সংসদীয় কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন পরীক্ষায় অনুপস্থিত প্রার্থীরাও নিয়োগ পেয়েছেন বন অধিদপ্তরে!

0
1402

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বন অধিদপ্তরে নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এসংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন উত্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনে বন অধিদপ্তরের ওই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ত্রুটিপূর্ণ, সন্দেহযুক্ত এবং নিয়ম বহির্ভূত বলে দাবি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বন অধিদপ্তরে বন প্রহরী/জুনিয়র ওয়াইল্ড লাইফ স্কাউট পদে নিয়োগ পরীক্ষার দিনে মো. আলতাফ (রোল-৯৬৬), জুলহাস বেপারী (রোল-৯৬৬), সজল বালা (রোল-৯৭৬), এহেছানুল হক (রোল-২৭৯০), মোহাম্মদ মহিউদ্দিন (রোল-৩০১৪), বিপুল চন্দ্র দাস (রোল-৪৪৬৬), নিলিমেষ বৈরাগী (রোল-৪৬২৬), খায়রুল ইসলাম (রোল-৬৭৬৮), আরিফুর রহমান (রোল-৬৯৮৭) ও মেহেদী হাসান (রোল-৯২৫৩) অনুপস্থিত ছিলেন । এরপরও তারা নিয়োগ পেয়েছেন। নির্ধারিত দিনের পরিবর্তে অন্যদিনে পরীক্ষা নিয়ে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কমিটির পক্ষ থেকে ওই নিয়োগ বাতিল করে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারির সুপারিশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারী নিয়োগ বিধিমালা যথাযথ ভাবে অনুসরণের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে আগেই অভিযোগ উত্থাপিত হয়। যার ভিত্তিতে সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে কমিটির বৈঠকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কেও ওই প্রতিবেদন পাঠানোর হয়েছে বলে তিনি জানান।

সংসদীয় কমিটি সূত্র জানায়, বন অধিদপ্তর ও বন গবেষণা ইনষ্টিটিউটে (৩য় ও ৪র্থ শ্রেনী) নিয়োগে অনিয়ম তদন্তে গত ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সংসদ সদস্য টিপু সুলতানকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্যের সাব কমিটি গঠন। ওই কমিটির এক মাসের মুধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও প্রায় চার মাস পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। প্রতিবেদনে নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আনসার ও ভিডিপি কোটায় সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত প্রার্থীদের নিয়োগ না দিয়ে কম নম্বর প্রাপ্তদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আবার লিখিত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্তদের মৌখিক পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়া হয়েছে। ফলে মেধাবীরা নিয়াগ পায়নি। নিয়োগে জেলা কোটা মানা হয়নি। আবেদনপত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও নানা অনিয়ম করা হয়েছে। তদন্তকাজে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অসহযোগিতা করেছেন বলেও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশ সম্পর্কে জানতে চাইলে সাব কমিটির আহ্বায়ক টিপু সুলতান বলেন, ওই নিয়োগের ক্ষেত্রে নানাধরণের অনিয়মের চিত্র পাওয়া গেছে। সাব কমিটি নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলা কোটাসহ অন্যান্য কোটা সুনির্দ্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারির সুপারিশ করেছে। এছাড়া পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে এবিষয়ে তদারকি বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে।এদিকে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সমগ্র বাংলাদেশে বন বিভাগের বেদখলকৃত ভূমি অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করে তা উদ্ধারের জন্য একটি সময়োপযোগী ও সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া কর্ণফুলি নদীর দূষণ রোধে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক একটি সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here