অব্যাবস্থাপনাএক্সক্লুসিভ

সুনামগঞ্জ সীমান্তে চোরাকারবারীর মৃত্যু: কসমেটিকসের চালানসহ গ্রেফতার ১

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জ জেলা সীমান্তে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে চোরাচালান বাণিজ্য। ভারত থেকে অবৈধ ভাবে বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর করেতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে সংঘর্ষ ও হত্যার ঘটনা। তারপরও সীমান্ত চোরাচালান নিয়ন্ত্রণকারীদের গ্রেফতারের জন্য জোড়ালো কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়না।তাই জেলার সীমান্ত এলাকা গুলোতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চিহ্নিত চোরাকারবারী ও সোর্স পরিচয়ধারী একাধিক মামলার আসামীরা।


এলাবাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো গতকাল শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর থেকে জেলার চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য খ্যাত তাহিরপুর উপজেলার চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলা, কড়ইগড়া, রাজাই ও নয়াছড়াসহ লাউড়গড় সীমান্তের জাদুকাটা নদী, সাহিদাবাদ, দশঘর, পাশের টেকেরঘাট সীমান্তের বুরঙ্গাছড়া, বড়ছড়া, নীলাদ্রী লেকপাড়, পুলিশ ফাঁড়ির পিছন দিয়ে, বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা, লালঘাট, চারাগাঁও সীমান্তের বাঁশতলা, কলাগাঁও, জঙ্গলবাড়ি ও বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের লামাকাটা, সুন্দরবন, কচুয়া ছড়া এলাকা দিয়ে পৃথক ভাবে ভারত থেকে কয়লা, পাথর, ইয়াবা, মদ, গাঁজা, চাল, চিনি, ফুছকা, জিরা ও কসমেটিকস সহ আরো বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর শুরু করে সোর্স পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীরা।

এমতাবস্থায় রাত ৮টায় বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা পূর্ব এলাকায় বিজিবি অভিযান চালিয়ে পাচাঁরকৃত কসমেটিকসের চালানসহ সীমান্ত গডফাদার তোতলা আজাদের সোর্স সাবজল হোসেনকে গ্রেফতার করে। পরে এদিন রাতেই তাকে থানায় হস্থান্তর করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলা দায়ের করা হয়। এই সীমান্তে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে শিশু, কিশোরী ও বৃদ্ধসহ এপর্যন্ত শতাধিক লোকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। একই ভাবে পাশের টেকেরঘাট সীমান্তে মৃত্যু হয়েছে অর্ধশতাধিক লোকের।

এই সীমান্তে ঈদের কয়েকদিন আগে কয়লা পাচাঁর করা নিয়ে লাকমা গ্রামের চোরাকারবারী রফিকুল ও ইকবালগংদের মধ্যে সংঘর্ষে নারীসহ ১০জন আহত হয়। অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলার আনন্দপুর বিজিবি পোস্টের সামনে দিয়ে ভারত থেকে চিনি পাচাঁর নিয়ে চোরাকারবারী ভুটকুন মিয়া ও নারী চোরাকারবারী আছুতগংদের মধ্যে সংঘর্ষে নার্গিস সাংমা (৪২) সহ আরো কয়েকজন আহত হয়।

এই সীমান্তের পর্যটনস্পট বারেকটিলার আনন্দপুর, বিজিবি পোস্ট, কাঠাল বাগান ও ১২০৩ পিলার এলাকাসহ বারেকটিলার নিচের অংশ জাদুকাটা নদীর তীর দিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে শতশত লোক দিয়ে ভারত থেকে পাচাঁর করা হয় মদ, গাঁজা, ইয়াবা, বিড়ি, ফুছকা, চিনি ও অস্ত্রসহ কোটি টাকার বিভিন্ন পন্য সামগ্রী। এই সীমান্তে চোরাচালান করতে গিয়ে এপর্যন্ত ১৫জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া পাশের লাউড়গড় সীমান্তের জাদুকাটা নদীর ১২০৩এর ৩এস পিলার ও সাহিদাবাদ বিজিবি পোস্টের সামনে দিয়ে ভারত থেকে শতশত লোক দিয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে ওপেন কোটি টাকার কয়লা ও পাথর পাচাঁর।

একই সময়ে এই সীমান্তের বিজিবি ক্যাম্পের সামনে জাদুকাটা নদীর তীর কেটে অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন করে শতাধিক লড়ি বোঝাই করে ওপেন লাখলাখ টাকা বিক্রি করা হলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়না। এই সীমান্তে চোরাচালান করতে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে ও তাড়া খেয়ে নদী ডুবেসহ খাসিয়াদের হাতে এপর্যন্ত শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে জানা গেছে।
অন্যদিকে গতকাল শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় দোয়ারা বাজার উপজেলা সীমান্ত দিয়ে ভারতের মেঘালয়ের খাসিয়া পুঞ্জি থেকে একদল চোরাকারবারী সুপারীসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর করতে যায়। ওই সময় খাসিয়াদের গুলিতে কুটাই মিয়া (৫০) নামের এক চোরাকারবারীর মৃত্যু হয়েছে। সে উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের পেকপাড়া মোকামছড়া) গ্রামের মৃত মনির উল্লাহর ছেলে। এর আগে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মাছিমপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আরো এক চোরাকারবারীর মৃত্যু হয়েছিল।

এই সীমান্তের চিনাকান্দি, ডলুরাসহ পাশের মধ্যনগর উপজেলা সীমান্তের বাংঙ্গালভিটা, মাটিরাবন ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কসমেটিকস, শাড়ি-কাপড়, গরু, মহিষ ও মাদকদ্রব্যসহ আরো বিভিন্ন মালামাল পাচাঁরের খবর পাওয়া যায়।


এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্ণেল একেএম জাকারিয়া কাদির সাংবাদিকদের জানান- দোয়ারা বাজার সীমান্তে বাংলাদেশি নিহতের ঘটনা অবহিত হয়েছেন কিন্তু নিহতের পরিবারের কেউ বিজিবিকে জানায়নি। উর্ধ্বতন সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির অভিযানসহ গোয়েন্দা তৎপরতা সর্বতোভাবে অব্যাহত রয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button