অব্যাবস্থাপনা

প্রথম হজ ফ্লাইট সোমবার

হাজীদের ওষুধ এখনো সউদী পৌঁছেনি

১৪টি অতিরিক্ত স্লট আনার দাবি হাবের

মোল্লা নাসির উদ্দিনঃ সোমবার দিবাগত রাত ৩টায় বাংলাদেশ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রথম হজ ফ্লাইট (বিজি-৩৫০১) ৪১৯ জন সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রী নিয়ে জেদ্দার উদ্দেশ্যে ঢাকাত্যাগ করবে। একই দিন সাউদিয়া অ্যাবিয়ান এয়ারলাইন্স ও ফ্লাইনাসের প্রথম হজ ফ্লাইট জেদ্দার উদ্দেশ্যে ঢাকাত্যাগ করবে।

সোমবার রাত ৭টায় আশকোণাস্থ হাজী ক্যাম্পে প্রধান অতিথি হিসেবে ধর্ম উপদেষ্টা ড.আ ফ ম খালিদ হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে হজ ফ্লাইট উদ্বোধন করবেন। এতে সভাপতিত্ব করবেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামানিক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। হজ অফিসের পরিচালক হজ লোকমান হোসেন আজ রোববার তার দপ্তরে ইনকিলাবকে জানান, হাজী ক্যাম্পের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
পরিচালক হজ জানান, হাজী ক্যাম্প থেকে হজযাত্রীদের বিমান বন্দরে আনা নেয়ার জন্য কাওলা রেল লাইন হয়ে বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আজ সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তাদের নিয়ে হজযাত্রী পরিবহনের মহরা দেয়া হয়েছে। এদিকে, বাংলাদেশি হজযাত্রীদের জন্য মক্কা-মদিনায় সরকারি মেডিকেল টিমের জন্য ক্রয়কৃত ওষুধ হাজী ক্যাম্পের নীচের গুদামে পড়ে রয়েছে। মক্কা-মদিনায় বাংলাদেশি মেডিকেল সেন্টারের মেডিকেল টিমের সদস্যরা সউদীতে গিয়েছে। হজ ফ্লাইট শুরুর ১০/১৫ দিন আগেই এসব ওষধ সউদীতে পাঠানোর কথা থাকলেও হজ অফিসের চরম উদাসিনতার দরুণ লাখ লাখ টাকার ওষুধ হজযাত্রীদের জন্য বরাদ্দকৃত হোটেলের রুমে পড়ে রয়েছে।

মজুদকৃত ওষুধের কার্টুন কবে নাগাদ সউদীর জেদ্দা বিমান বন্দরে পৌঁচবে তা’ কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। হজযাত্রীদের জন্য ক্রয়কৃত এসব ওষুধ জেদ্দা বিমান বন্দরে পৌঁছার পর সউদী ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা তা’যাচাই বাছাই করে ডেলিভারি দিতে এক সপ্তাহ থেকে দশ দিন সময় লেগে যায়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশি হজযাত্রীরা সউদী পৌঁছে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে ওষুধ না পৌঁছার কারণে দায়িত্বরত ডাক্তাররা অসুস্থ হজযাত্রীদের কোনো সেবা দিতে পারবেন না। হাজী ক্যাম্পের একাধিক সূত্র এতথ্য জানিয়েছেন।
হাজী ক্যাম্পের ডরমিটরিতে আজ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সরকারি ব্যবস্থাপনার আটজন হজযাত্রী তৃতীয় তলায় অবস্থান নিয়েছেন। কুড়িগ্রাম থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রী মশিউর রহমান, মো. ইয়াকুব আলী সরদার ও মোফাজ্জল হকসত ১৩ জন ডরমিটরিতে অবস্থান নিয়েছেন। পাবনার গাইড মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, হাজী ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনা এবার খুবই সুন্দর করা হয়েছে। ডরমিটরিতে এসির ব্যবস্থা করা হয়েছে। চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৮৭ হাজার ১শ’হজযাত্রী হজে যাবেন।

এসব অধিকাংশই হজযাত্রীর সউদী অংশের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম গত বছরের ন্যায় ঢাকা হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরেই সম্পন্ন করা হবে। এ জন্য সউদী ইমিগ্রেশনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অতিসম্প্রতি ঢাকা বিমান বন্দরে ইমিগ্রেশন ডেক্স স্থাপনের কার্যক্রম করেছে। এদিকে, হজ ফ্লাইট শুরুর মাঝ পর্যায়ে বিমান বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের অসতর্কতার দরুণ ৩৬টি হজ ফ্লাইট রাখায় হজযাত্রায় বিড়ম্বনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট মহল। এতে বিমানের অনেক ফ্লাইট খালি যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় হজ ফ্লাইট বাতিল হবে। ফলে বেশকিছু হজ ফ্লাইটের সøট মার যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

