মানিক লাল ঘোষঃ ঐতিহাসিকভাবেই বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাঙালি অধ্যূষিত অঞ্চলসমুহে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও উৎসবের আমেজে পাঁচ দিনব্যাপি সকল সম্প্রদায়ের মাঝে সম্প্রীতির পরিবেশ ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরো সুদৃঢ় করে এই শারদীয় দুর্গোৎসব।
দুর্গাপূজার প্রধান আবেদন দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন। অর্থাৎ সকল অশুভ শক্তির নির্মূল করার জন্যই মর্ত্যালোকে প্রতিবছর দুইবার আগমন ঘটে দেবী দূর্গার। চৈত্র মাসে বাসন্তী নামে পৃথিবীতে মা আসেন যা বাসন্তী পূজা নামে পরিচিত হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে।
রামচন্দ্রকে যুদ্ধে পরাজিত করার জন্য রাক্ষস রাজ রাবন কৌশল হিসেবে রামচন্দ্রের সহধর্মীনি সীতাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় লংকায়। সহধর্মীনিকে উদ্ধারের জন্য শরৎ কালে অকাল বোধনের মাধ্যমে মা দুর্গাকে আবাহণ করে রাজা রামচন্দ্র। তখন থেকেই শরতকালে এই শারদীয় পুজার প্রচলন । সনাতন ধর্মীরা মাতৃরুপে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন সকল দুঃখ দুর্দশা, অভাব, অনটন ও অন্যায় অবিচার, শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তি এবং পার্থিব সুখ ও সমৃদ্ধির আশায়।
ঐতিহাসিক তথ্য মতে, আজ থেকে প্রায় দুশো বছর আগে রাজশাহীর রাজা কংস নারায়ণ সর্বপ্রথম এই ভূ-খন্ডে শরৎ কালে দুর্গোৎসব শুরু করেছিলেন। অনেক ব্যয় বহুল হওয়ায় অতীতে এই পূজা রাজা ও জমিদাররাই আয়োজন করতো। মাসব্যাপি থাকতো এই উৎসবের আমেজ। কালের বিবর্তনে জমিদারি প্রথার বিলুপ্ত হওয়ায় সকলের অংশগ্রহণে দুর্গা পূজা আজ শারদীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে।
প্রতিবারের মত এবার ও শরতে শিশির ভেজা শিউলি- শেফালি ফুলের গন্ধ, কাঁশ ফুলের শুভ্রতা আকাশজুড়ে শরতের সাদা মেঘের ভেলা মা দুর্গার আগমনী বার্তার জানান দিলে ও উৎসবের আমেজে রয়েছে কিছুটা শঙ্কা ও মনবেদনা।
দূর্গতি নাশিনী দেবী দুর্গার পূজার প্রাক্কালে বাংলাদেশের প্রতিবেশি রাষ্ট্র মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর অমানসিক নির্যাতন ও নিপীড়ন সনাতন ধর্মীদেরও করেছে মর্মাহত। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সব সংগঠন রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
পূজা উদযাপন পরিষদ আনুষ্ঠানিক সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছে দুর্গাপূজার খরচ কমিয়ে তা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে সহায়তা দেয়ার। তাদের এই সিদ্ধান্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনার পথচলাকে আরো সুদৃঢ় করবে।
এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোন অশুভ শক্তি যেন এদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ফাঁটল ধরাতে না পরে সে লক্ষ্যে প্রতিটি পূজা মন্ডপে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ধর্ম যার যার উৎসব সবার এই চেতনায় বিশ্বাসী সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন সবার সহযোগিতায় উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। সব ধর্মের সহাবস্থানে সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ ।
এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবে তাদের প্রার্থনা মিয়ানমারের রোহিঙ্গাসহ নির্যাতিত সব মানুষের দুর্গতি নাশ করুক দুর্গতিনাশীনি দেবী দুর্গা। আর দমন করুক তাদের মানুষ হয়ে যারা পাশবিক নির্যাতন চালায় মানুষের উপর।
(মানিক লাল ঘোষ)
সহ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু- বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্যপরিষদ ও
বাংলাশে পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য।
সিনিয়র রিপোর্টার, মাইটিভি