আতোয়ার রহমান মনির,লক্ষ্মীপুর ঃ
লক্ষ্মীপুর শহরসহ পুরো জেলাতে ঝুড়ে এখন মাদকের ছড়াছড়ি। জমজমাট হয়ে উঠেছে মাদক ব্যবসা। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে গাঁজা,ফেনসিডিল,হেরোইন, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক দ্রব্য। অবাধে মাদক বিক্রিসহ মাদক দ্রব্যের ব্যবহার দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। নেশায় জড়িয়ে শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীরাসহ
উঠতি বয়সী যুবকেরা নেশাগ্রস্থ হয়ে বিপদগামী হচ্ছেন।স্থানীয়দের পাশাপাশি কিছু শিক্ষার্থীসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িয়েছে এ ব্যবসায়। বাড়ছে জেলা ঝুড়ে মাদকসেবীর সংখ্যা। মাদক নিয়ন্ত্রনের ব্যাপারে প্রশাসনের ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ লক্ষ্মীপুরে। আর প্রশাসন বলছেন,তারা আগের চেয়ে সর্তক অবস্থায় মাদকের পক্ষে অবস্থানে না গিয়ে বিরুদ্ধে থেকে সেবক ও বিক্রেতাদের গ্রেফতার চালিয়ে যাচ্ছেন।
জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে,চলতি বছর ৭ সেপ্টেম্বর সকালে লক্ষ্মীপুর পৌর এলাকা থেকে ৭৬ লিটার সোলাইমদসহ মাদক ব্যবসায়ী পারভেজের বসত ঘরে থেকে পারভেজ (৪০), খোকন পাটোয়ারী (৪৫), আবদুস সহিদ (৫৫) ও মো. মফিজ (৪৫) জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ১৬ জুলাই বিকাল ৪ টার দিকে লক্ষ্মীপুরে চন্দ্রগঞ্জ এলাকা ৮২ পিস ইয়াবাসহ মো. আরিফ হোসেন (২২) নামে এক যুবককে আটক করেছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।একদিন এছাড়া চন্দ্রগঞ্জে ১শ ১০ পিছ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ কুমিল্লা কোতোয়ালী শাহপুর এলাকার জুয়েল এবং আবুলকে আটক করা হয়। এছাড়া রায়পুরে অভিযান চালিয়ে মদ তৈরির ৫টি কারখানায় মাটি খুঁড়ে ১০ হাজার লিটার ছোলাই মদ সহ দুই ব্যবসায়ীকে আটক এবং একই জেলার রামগঞ্জ শেখপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৫ মে ভোরে বিকেতা ইয়াবা ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসেন (৩৫) কে আটক করে পুলিশ।
মাদক সংক্রান্ত ঘটনায় জানুয়ারিতে মামলা হয়েছে ৩৯ টি,ফেব্রুয়ারিতে ৩৮টি,মার্চ মাসে ৫৬ টি,এপ্রিল মাসে ৪৪ টি,মে মাসে ৬২ টি,জুন মাসে ৫২ টি, জুলাইসহ আগস্ট মাসে ৮৮ টি সহ মাদকদ্রব্য আইনে মোট জেলায় ৩ শত ৭৯ টি মামলা হয় মাদকসহ বিক্রেতা ও সেবীদের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে,ব্যবসায়ীসহ শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি মাদক ব্যবসায়ী চক্র। এ চক্রের ব্যবসায়ী সদস্যরা মাদক চট্রগ্রাম,কক্সবাজার,ফেনী ও টেকনাফ থেকে গাঁজা, ইয়াবা ও ফেন্সিডেল এনে বিক্রি করেছে রায়পুর,রামগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুর পৌর শহরসহ চন্দ্রগঞ্জ মান্দারী ও জকসিন বাজার এলাকায়। প্রশাসনের চোখ ফাকি দিতে পুরুষের পরিবর্তে নারীদের কাজে লাগিয়ে হাত-বদল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন অনায়াসে। হাত বাড়ালেই গাঁজা,ফেনসিডিল,হেরোইন,ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক দ্রব্য পেয়ে জেলা শহর ছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকার অভিজাত পরিবারের সন্তানেরাও মাদকসেবীদের সাহচর্যে এসে মারাত্বকভাবে নেশার জগতে ঢুকে পড়ছে। নতুন করে মাদক সেবনে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও যোগ হয়েছে।
সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার নুরুল্যাপুর আঞ্জুমান আরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ইয়াবা সেবনের ভিডিওচিত্র ফেসবুকে ভাইরাল হলে শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আন্দোলনে নামেন। প্রধান শিক্ষকের অপসারণ ও মাদকমুক্ত শিক্ষাঙ্গনের দাবিতে মানববন্ধন করে সব শ্রেনির শিক্ষার্থীরা। অবশ্য এ ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সাইফ উদ্দিন জানান, তিনি বিদ্যালয়ে মাদক সেবন করেননি। তাকে সরাতে একটি মহল এ কাজ করছে।