হাব সভাপতি সৈয়দ গোলাম সরওয়ার বলেছেন, বিমানের অদক্ষ কর্মকর্তাদের চরম খামখেয়ালির দরুণ হজ ফ্লাইট শুরু মাঝামাঝি সময়ে ৩৬ হজ ফ্লাইট দেয়া হয়েছে। এতে হজযাত্রীর অভাবে অনেক হজ ফ্লাইট বাতিল হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে হজযাত্রায় ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। হজযাত্রায় বিপর্যয় এড়ানোর জন্য আজ হাবের সভাপতি সৈয়দ গোলাম সরওয়ার ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে হজ ফ্লাইটের শেষের দিকে সর্বমোট আরো ১৪টি হজ ফ্লাইটের স্লট অতিরিক্ত অনুমোদনের জন্য আগে থেকেই জেদ্দাস্থ আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে জরুরি আবেদন প্রেরণের অনুরোধ জানিয়েছেন।

অতিরিক্ত স্লট পাওয়া না গেলে আগেভাগেই সাউদিয়া এয়ারলাইন্স ও ফ্লাইনাসকে হজযাত্রী পরিবহনের কোটা ভাগ করে দিতে হবে। না হয় অনেক হজযাত্রীর হজে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভয়াবহ সঙ্কটের সৃষ্টি হতে পারে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে হাব সভাপতি বলেন, সউদীর হজ ভিসা সংক্রান্ত সার্ভার ত্রুটির দরুণ সেন্ট টু অ্যাম্বেসি দেখাচ্ছে ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাসে গিয়ে এ ব্যাপারে অনেকেই হজ ভিসার সুরাহা পাচ্ছে না। হাব সভাপতি বলেন, গত বছর হজ মৌসুমে হাজীদের লাগেজ ৮/১০ দিনেও হাজীরা বুঝে পাননি। এতে হাজীগণ চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছিলেন। এবার হাজীদের লাগেজ দ্রুত যথাসময়ে নিজ নিজ বাসায় পৌঁছে দেয়ার বিষয়ে সউদী কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
এদিকে, সাউদিয়া এয়ারলাইন্স ও ফ্লাইনাস হজ ফ্লাইটের মাঝ পর্যয়ে সতর্কতামূলক ফ্লাইট সংখ্যা কম রাখায় তাদের হজ ফ্লাইট কার্যক্রমে বিপর্যয়ের আশঙ্কা নেই। একাধিক হজ এজেন্সির মালিক এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তাদের অভিযোগ বিমান কর্তৃপক্ষ অদক্ষ কর্মকর্তার মাধ্যমে হজ ফ্লাইটের সিডিউল তৈরি করেন। এ ক্ষেত্রে হাবের নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে কোনো পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। ফলে প্রতি বছরই বিমানের একাধিক হজ ফ্লাইট বাতিল করে কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়। ফ্লাই নাসের সিইও খন্দকার শামসুল আলম ইনকিলাবকে জানান, ফ্লাই নাসের এয়ার বাস -৩৩০ ফ্লাইট ৪২৫, ৩৭৪ ও ৩৬৫ আসনের বিমানে হজযাত্রী পরিবহন করবে। ফ্লাই নাস মদিনায় সরাসরি ৫টি ফ্লাইটসহ সর্বমোট ১৩ হাজার ৬৫ জন হজযাত্রী পরিবহন করবে। এর মধ্যে প্রায় ১২ হাজার হজযাত্রীর বুকিং কনফার্ম হয়েছে।

ফ্লাই নাসের ফিরতি হজ ফ্লাইট শুরু হবে আগামী ১০ জুন থেকে। বিমান বাংলাদেশ ফিরতি হজ ফ্লাইট (বিজি-৩৩২) আগামী ১০ জুন জেদ্দা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। ইউরো এয়ার ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান আজ রোববার ইনকিলাবকে বলেন, অনেক হজযাত্রীর হজ ভিসা হয়েছে কিন্ত তাদের হজে গমনে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। সউদী নুসুক তেকে বিসা কেনসেল অপশন পাওয়া যাচ্ছে না।

যারা ভিসা পেয়ে অসুস্থ হয়ে হজে যেতে পারছেন না তাদের সমস্যা হচ্ছে। ভিসা রিজেক্ট এর ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে। সেন্ট টু অ্যাম্বেসির হজ ভিসার সউদী নির্দেশনা এখনো আসছে না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button