‘নাড়িছেড়া ধন, বড় আদরের, বুকের মানিক, এক মূহূর্তের জন্য ভুলতে পারি না, ওর স্মৃতি তারা করে ফেরে। ঠিকমত খেতে পারি না, ঘুমাতে পানি না, সব সময় ওর মায়াভরা মুখটা চোখে ভাসে। সারাক্ষণ সানজুন মা ডাক শুনতে পাই, স্বপ্নে দেখি সানজুকে, জড়িয়ে ঘুমাই…’
অশ্রুশিক্ত নয়নে যুগান্তর প্রতিবেদককে কথাগুলো বলছিলেন দুই বছর আগে রাজধানীর পুরান ঢাকায় হোসনি দালালে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে বোমা হামলায় নিহত সাজ্জাদ হোসেন সানজুর (১৩) মা রাশিদা বেগম (৩৭)।
নাসিরের ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে সানজু সবার ছোট। কেরানীগঞ্জের চরাইল নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল সানজু।
এখনো ছেলের স্কুলের ব্যাগ, জুটা, বই, পড়ার টেবিল, পরনের শার্ট জড়িয়ে ধরে কান্না করেন রাশিদা।
ছেলের কথা জিজ্ঞাসা করতেই কান্নায় ভেঙে পড়ের সানজুন মা, চোখ মোছেন শাড়ির আঁচল দিয়ে।
কান্না জড়িত কণ্ঠে রাশিদা বেগম যুগান্তরকে বলেন, কি বলব মা, ছেলের কথা কিছুতেই ভুলতে পারি না। ছেলের স্মৃতি তাড়া করে ফেরে সারাক্ষণ। স্মৃতির তাড়নায় আগের বাসা পরিবর্তন করে এখন বাবু বাজারের বাসায় এলাম। তবু ভুলতে পারি না তাকে।
তিনি বলেন, আমরা ছেলেটাকে বোমা মেরে হত্যা করা হলো ২ বছর হয়ে গেল। কিন্তু দুনিয়ার আদালতে তার বিচার পেলাম না। আল্লারে বলি- ‘আল্লাহ এর বিচার করবে। আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া আর কোনো মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়’।
সানজুন স্মৃতিরচারণ করে রাশিদা বলেন, সানজু লাচ্ছা সেমাই খেতে পছন্দ করত। তাই ওর জন্য প্রতিদিনই লাচ্ছা সেমাই রান্না করতাম। ছেলে মারা যা্ওয়ার পর তিনি লাচ্ছা সেমাই আর রান্না করি না।
তিনি বলেন, ছেলে ক্রিকেট খেলা পছন্দ করত। খেলা থাকলে ওই দিন স্কুলে যেতে চেত না।
সানজু’র কথা বলতে গিয়ে কণ্ঠ ভারি হয়ে ওঠে তার বাবা মো. নাসিরের (৬০)। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ছেলের কথা সব সময় মনে পড়ে। আমার সঙ্গে ঘুরে বেড়াতো, বাজারে যেত। বাকরখানি খুব প্রিয় ছিল। বাজারে গেলে বাকরখানি না খেলে আসত না। ছেলের কথা মনে হলে চোখের পানি ধরে রাখতে পানি না।
তিনি বলেন, প্রতিদিন আমি স্কুলে নিয়ে যেতাম। ওর স্কুলের ব্যাগ,বই, খাতা সবই আছে, শুধু সানজু নেই, বলতেই কণ্ঠ ভারি হয়ে ওঠে নাসিরের। চোখ ভিজে যায় জলে।
তিনি বলেন, সরকারের কাছে আমার একটাই চা্ওয়া, ছেলে হত্যার বিচার চাই। আর ওইদিন যারা নিহত হয়েছে তাদের ব্যাপারে যেন খোঁজ নেয় সরকার। অনেকে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না।
প্রসঙ্গত , ২০১৫ সালের ২৪ অক্টেবর পবিত্র আশুরা উপলক্ষে হোসনি দালানের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে রাত ২টার দিকে বোমা হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এতে সানজু নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয় প্রায় একশ’ জন।