নোয়াখালী সদর হাসপাতালে অবৈধ আল-আমীন ফার্মেসীর মালিক দুর্নীতি বাজ ও প্রতারক মুন্না রাজনীতিকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে আজকে কোটি কোটি টাকার মালিক।
নোয়াখালী আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ প্রভাবশালী নেতা আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু ও সাবেক এমপি একরামের বোগলের তলে থেকে দুর্নীতিবাজ ও প্রতারক মুন্না নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের ভিতর সরকারের কোটি টাকার জায়গায় অবৈধভাবে আল আমিন ফার্মেসী গড়ে তোলে।এই হাসপাতালে বসেই শত শত রোগী, ডাক্তার ও নার্সদের জিম্মি করে পিন্টু ও তার বাহিনীকে ব্যবহার করে মুন্না সিন্ডিকেট করে ঔষধের দোকান খুলে অবৈধ ব্যবসা চালাচেছ। সরকারী হাসপাতালের নামীদামী ঔষধ আরএমও ও স্টাফরা চুরি করে এনে তার আল আমিন ফার্মেসীতে বিক্রি করে দেয়।প্রতারক মুন্নার স্টাফরা চোরাই ঔষধ গুলো রোগীদের নিকট উচ্চ মূল্যে বিক্রি লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচেছ বলে নির্যাতিত নীপিড়িত রোগীরা অভিযোগ করেন।
এই অবৈধ ফার্মেসি দিয়েই প্রতারক মুন্না আজকে নোয়াখালীর পুরো স্বাস্থ্য খাত জিম্মি করে রেখেছে। মুন্নার সিন্ডিকেট ও দুর্নীতিবাজ তত্বাবধায়কের রহস্যজনক ভ‚মিকার কারনে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের উচেছদের আদেশটি দীর্ঘ ২১ বছর ধরে ঝুলে আছে। জেলার সচেতন মহলের প্রশ্ন নোয়াখালী সদর হাসপাতালে অবৈধ আল আমিন ফার্মেসীর মালিক মুন্নার খুঁটির জোর কোথায়?
জানা যায়,
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সাবেক তত্বাবধায়ক ডাক্তার একেএম জাহাঙ্গীর চৌধুরী ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে মাত্র ৩/৪ লাখ টাকার বিনিময়ে টেন্ডারে জালিয়াতি ও ভ‚য়া কাগজ পত্রের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন ছাড়াই গত২০০৬ সালে আল আমিন ফার্মেসীকে অবৈধ ভাবে সদর হাসপাতালের অভ্যন্তরে ব্যবসার সুযোগ করে দেন।ঐ সময় তিনি ব্যাপক দুর্নীতি, অবিচার ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারনে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে চাকুরীচ্যুত হন।স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক অনুমোদিত ঠিকাদার হাসান মনসুর শাহীনের শাহীন ফার্মেসিকে ব্যবসার অনুমোদন দেয় গত ২০০৩ সালের ৫ মে তারিখে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে।সেই মোতাবেক হাসান মনসুর শাহীনকে সাবেক তত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর চৌধুরী তৎকালীন হাসপাতালের পুরাতন ভবনে একটি কক্ষ বরাদ্দ দেন।