ইচ্ছা ও নিয়ত: হজ করার উদ্দেশ্যে মনের মধ্যে দৃঢ়সংকল্প করা।

হজ্ব আরবি শব্দ, যার অর্থ নিয়ত করা, দর্শন করা, সঙ্কল্প করা, গমন করা, ইচ্ছা করা এবং প্রতিজ্ঞা করা। পরিভাষায়, নির্দিষ্ট দিনে নিয়তসহ ইহরামরত অবস্থায় আরাফার ময়দানে অবস্থান করা এবং বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করা।
অন্যদিকে, জিলহজ্বের ৯ তারিখ ইহরাম বেঁধে আরাফাতের মাঠে অবস্থানসহ নির্দিষ্ট কিছু আমল ও কাবা গৃহ তাওয়াফ করাকে হজ্ব বলা হয়।
হজ্বের প্রকার:
১. হজ্জে ইফরাদ: হজের নিয়তে ইহরাম বাঁধা, তবে ওমরাহ আদায় না করা।
২. হজে কিরান: একই সময়ে হজ ও ওমরাহর নিয়ত করা এবং উভয়টি এক ইহরামে পালন করা।
৩. হজে তামাত্তু: প্রথমে ওমরাহর ইহরাম বাঁধা, পরে হজের ইহরাম বাঁধে এবং উভয়টি পালন করা।
মহান আল্লাহ আমাদের হজ্ব পালন করার তৌফিক দান করুন।
হজ পালনের নিয়মগুলো নিম্নরূপ:
১. হজের প্রাথমিক প্রস্তুতি:
ইচ্ছা ও নিয়ত: হজ করার উদ্দেশ্যে মনের মধ্যে দৃঢ়সংকল্প করা।
- ইহরাম ধারণ: হজ শুরুর পূর্বে ইহরাম ধারণ করতে হয়। ইহরাম হলো নির্দিষ্ট পোশাক (পুরুষদের জন্য সেলাইবিহীন সাদা দুটি কাপড়, নারীদের জন্য শালীন পোশাক)।
- ইহরামের নিয়ত ও তালবিয়া পাঠ করা:
- নিয়ত: “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা হজ্জান” (অর্থ: হে আল্লাহ! আমি হজের জন্য উপস্থিত হয়েছি)।
- তালবিয়া: “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাক।”
২. হজের মূল কার্যক্রম:
ক। ৮ জিলহজ (ইহরাম ও মিনায় যাত্রা):
- ফজরের নামাজের পর ইহরামের নিয়ত করে মিনায় যাত্রা করা।
- মিনায় পৌঁছে সেখানে জোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও পরদিনের ফজর নামাজ আদায় করা।
খ। ৯ জিলহজ (আরাফাতের ময়দান):
- ফজরের নামাজ শেষে আরাফাতের ময়দানে যাত্রা।
- আরাফাতে অবস্থান করে দোয়া, জিকির ও তাওবা করা (এ দিনটি হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ)।
- জোহর ও আসরের নামাজ এক আজান ও দুই ইকামতে আদায় করা।
- সূর্যাস্তের পর আরাফাত থেকে মুজদালিফায় যাত্রা।
গ। মুজদালিফায় রাত্রীযাপন:
- মাগরিব ও এশার নামাজ একসাথে আদায় করা।
- মুজদালিফায় রাত্রীযাপন ও পাথর সংগ্রহ করা (শয়তানকে নিক্ষেপের জন্য)।
৩. ১০ জিলহজ (কুরবানি ও শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ):
- মিনায় ফিরে বড় শয়তান (জামারাতে আকবা) এর উপর ৭টি পাথর নিক্ষেপ করা।
- কুরবানি করা (যদি হাদী দেওয়া বাধ্যতামূলক হয়)।
- মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাঁটা।
- ইহরাম মুক্ত হয়ে সাধারণ পোশাক পরা।
৪. তাওয়াফে জিয়ারত:
- মক্কায় এসে কাবা শরিফের চারপাশে ৭ বার তাওয়াফ করা।
- সায়ি করা (সফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্য দিয়ে সাতবার চলাচল)।
৫. ১১ ও ১২ জিলহজ (শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ):
- মিনায় অবস্থান করে প্রতিদিন তিনটি শয়তান (জামারা) এর উপর ৭টি করে পাথর নিক্ষেপ করা।
৬. তাওয়াফে বিদা:
- হজ শেষে মক্কা ছাড়ার পূর্বে বিদায়ি তাওয়াফ করা।
গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা:
- হজের প্রতিটি কার্যক্রম ধৈর্য, নিষ্ঠা ও খোদাভীতির সাথে পালন করা উচিত।
- সময়মতো নামাজ আদায় করতে হবে।
- কোনো নিষিদ্ধ কাজ (যেমন: ঝগড়া, গালমন্দ, ইহরামের নিয়ম ভঙ্গ ইত্যাদি) করা যাবে না।
আল্লাহ আপনার হজ কবুল করুন!
হাদিস:
“তোমরা আমার পক্ষ থেকে একটি বাক্য হলেও পৌঁছে দাও।”
(সহীহ বুখারি, হাদিস নং: ৩৪৬১)
এই হাদিসের গুরুত্ব:
- দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়:
প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব ইসলামের বার্তা প্রচার করা, যতটুকু জানা আছে তা ছড়িয়ে দেওয়া। - ছোট কাজের বড় প্রতিদান:
একটিমাত্র বাক্য শেয়ার করলেও তা হয়তো কারও জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। - সদকায়ে জারিয়ার মাধ্যম:
কেউ যদি আপনার শেয়ার করা জ্ঞান অনুযায়ী আমল করে, তাহলে তার প্রতিটি নেকির সওয়াব আপনিও পাবেন।
যে হাদিস বেশি বেশি শেয়ার করা উচিত:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, আন্তরিকতার সাথে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
(সহীহ বুখারি, হাদিস নং: ৭৩৭৪)
এটি ইসলামিক বিশ্বাসের মূল ভিত্তি। এটি শেয়ার করার মাধ্যমে মানুষ তাওহিদের পথে পরিচালিত হতে পারে এবং আল্লাহর রহমত লাভ করতে পারে।