প্রশাসন

থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যের বাস্তবিক অবস্থা

থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যের বাস্তবিক অবস্থা


“বেতন দিয়েই সেবা করবো,ব্যবস্থা করেন।


১। থানায় আপনারা যে জিডি/অভিযোগ করেন, এগুলো তদন্ত করার জন্য সরকারী কোন বিল কিংবা গাড়ি বরাদ্দ নেই। এসব তদন্ত করতে হলে একজন এস.আই/এ.এস.আইকে সিএনজি/অটো ভাড়া করে ঘটনাস্থলে যেতে হয়। দূরত্ব বিবেচনায় এই অটো/সিএনজি ভাড়া ৫০০-১০০০ টাকা। মফস্বলের গড়পরতা একটা থানাতেও একজন এসআই/এএসআইকে মাসে ২০-২৫টা জিডি/অভিযোগ তদন্ত করতে হয়। তাহলে জিডি/অভিযোগে একজন এস.আই/এ.এসআই এর মাসিক ব্যয় কত?। সরকারীভাবে এ খরচ ব্যবস্থা করেন।

২। থানায় যে দিনে-রাতে টহল ডিউটি বের হয়, এজন্য সরকার মাসে যে তেল বরাদ্দ দেয়, তা দিয়ে সর্বোচ্চ ১৫-২০ দিন গাড়ি চালানো যায়। বাকি দিনের তেল খরচ এস.আই/এ.এস.আইদের বহন করতে হয়। সারারাত নির্ঘুম ডিউটি করে সকালে বেতন থেকে ৫০০-১০০০ টাকা তেল খরচ দিতে পারবো না। সরকারীভাবে তেলের ব্যবস্থা করেন।

৩। রাত্রীকালীন টহল ডিউটি করার জন্য মফস্বল থানাগুলোতে ২-৩টার বেশি সরকারী গাড়ি থাকে না। কিন্তু ঝুঁকি বিবেচনায় থানাভেদে ৫-৭ টা টহল ডিউটি বের হয়। এক্ষেত্রে ঐ থানাধীন সাধারণ মানুষের সিএনজি নিয়ে কিছুটা জোরপূর্বকভাবে ডিউটি করতে বাধ্য করা হয়। এটা বছরে বারো মাস পালাক্রমে চলতে থাকে, পাশাপাশি সিএনজি ড্রাইভারদের জন্য সরকারী কোন তেল, নাস্তা বা ভাড়ার ব্যবস্থা নেই, ফলে পুলিশের বিরুদ্ধে ড্রাইভারদের এক ধরণের চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়। সরকারীভাবে এ ব্যবস্থা করে দেন, কোন পাবলিককে আমরা কষ্ট দিতে চাই না।

৪। থানা এলাকায় বেওয়ারিশ লাশ পাওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটে। অনেকক্ষেত্রে এসব মরদেহ পচে-গলে বিভৎস হয়ে যায়। এসব লাশের সূরতহাল করতে উলট-পালট করে দেখতে হয়। এই লাশ কেউ ধরতে চায় না, তখন ডোমের সাহায্য নিতে হয়। প্রতিটা থানায় একজন ডোম থাকে তাকে টাকা দিতে হয়, ক্ষেত্র বিশেষ শুকনা+ভিজা খাওয়াতে হয়, তানাহলে তারা একাজ করেনা। পরবর্তীতে লাশের পোস্ট মর্টেম করানো, পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট সংগ্রহ, হাসপাতালে আনা-নেওয়ার গাড়ি ভাড়া, ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ, ডিএনএ প্রোফাইলিং করা, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি, দাফন-কাপন, মামলা করা বা তদন্ত করা সবকিছু নিজের টাকায় করতে হয়। এসব মামলায় যে তদন্ত বিল হয় সেটা খরচের তুলনায় নগন্য। সরকারীভাবে এসব খরচের ব্যবস্থা করেন।

৫। একটা মামলা তদন্ত করতে যেখানে খরচ হয় ৫-৭ হাজার টাকা, ক্ষেত্র বিশেষ ডাকাতি, ধর্ষণ মামলা ২০-৩০ হাজার টাকা, সেখানে তদন্ত বিল দেয় ২-৫ হাজার টাকা। যে মামলা যত খরচ হয় সেটুকু সরকারীভাবে ব্যবস্থা করেন।

৬। প্রতি মাসে এসআই/এএসআইদের সোর্স বিল ৫-১০ হাজার টাকা হলেও এসআই/এএসআইদের জন্য সরকারীভাবে কোন সোর্স বিল নেই। এ সোর্স বিলের ব্যবস্থা করেন।

৭। একজন আসামী গ্রেফতার করে থানায় রেখে তাকে খাইয়ে, কোর্টে পৌঁছানো পর্যন্ত একজন এসআই/এএসআই এর খরচ হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। অথচ আসামী গ্রেফতারে কোর্টে পাঠানোতে সরকারী কোন বরাদ্দ নেই। ব্যবস্থা করেন।

৮। থানায় চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার, প্রিন্টার, ফাইল-পত্র, খাতা-কলম, স্টেশনারী সব নিজের টাকায় কিনতে হয়। সরকারীভাবে এসবের জন্য বরাদ্দ দেন।

৯। বিট পুলিশং, কমিউনিটি পুলিশং, সভা-সেমিনার, ব্যানার-ফ্যাস্টুন, মাইকিং সব নিজের টাকায় করতে হয়। সরকারীভাবে এসবের বরাদ্দ চাই।

১০। সরকারী কাজে বিভিন্ন জায়গায় মোবাইলে কথা বলতে হয়। ফোন খরচ বরাদ্দ দেন।

১১। মাদকদ্রব্য রিপোর্ট আনতে ২-৫শ টাকা খরচ হয়। সরকারীভাবে এ খরচ বহন করেন।

পুলিশ সংস্কারের পাশাপাশি সুযোগ সুবিধারও সংস্কার করেন। আমরা শুধু বেতন দিয়েই জনগণের সেবা করতে চাই। ব্যবস্থা করেন।”

মূল লেখক
ফাহিম হাসান,
৩৮ এসআই(নিঃ)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button