শাহীন ফার্মেসির ডেকোরেশন ও সংস্কার কাজ শেষ পর্যায়ে আসলে তত্বাবধায়ক তা হঠাৎ বন্ধ করে পরের দিন শাহীনকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে ৫ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। শাহীন এতো টাকা দিতে অপারগতা দেখালে তার কাজ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলেন সাবেক তত্বাবধায়ক ডাঃ জাহাঙ্গীর। এদিকে ঔষধ ব্যবসায়ী জনৈক গোলাম মর্তুজা মুন্না থেকে সাবেক তত্বাবধায়ক ৪ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে অতি দ্রæততম সময়ে মন্ত্রনালয়ের অনুমোদ ছাড়াই টেন্ডার জালিয়াতি, মেয়াদোত্তীর্ণ ট্রেড লাইসেন্স,ভ‚য়া ড্রাগ লাইসেন্স,ভ‚য়া ব্যাংক সার্টিফিকেটের মাধ্যমে আল আমিন ফার্মেসীকে অনুমোদন প্রদান করেন
বৈধ শাহীন ফার্মেসির মালিক হাসান মনসুর সাবেক তত্বাবধায়ক ডাক্তার একেএম জাহাঙ্গীর চৌধুরীর অনিয়ম দুর্নীতিকে ও তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিবকে চ্যালেন্জ করে গত ২০০৬ সালে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন মামলা দায়ের করেন।যাহার নং- ৯১৬০/২০০৬। মহামান্য হাইকোর্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে স্থাপিত মেসার্স আল আমিন ফার্মেসী ও আল আমিন এন্টারপ্রাইজের কেন্টিনটি উচেছদপূর্বক মেসার্স শাহীন ফার্মেসি ও মেসার্স এস আর এন্টারপ্রাইজকে ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন মহামান্য হাইকোর্ট। কিন্তু দীর্ঘ ২১ বছর পরও জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রনায় কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের সেই উচেছদের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মুন্নার সেই অবৈধ ফার্মেসীকে টিকিয়ে রেখেছেন। পরবর্তীতে বৈধ শাহীন ফার্মেসির মালিক হাসান মনসুর তার অধিকার ফিরে পেতে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয় হাসপাতাল- ৩ বাংলাদেশ সচিবালয় ঢাকার সিনিয়র সহকারী সচিব সাগরিকা নাসরিন সাবেক তত্বাবধায়কের নিকট আল আমিন ফার্মেসী ও আল আমিন এন্টারপ্রাইজের নামে বরাদ্ধের মূল নথি তলব করেন।সাবেক তত্বাবধায়ক তা মূল নথি না পাঠিয়ে গত ১৫/১১/২০০৮ সালে জেঃহাঃনোয়াঃ / শা-১/০৮/৮২২২ নং স্মারকের মাধ্যমে টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাগজ ও আল আমিন ফার্মেসীসহ ৩ টি ফার্মেসির কাগজ পত্র পাঠান।সিনিয়র সহকারী সচিব উক্ত ৩ টি প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে একটি তদন্ত প্রতিবেদন গত ৫/১/২০০৯ তারিখে স্বাক্ষর করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জেলা স্বাস্থ্য সেবা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের সচিবের একান্ত সচিব এবং নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ককে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পাঠান।যাহা দীর্ঘ ২১ বছর পরও রহস্যজনক কারনে বাস্তবায়ন হয়নি।