ইসলাম ধর্ম

চরিত্রের কতিপয় খারাপ দিক যেগুলো আমাদের বর্জন করা প্রয়োজন

আখলাক আরবি শব্দ । এটি বহুবচন । এক বচন খুলুকুন । এর আভিধানিক অর্থ- স্বভাব, চরিত্র, ইত্যাদি । শব্দগত বিবেচনায় আখলাক বলতে সচ্চরিত্র ও দুশ্চরিত্র উভয়কেই বোঝায় । তবে প্রচলিত অর্থে আখলাক শুধু সচ্চরিত্রকেই বুঝায়। যেমন ভালো চরিত্রের মানুষকে আমরা চরিত্রবান বলি । আর মন্দ চরিত্রের মানুষকে বলি চরিত্রহীন । ব্যবহারিক বিবেচনায় আখলাক দ্বারা ভালো ও উত্তম চরিত্রকে বোঝানো হয় ।

মূলত আখলাক হলো মানুষের স্বভাবসমূহের সমন্বিত রূপ । মানুষের আচার-আচরণ, চিন্তা-ভাবনা, মানসিকতা, কর্মপন্থা সবকিছুকে একত্রে চরিত্র বা আখলাক বলা হয় । তা ভালো কিংবা মন্দ হতে পারে । এককথায়, মানুষের সকল কাজ ও নীতির সমষ্টিকেই আখলাক বলা হয় ।

আখলাক দু’প্রকার । যথা-

ক. আখলাকে হামিদাহ 

খ. আখলাকে যামিমাহ 

আখলাকে হামিদাহ হলো মানুষের প্রশংসনীয় গুণাবলি আর আখলাকে যামিমাহ মানব স্বভাবের মন্দ অভ্যাসগুলোর সামষ্টিক নাম ।

আখলাকে হামিদাহ

পরিচয়

আখলাক অর্থ চরিত্র, স্বভাব। আর হামিদাহ অর্থ প্রশংসনীয় । সুতরাং আখলাকে হামিদাহ অর্থ প্রশংসনীয় চরিত্র, সচ্চরিত্র । ইসলামি পরিভাষায়, যেসব স্বভাব বা চরিত্র সমাজে প্রশংসনীয় ও সমাদৃত, আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুল (স.)-এর নিকট প্রিয় সেসব স্বভাব বা চরিত্রকে আখলাকে হামিদাহ বলা হয় ।

এককথায়, মানব চরিত্রের সুন্দর, নির্মল ও মার্জিত গুণাবলিকে আখলাকে হামিদাহ বলা হয় । মানুষের সার্বিক আচার-আচরণ যখন শরিয়ত অনুসারে সুন্দর, সুষ্ঠু ও কল্যাণকর হয় তখন সে স্বভাব-চরিত্রকে বলা হয় আখলাকে হামিদাহ ।

আখলাকে হামিদাহকে আখলাকে হাসানাহ বা হুসনুল খুল্কও বলা হয় । আখলাকে হাসানাহ অর্থ সুন্দর চরিত্র । মানব চরিত্রের উত্তম ও নৈতিক গুণাবলি আখলাকে হামিদাহ এর অন্তর্ভুক্ত । যেমন- সততা, সত্যবাদিতা, ওয়াদা পালন, মানব সেবা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, দয়া, ক্ষমা ইত্যাদি ।

গুরুত্ব

আখলাকে হামিদাহ মানবীয় মৌলিক গুণ ও জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ । এর দ্বারাই মানুষ পূর্ণমাত্রায় মনুষ্যত্বের স্তরে উপনীত হয় । মানবিকতা ও নৈতিকতার আদর্শ আখলাকে হামিদাহর মাধ্যমেই পরিপূর্ণতা লাভ করে । মানুষের ইহ ও পরকালীন সুখ, শান্তি উত্তম আখলাকের উপরই নির্ভরশীল । সৎচরিত্রবান ব্যক্তি যেমন সমাজের চোখে ভালো তেমনি মহান আল্লাহর নিকটও প্রিয় । মহানবি (স.)-এর হাদিসে বলা হয়েছে-

أحَبُّ النَّاسِ إِلَى اللهِ أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا

অর্থ : “আল্লাহ তায়ালার নিকট সেই লোকই অধিক প্রিয়, চরিত্রের বিচারে যে উত্তম ।” (ইবনে হিব্বান) এ জন্য মানুষকে আখলাক শিক্ষা দেওয়াও নবি-রাসুলগণের অন্যতম দায়িত্ব ছিল । আমাদের প্রিয়নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী । সব ধরনের সৎগুণ তাঁর চরিত্রে পাওয়া যায় । স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রসঙ্গে বলেছেন-

وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ 0 

অর্থ : “নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের ধারক ।” (সূরা আল কালাম, আয়াত ৪) রাসুলুল্লাহ (স.) ঘোষণা করেছেন,

اتما بُعِثْتُ لِأُتَيْمَ مَكَارِمَ الْأَخْلَاقِ –

অর্থ : “উত্তম চারিত্রিক গুণাবলিকে পূর্ণতা দানের জন্যই আমি প্রেরিত হয়েছি ।” (বায়হাকি)

রাসুলুল্লাহ (স.) নিজে যেমন উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন তেমনি মানবজাতিকে সচ্চরিত্র গঠনের শিক্ষা দিয়েছেন । পূর্ণাঙ্গ মুমিন হওয়ার জন্য তিনি সৎ ও নৈতিক স্বভাব অনুশীলনের নির্দেশ দিয়েছেন । তিনি বলেছেন, “মুমিনগণের মধ্যে সেই পূর্ণ ইমানের অধিকারী, যে তাদের মধ্যে চরিত্রের বিচারে সবচেয়ে উত্তম ।” (তিরমিযি)

প্রকৃতপক্ষে সৎচরিত্র পরকালীন জীবনেও মানুষের কল্যাণের হাতিয়ার, মুক্তির উপায় হবে । উত্তম

আচার-আচরণ মানুষকে পুণ্য বা সাওয়াব দান করে । মহানবি (স.) বলেছেন, তা

অর্থ : “সুন্দর চরিত্রই পুণ্য ।” (মুসলিম)

প্রশংসনীয় আচরণ ও স্বভাব কিয়ামতের দিন মুমিনের পাল্লা ভারী করবে। একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, “নিশ্চয়ই (কিয়ামতের দিন) মিযানে সুন্দর চরিত্র অপেক্ষা ভারী বস্তু আর কিছুই থাকবে না ।” (তিরমিযি)

দুনিয়ার জীবনেও আখলাকে হামিদাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সচ্চরিত্র ব্যক্তিকে সমাজের সবাই ভালোবাসে, বিশ্বাস করে । সবাই তাকে শ্রদ্ধা করে, সম্মান দেখায় । তাঁর বিপদে-আপদে এগিয়ে আসে ।

চরিত্রের কারণে তিনি সমাজে মর্যাদার উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হন । মহানবি (স.) এ সম্পর্কে বলেছেন,

خيَارُكُمْ أَحْسَنُكُمْ اَخْلَاقًا –

অর্থ : “তোমাদের মধ্যে উত্তম ঐ সকল ব্যক্তি, যারা তোমাদের মধ্যে চরিত্র বিচারে সুন্দরতম।” (বুখারি)

সমাজের সকলে চরিত্রবান হলে সেখানে কোনোরূপ হিংসা-বিদ্বেষ, মারামারি, হানাহানি থাকে না । সমাজ সুখে-শান্তিতে ভরে ওঠে ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button