সক্রিয় ৩ শতাধিক দালাল, পদে পদে প্রতারিত রোগী রোগী ভাগিয়ে ৪০ ভাগ পর্যন্ত কমিশন গুনছে কর্মচারীদের সঙ্গে আঁতাত প্রশাসন নির্বিকার

0
1444

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্কঃ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ঘিরে তিন শতাধিক দালাল সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক নারী সদস্যও রয়েছে। এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা দালালদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ছেন। এরা রোগীদের কাছ থেকে নানান অজুহাতে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে। কোনো কোনো দালাল রোগীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও টাকা-পয়সা নিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে। এদের সঙ্গে বিভিন্ন ওয়ার্ড মাস্টার ও ওয়ার্ড সরদারদের গোপন আঁতাত রয়েছে। আবার কেউ কেউ হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আত্মীয়স্বজন। ফলে চোখের সামনে শত অপরাধ হলেও প্রশাসন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। ফলে কিছুতেই থামছে না দালালদের দৌরাত্ম্য। এরা দিন দিন আরও ভয়-ডরহীন হয়ে উঠছে। নানান কারণেই একজন রোগী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি গেটে আসার পর থেকে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হয়। আর এ সুযোগে দালালচক্র তাদের কাছে ভিড়ে। রোগীদের বিভিন্ন কাজ করে দেয়ার নামে এরা হাতিয়ে নেয় টাকা-পয়সা। প্রতারণার শিকার রোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মাঝেমধ্যে ব্যবস্থা নেয় দালালদের বিরুদ্ধে। দালালদের আটক করা হলেও আইনের ফাঁক গলে এরা ছাড়া পেয়ে যায়। ফের শুরু করে প্রতারণা। অনেক সময় প্রতারিত রোগী কিংবা তার আত্মীয়স্বজন দালালদের বিরুদ্ধে মামলা না দেয়ায় পুলিশ কঠোর ব্যবস্থাও নিতে পারে না। ঢামেক এলাকার শীর্ষ কয়েকজন দালাল হচ্ছে-ফরিদ, কালাম, নাসির, পারভেজ, জাফর, আজাদ, শহীদ, ইব্রাহিম, জসিম, হাবিবুর রহমান মামুন, শীলা, রীনা, শান্তা, নাসিমা, রওশন আরা, শারমিন, নাজমা, জেসমিন, সালমা, আরিফা, জোসনা, রহিমা, বেগম, লুৎফা, সুমন, মিজান, কাওসার, রফিক, হাবিব, হামিদুল, কিশোর, আয়নাল, রফিকুল, খায়রুল, মনির, কালা, শামসু, আবেদ প্রমুখ। এছাড়া টেস্টের জন্য রোগী ভাগিয়ে নিতে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রাইভেট হাসপাতালের অর্ধশতাধিক বহিরাগত দালালও ঢামেক এলাকায় ঘোরাফেরা করে। এদিকে ঢামেক হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মচারীও বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মার্কেটিংয়ের কাজে ব্যস্ত। তারা রোজ হাজিরা দেন হাসপাতালে। কিন্তু ঢামেকের নয়, কাজ করেন মনোনীত ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধি হয়ে। সবকিছুই ঘটছে প্রকাশ্যে, এতে দেখার যেন কেউ নেই। দালালরা হাসপাতালে দাপটের সঙ্গে রোগী ভাগানো, পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া, হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা বলে বিভিন্ন রোগীর কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়া, মোবাইল চুরিসহ নানান অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। এদের সঙ্গে বিভিন্ন ওয়ার্ড মাস্টার ও ওয়ার্ড সরদারদের গোপন আঁতাত রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দালালদের অধিকাংশই হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আত্মীয়স্বজন। এরা হাসপাতালের আশপাশ এলাকায় বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে অন্তত ১০টি ক্লিনিকে এরা রোগী পাঠাচ্ছে। প্রতিটি টেস্টে এরা ৩০ থেকে ৪০ পার্সেন্ট কমিশন পেয়ে থাকে। অনুপ্রবেশের অভিযোগ এনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মাঝেমধ্যে দালালদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়। আর পুলিশ এদের ডিএমপি অধ্যাদেশের ১০০/৭৮ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠায়। উক্ত ধারায় গ্রেফতার ব্যক্তিদের সর্বনিন্ম শাস্তি হচ্ছে ১ হাজার টাকা জরিমানা ও সর্বোচ্চ ৩ মাসের জেল। দুর্বল ধারায় চালান দেয়ায় এদের জামিন পেতে বেগ পেতে হয় না। জামিনে বেরিয়ে এসে ফের প্রতারণায় নামে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সম্প্রতি হাসপাতালে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য রোধে পরিচালকদের সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, রোগীর যথাযথ সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি হাসপাতালে দালালদের অনুপ্রবেশ রোধে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। কোনোভাবেই যেন তারা হাসপাতালে ভিড়তে না পারে। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বরাবরই বলে আসছেন, হাসপাতালে দালালদের তৎপরতা আগের চেয়ে কমে গেছে। দালাল প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে। অভিযোগ পেলে বহিরাগতদের আটক করে সঙ্গে সঙ্গে আমরা পুলিশে সোপর্দ করি।

Advertisement
Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here