আইন ও বিচাররাজনীতি

এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের নেশায় নেমেছে নাসির ফকির কোনো রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলেও সবকিছু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা

বিশেষ প্রতিনিধি : পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার পাটিকেলবাড়ী গ্রামের ফকির নাসির উদ্দীন। যিনি মাজার ব্যাবসায়ী এবং বহুরুপী নাসির ফকির নামে পরিচিত। বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে সে আওয়ামী লীগের দালাল হিসাবেও পরিচিত লাভ করে।

তার দৌরাত্ম গুয়ারেখা ইউনিয়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এই ইউনিয়নের পাটিকেলবাড়ী এবং ব্যাসকাঠী গ্রামের সকল নোংরা রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ কর্তা তিনি। তার নানা মূখী অত্যাচারে এলাকার শিক্ষিত এবং সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ এখন অতিষ্ট। তার বিরোধী মতের লোকজনকে দমন করতে নেপথ্যে ইন্ধন দিয়ে মামলা করানো,পুলিশের মাধ্যমে হয়রানি করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এক সময়ের বিএনপি দলীয় প্রভাবশালী এমপি সৈয়দ শহীদুল হক জামালের ব্যাক্তিগত সহকারী থাকা অবস্থায় ক্ষমতার জোরে বেপরোয়া হয়ে ওঠে সে। গুয়ারেখা ইউনিয়নে তখন তার হুকুমই ছিল আইন।

তার বে-আইনী হুকুম পালন না করার কারনে স্বরুপকাঠী উপজেলার রাজবাড়ী ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ রফিকুল ইসলাম কে নেপথ্যে কলকাঠি নেড়ে আইনবহির্ভূতভাবে বরখাস্ত করান নাসির ফকির। এখানেই তিনি ক্ষান্ত হননি। উক্ত অধ্যক্ষের স্ত্রী একই কলেজের প্রভাষকেও মানুষিক চাপের মধ্যে রাখেন যেন চাকরি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। উক্ত অধ্যক্ষ মানবেতর জীবন যাপন করে দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে চাকরি ফিরে পেলেও মানুষিক টেনশনে মৃত্যু বরন করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজ সংশ্লিষ্ট একজন জানান উক্ত অধ্যক্ষের পেনসন সংক্রান্ত রেজুলেশন পাস করার সময় ঘুষ হিসাবে তার নিকট থেকে এক লাখ টাকার একটি চেক নিয়ে নেন নাসির ফকির। রাজবাড়ী ডিগ্রি কলেজকে সে তার ব্যাক্তিগত আয়ের উৎসে পরিনত করেছিল।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে উক্ত নাসির ফকির কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী নয়। মাজার ব্যাবসায়ই তার পরিচয় এবং পেশা। কথিত পাটিকেলবাড়ী আদুশাহ্ দরগা শরীফকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে তার মাজার ব্যাবসা। কথিত মাজারে প্রতিষ্ঠিত এতিমখানায় সরকার থেকে যে বরাদ্দ পাওয়া যায় তার অর্ধেক এতিম ছাত্রও নেই সেখানে। তাহলে উদ্বৃত্ত মালামাল যায় কোথায়? এ নিয়ে আমাদের তথ্য অনুসন্ধান চলছে।

গত বছর ০৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পর তার চরিত্রেও আমূল পরিবর্তন ঘটে। আওয়ামী লীগের এই দোসর হঠাৎ করে এমন ভাব দেখাতে শুরু করে দেখে মনে হয় যেন সে বিএনপির বড় মাপের এক নেতা। তারই ইন্ধনে পাটিকেলবাড়ী এগারো গ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মিনা কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার ও মাষ্টার সাহাদৎ হোসেন স্মৃতি পাঠাগারে ব্যাপক ভাংচুর হয় বলে ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়।

ঐ ঘটনায় কম্পিউটার, ল্যাপটপ, পিসিসহ আট লক্ষাধিক টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়। এ বিষয়ে এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায় স্কুল শিক্ষক মরহুম সাহাদৎ হোসেন ছিলেন সৎ এবং স্পষ্টভাষী। তাই নাসির ফকিরের দূর্নীতি ও বে-পরোয়া আচরণের প্রতিবাদ করায় তাকেও নাসির বিভিন্ন ভাবে হেনস্তা করেছে। এলাকাবাসী আরো বলেন তারা দুই ভাই উচ্চ শিক্ষিত এবং সরকারি চাকরি করে। তাদের বোন পার্শবর্তী ইউনিয়ন থেকে ৩ বার নির্বাচিত ইউপি সদস্য। আমরা নাসির ফকিরের অনৈতিক কাজে সমর্থন না করায় সে তাদের দু ভাইয়ের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ক্ষতি সাধনের জন্য বিভিন্ন অপতৎপরতা চালাচ্ছে।