কেউ কেউ বলছেন পারিবারিক অশান্তির কারণে হতাশায় ভোগে শেষ পর্যন্ত তাঁরা বিপদগামীর কথা বল্লেও স্কুল কলেজ ছাত্র তথা উঠতি বয়সী যুবকেরা এসকল মাদক গ্রহন করে আর্থিক ও শারীরিক ও মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আবার কেউ প্রেমে ব্যর্থ হয়ে মাদকে আসক্ত হচ্ছেন। ছাত্রদের পাশাপাশি মাদকের সেবনে জড়িয়ে পড়ছেন ছাত্রীরাও। মাদকের কবলে পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছেন অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী।
একাধিক সুত্রে জানা গেছে,মাদক গ্রহনের কারণে একাধিক ব্যক্তি চাকুরিচূত হয়েছে,পরিবার ভেঙ্গেছে।দিঘলী ইউনিয়নের ইউসুফ নামের এক স্কুল ছাত্র লেখাপড়া ছেড়েছে।মাদকের কারণে অনেকের পরিবারে নেমে এসেছে হতাশা ও অশান্তি। মাদকদ্রব্যের টাকা জোগারে চুরি-ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছেন অনেক।এজন্য বাড়ছে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনাও।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক রাজনৈতিক নেতা অভিযোগ করে বলেন,প্রশাসনের প্রতিটি বৈঠকে মাদক প্রতিরোধে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কথা বলা হলেও কাজে কিছুই হচ্ছে না। দিন দিন যেন মাদক বেড়েই চলছে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন এলাকায়। বলা যায় মাদকের স্বর্গরাজ্য এখন লক্ষ্মীপুরে সর্বত্র।
রায়পুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা দেওয়ান বলেন,সাংগঠনিকভাবে একতাবদ্ধ হয়ে মাদকসেবীদের প্রতিহত করা না হলে এই মরণ নেশায় এলাকার যুব সমাজ ধংস হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হতাশা গ্রস্থ অভিভাবকেরা জানান,মাদকাসক্ত অবাধ্য সন্তানদের বাগে আনতে বন্ধুবান্ধব ও পারিবারের পক্ষে নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু বহু চেষ্টার পরও তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন,সন্ধ্যার পর বিদ্যালয়ের সামনের খোলা অংশে স্থাপিত শহীদ মিনার এলাকায় মাদকসেবীদের আড্ডা বসে।ভয়ে কেউ কিছু বলার সাহস পায় না।বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহড়ী বাধা দিতে গিয়ে ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার হেনস্থার শিকার হয়েছে। হাতের নাগালে সহজেই মাদক পাওয়া যাওয়ায় দিনদিন মাদক সেবী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। কেউ নিজেকে অতিরিক্ত স্মার্ট দেখাতে আবার কেউবা বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে মাদকদ্রব্য সেবন করছে।
কয়েকজন মাদক বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়,ভারতীয় সীমান্তবর্তী হওয়ায় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য এ অঞ্চলে ঢুকছে। এখন ভারত থেকে ইয়াবা ও হেরোইন বেশি আসছে। অল্প দামে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন মরননেশা মাদক দ্রব্য। ফলে এ অঞ্চলে মাদক সেবনের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছেই।
মাদক সেবী শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন,বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় প্রথমে গাঁজা সেবন করি। আস্তে আস্তে নিয়মিত হয়ে পড়ি। এখন মাদক ছাড়া থাকতে পারি না।পত্যেক দিন মাদক সেবন করতে হয়। গাঁজা, ইয়াবা সেবন করেছেন বলে দাবি করে সে।
অতিরিক্ত পুলিশ অনির্বান চাকমা জানান,আইনশৃংখলা উন্নয়ন ও মাদক নিয়ন্ত্রনে লক্ষ্মীপুর পুলিশ প্রশাসন জন সচেতনতামুলক কর্মসুচি হাতে নিয়েছে। মাদকসহ গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। যার কারনে পুলিশের মাদকদ্রব্য বিরোধী এ অভিযান জেলার বিভিন্ন মহলে বেশ প্রসংশিত । এখন মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ অনেক তৎপর।
লক্ষ্মীপুরে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক,বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা নেশায় জড়িয়ে পড়ছেন শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীরা
Advertisement
Advertisement