অপর দিকে ২১ বছর ধরে অবৈধ আল আমিন ফার্মেসীর মালিক তার ব্যাবসা অব্যাহত রেখে বর্তমানে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সচিব তদন্ত প্রতিবেদনে বলেন,মেসার্স আল আমিন ফার্মেসী ঔষধের দোকান,ও রেস্টুরেন্ট বরাদ্দের জন্য আবেদন করলে মন্ত্রনালয় হতে গত ১৮/৭/২০০৬ তারিখে আবেদনটি তত্বাবধায়ক বরাবর অগ্রায়ন করা হয়।তত্বাবধায়ক মেসার্স শাহীন ফার্মেসির রীট পিটিশন এর কোন নিষ্পত্তি না করে ঔষধের দোকান ও রেস্টুরেন্ট বরাদ্দের জন্য নোয়াখালীর স্থানীয় সাপ্তাহিক সতর্ক বার্তা ও দৈনিক সোনালী জমিন পত্রিকায় কোটেশন আহবান করেন।কোটেশন ২ টি স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশের তারিখ ২/৮/২০০৬ ও ৩/৮/২০০৬।তাতে দরপত্র গ্রহনের তারিখ নির্ধারিত ছিল ৯/৮/২০০৬,বেলা ১ঃ০০ পর্যন্ত অর্থাৎ সময় কাল মাত্র ৮ (আট) দিন।অথচ পিপিআর / ২০০৩ অনুযায়ী দরপত্র আহŸানের সময়সীমা ২১ (একুশ) দিন।তবে বিশেষ ক্ষেত্রে ১৪ দিন সময়সীমা রাখার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি।সরকারি জমিতে ঔষধের দোকান ও রেস্টুরেন্ট বরাদ্দের জন্য স্থানীয় পত্রিকার পরিবর্তে জাতীয় দৈনিকে কোটেশন প্রকাশ করার কথা থাকলেও এই ক্ষেত্রে তত্বাবধায়ক দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন।প্রতিবেদনে সিনিয়র সহকারী সচিব দুর্নীতির বিষয়ে বলেন,ঔষধের দোকান বরাদ্দের বিষয়ে প্রাপ্ত দরদাতা ৩ টি প্রতিষ্ঠান ১/ মেসার্স আল আমিন ফার্মেসী, মেইন রোড,মাইজদী, নোয়াখালী, ২/মোঃ সামসুল করিম,১৩৪০/১,মিরপুর রোড,ঢাকা- ১২১৬ ও ৩/ নুরুল ইসলাম,হাসপাতাল রোড,সদর নোয়াখালী। এই ৩টি প্রতিস্ঠান তুলনামূলক বিবরনীর আলোকে আল আমিন ফার্মেসীর দর সর্বোচ্চ ৬% নিন্মে হওয়ায় তার সাথে চুক্তি সম্পাদন করা হয়।তদ্রæপ ঔষধের দোকান বরাদ্দেও আল আমিন এন্টারপ্রাইজের দর সর্বোচ্চ ৭% নিন্মে হওয়ায় তার সাথে চুক্তি সম্পাদন করেন সাবেক তত্বাবধায়ক। কিন্তু ঔষধের দোকান বরাদ্দের বিষয়ে প্রাপ্ত তিনটি আবেদনের মধ্যে আল আমিন ফার্মেসীর অনুক‚লে চুক্তি সম্পাদন করা হলেও তার নির্ধারিত ফরমে কোন আবেদন না থাকার পরও সাবেক তত্বাবধায়ক বেআইনি ভাবে বরাদ্দ সুপারিশ করেন।শর্তানুযায়ী দরপত্রের সাথে আল আমিন ফার্মেসী সহ ৩ টি প্রতিষ্ঠানই ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ,মাইজদী কোর্ট নোয়াখালী কর্তৃক ২৮/১১/২০০৫ তারিখের আইবিবিএল/ এমসিবি/ ২০০৫/৫২৩ সংখ্যক স্মারকে ব্যাংক এর প্রত্যায়ন পত্র দাখিল করেছে। মুন্না দরপত্রের সাথে ৩ টি প্রতিষ্ঠানের একই ব্যাংকের একই শাখা থেকে একই তারিখে একই স্মারকে ৩ টি প্রত্যায়ন সাবমিট করে দুর্নীতির মাধ্যমে দোকান বরাদ্দ হাতিয়ে নেয়। এছাড়া প্রতারক মুন্না তার সাবমিট করা ৩ টি দরপত্রের সাথে একই কর অঞ্চলের একই তারিখে একই টিন নাম্বারের ২ টি আয়কর পত্র এবং তয় দরপত্র গ্রহিতা মেসার্স সামসুল করিমের টিন নম্বর ৩৯৫/১০৬-৯৬৭৭/নোয়া-১, কর