এলাকাবাসী জানান শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে কর্মরত মুছিবুল হাসানকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য উক্ত নাসির ফকির মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ তুলে বেনামে দরখাস্ত দিয়ে নিজে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট ফোন করে ব্যাবস্থা নিতে বলে। ইহাতেই প্রমানিত হয় উক্ত দরখাস্তের পিছনে কলকাঠি নাড়ছে নাসির ফকির। এলাকাবাসী আরো জানান গত ২৭ ফেব্রুয়ারী নাসির ফকিরের ইন্ধনে কিছু লোক এগারো গ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে একটি মানব বন্ধন করেন। তথ্য চিত্রে দেখা গেছে ঐ মানব বন্ধনে এলাকার ১৪ জন লোক উপস্থিত ছিলেন এবং তাদের মানব বন্ধন সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। এ বিষয়ে মানববন্ধনে উপস্থিত কয়েকজনের সাথে কথা বলা জানা গেছে তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেনা। নাসির ফকির আসতে বলছে তাই আসছি।

মানুষকে রাস্তায় দাড় করিয়ে নিজে অনুপস্থিত ছিলেন। ঐ একই স্থানে একই সময়ে স্হানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা ও মানহানিকর অপপ্রচার চালানোর বিরুদ্ধে একটি বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার নেপথ্যে রয়েছে বহুরুপী নাসির ফকির।

নাসির ফকিরের বর্তমান অপকর্মের খোঁজ নিয়ে এলাকাবাসী সূত্রে আরো জানা গেছে সে বর্তমানে বেকার এবং অর্থ নৈতিক সংকটে আছে। তাই এলাকার তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে নিতে চাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তার পুত্রকে এগারো গ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচন করাতে গিয়ে এলাকাবাসীর তোপের মুখে তিনি ব্যার্থ হন। রাজবাড়ী ডিগ্রি কলেজের উপরও ফেলেছেন শকুনি নজর।

আদুশাহ্ দরগাই এখন পর্যন্ত তার ভরসা। এগারো গ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায় এই বিদ্যালয়ের ২০২৫ সালের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নাসির ফকিরের নোংরামীর কারনেই অনুষ্ঠিত হয় নি। পুলিশের দালাল হিসাবে পরিচিত নাসির ফকির জেলা পুলিশ সুপারকে বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপি নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেনের নাম প্রধান অতিথি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামানের নাম প্রস্তাব করলে নাসির ফকির তাতে বাধ সাধেন।

প্রশ্ন হলো বিএনপির খেয়ে পড়ে এখন নাসির ফকির বিএনপির উপর ক্ষিপ্ত কেন? নাসির ফকির পুলিশি দালালীর আরও প্রমান পাওয়া যায় গত ০৫ ফেব্রুয়ারী পুলিশের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠানে। ঐ অনুষ্ঠানের মঞ্চে পুলিশ সুপার সহ অন্যান্য পুলিশ কর্ম কর্তাদের সাথে একই মঞ্চে একমাত্র সিভিল ব্যাক্তি হিসেবে নাসির ফকির উপবিষ্ট ছিলেন। তার ছেলে নাজিমউদ্দীন মুনান বক্তব্য প্রদান করেন। বিশিষ্টজনদের প্রশ্ন পুলিশের অনুষ্ঠানে কোন পদ মর্যাদায় পিতাপুত্র উপবিষ্ট ছিলেন। তবে কি অনুষ্ঠানটি পিতা পুত্রের প্রয়োজনে আয়োজন করা হয়। ঐ অনুষ্ঠানে নাসির ফকির এর ইন্ধনে এক মাদক ব্যবসায়ী, নারী লোভী, আওয়ামী লীগ কর্মী স্হানীয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নালিশ করে। যাহা মামলা পর্যন্ত গড়ায়। তার বিতর্কিত কর্ম কান্ডের জন্য এলাকার লোকজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এখন পুলিশ নির্ভর হয়ে পড়েছে।


( নন্দিত নাসির ফকিরের নিন্দিত কর্ম কান্ড নিয়ে চোখ আগামী সংখ্যায়)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button