৭ আগস্ট দিন ধার্য করেন। আদালত সূত্র জানায়, এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি ওই দুই মামলায় চার্জ গঠনসংক্রান্ত শুনানি হয়। ওই দিন তদন্ত কর্মকর্তার বড় গাফিলতিতে চার্জ গঠন সম্ভব হয়নি। আদালত ওই দিনই তদন্ত কর্মকর্তাকে দুই মামলায় জব্দ করা সব নথিপত্র আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন। ২ এপ্রিল ধার্য তারিখে নথিপত্র দাখিলে ব্যর্থ হন তদন্ত কর্মকর্তা। এরপর ২৮ মে প্রয়োজনীয় নথিপত্র দাখিল করা হলে তৎকালীন বিচারক চার্জ গঠনসংক্রান্ত আদেশের জন্য রোববার (১৬ জুলাই) ধার্য করেছিলেন। তবে এরই মধ্যে সেই বিচারক অবসরে চলে যাওয়ায় চার্জ গঠনসংক্রান্ত আদেশের পরিবর্তে মামলায় ফের চার্জ শুনানি হবে।
সূত্র আরও জানায়, ২০১৪ সালের ২১ আগস্ট মান্নান খানের বিরুদ্ধে ৭৫ লাখ ৪ হাজার টাকার আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। মামলা দায়েরের তিন দিনের মাথায় ২৪ আগস্ট মান্নান খান ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। অপরদিকে তার স্ত্রী হাসিনা সুলতানার বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৫৩ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৫৩ হাজার টাকার জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একই বছরের ২১ অক্টোবর মামলা করে দুদক। এর দু’দিনের মাথায় ২৩ অক্টোবর ঢাকার সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন হাসিনা সুলতানা। এরপর শুরু হয় মামলার তদন্ত। আর এ তদন্ত শেষ করতে দুদক প্রায় এক বছর সময় নেয়। তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট মান্নান খানের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুদক। চার্জশিটে মান্নান খানের অবৈধ সম্পদের পরিমাণ বেড়ে যায়। তাতে দেখা যায়, তার আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৬৬ লাখ ৭ হাজার টাকা এবং তিনি সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন ৩১ লাখ ৪৫ হাজার টাকার।
অন্যদিকে, তদন্ত শেষে হাসিনা সুলতানার বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৯ জুন আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জশিটে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৫৩ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৩৭ হাজার টাকার আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়