অঞ্চল – ৩ চট্রগ্রাম,তারিখ ৬/১২/২০০৫ দাখিল কৃত দরপত্রটি সচিবের তদন্তে ভ‚য়া প্রমানিত হয়েছে। সচিব তার প্রতিবেদনে আল আমিন ফার্মেসীর মালিক মুন্নার আরো প্রতারনা সনাক্ত করেছেন,তার দাখিলকৃত ৩ টি প্রতিষ্ঠানের একই তারিখের একই ভ্যাট সনদে একই টিন নাম্বার উল্লেখ রয়েছে যাতে এলাকা কোড ও করদাতা সনাক্তকরন সংখ্যা পেস্ট করে বিভিন্ন রুপে বসানো হয়েছে। তাহলে এটিও জাল সনদ বলে প্রমানিত। এখানেই তার জালিয়াতি শেষ নয়,আল আমিন ফার্মেসীর নির্ধারিত ফরমে কোন আবেদন পত্র নেই অপর ২টি প্রতিষ্ঠানের আবেদনপত্রে ঔষধের মূল্য ছাড়ের উদ্ধৃত % এর বিষয়টি ভিন্ন কালিতে ভিন্নভাবে লেখা হয়েছে বলে জালিয়াতি প্রমান হয়েছে। এছাড়া সাবমিটকৃত তিনটি প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কাগজ পত্রে লক্ষীপুর নোয়াখালী কলেজের ২ জন অধ্যাপকের সত্যায়িতের সিল স্বাক্ষর সম্পূর্ণ ভ‚য়া প্রমানিত হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। দরপত্রের সাথে মেসার্স নুরুল ইসলাম ও মেসার্স আল আমিন ফার্মেসীর ট্রেড লাইসেন্স নেই তবে আল আমিন এন্টারপ্রাইজের ট্রেড লাইসেন্স সংযুক্ত করা হয়েছে যা দরপত্রের নিয়মে বাতিলযোগ্য।এতে প্রমানিত হয়েছে সঠিক কাগজপত্র ছাড়াই তৎকালীন তত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর চৌধুরী আল আমিন ফার্মেসী ও আল আমিন এন্টারপ্রাইজকে অবৈধভাবে সরকারি জমির উপর এবং হাসপাতালের পরিবেশ বিনস্ট করে ব্যবসার অনুমোদন দেন।দেখা যায় অর্থ বিভাগ কর্তৃক আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ নীতিমালা ২০০৫ অনুযায়ী সরকারি সম্পত্তি ইজারা, ক্যান্টিন ইজারা ও অন্যান্য ভাড়া ইজারা আদায়ের ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে নিলাম/ টেন্ডার/ কোটেশনের শর্তে বিভাগীয় প্রধানের এক বছরের জন্য বরাদ্দের ক্ষমতা রয়েছে।অথচ ডাঃ জাহাঙ্গীর চৌধুরী আল আমিন ফার্মেসীর মালিক মুন্নাকে ১০ বছরের জন্য লিজ প্রদান করে মহাদুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন।সহকারী সচিব নাসরিন সাগরিকার প্রতিবেদনে আরো দুর্নীতির মধ্যে রয়েছে আর তা হলো,চাকুরীচ্যুত তত্বাবধায়ক ডাঃ জাহাঙ্গীর চৌধুরী মেসার্স শাহীন ফার্মেসির মহামান্য হাইকোর্টের রীট পিটিশন নং- ৯১৬০/২০০৬ এর প্রেক্ষিতে আদালতের ডিরেকশন বাস্তবায়ন এবং মন্ত্রনালয়ের যথাক্রমে গত ১৯/১০/২০০৬,৩০/১১/২০০৬,৯/৭/২০০৭ ও ৬/৮/২০০৭ তারিখে প্রেরিত পত্র সমূহের নির্দেশনা প্রতিপালন না করে কোন প্রকার নিয়মনীতি অনুসরণ ব্যাতিরেকে, সঠিক কাগজপত্র যাচাই- বাছাই ছাড়া ক্ষমতা বহির্ভূতভাবে হাসপাতালের অভ্যন্তরে মেসার্স আল আমিন ফার্মেসী ও আল আমিন এন্টারপ্রাইজকে ১০ বছরের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার চুক্তিপত্র বাতিলের নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়।