পরকীয়ার জেরে পুলিশ সদস্য স্বামীকে হত্যাঃ স্ত্রীসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ

নিবিড়ঃ যাত্রাবাড়ীতে পরকীয়ার জেরে পুলিশ সদস্য স্বামী মোঃ হুমায়ুন কবিরকে (৪৪) হত্যার ঘটনায় স্ত্রীসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো – নিহত পুলিশ সদস্যের স্ত্রী ১. মোসাঃ সালমা বেগম (৩২), ২. মোছাঃ মরিয়ম বেগম ওরফে মলি (৩৯), ৩. ফজলে রাব্বি ওরফে শুভ (২৩), ৪. পলি বেগম (৩৫), মোঃ কায়েচ হাওলাদার (৩৪) ও ৬. অপর একজন কিশোর।
বুধবার ৩০ এপ্রিল ২০২৫ রাতে ঢাকা ও বরিশালে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। যাত্রাবাড়ী থানা সূত্রে জানা যায় গত সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫ সকালে সংবাদ পেয়ে দয়াগঞ্জ বটতলা জজ মিয়ার বাড়ির ভাড়া বাসার গেটের কাছ থেকে পুলিশ সদস্য হুমায়ুন কবিরের মরদেহ উদ্ধার করে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় মৃত পুলিশ সদস্যের ভাই খোকন হাওলাদার বাদী হয়ে গত ২৯ এপ্রিল ২০২৫ যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, হুমায়ুন কবির ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পরিবহন বিভাগে জলকামান ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি স্ত্রী সালমা বেগম, ছেলে কাওসার হোসেন ইমন (১৩) এবং মেয়ে তুবা (৭) নিয়ে ওই বাসায় বসবাস করতেন।
মোঃ রাজিব হোসেন নামে এক আত্মীয়ের সাথে সালমা বেগমের অনৈতিক সম্পর্ক ছিল, যা হুমায়ুন কবির জানতে পারেন। এ নিয়ে গত ২৫ এপ্রিল একটি পারিবারিক সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর সালমা বেগম ও তার ভাই মোঃ মালিকের সঙ্গে পুলিশ সদস্য হুমায়ুন কবিরের বাকবিতন্ডা হয়। এর জেরে নিহত হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী সালমা বেগম ও তার পরকীয়া প্রেমিক রাজিব হোসেন ও ওই ভবনের চারতলায় থাকা তার আত্মীয় মরিয়মসহ আরও কয়েকজন মিলে হুমায়ুনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। থানা সুত্রে জানা যায়, মামলাটি তদন্তকালে ভিকটিমের দুই সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার ৩০ এপ্রিল ২০২৫ রাত আনুমানিক ১১:৩০ ঘটিকায় যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডের জড়িত এজাহারনামীয় আসামি নিহত পুলিশ সদস্যের স্ত্রী মোসাঃ সালমা বেগম ও মোঃ মরিয়ম বেগম ওরফে মলিকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যে ও প্রযুক্তির সহায়তায় আজ ১ মে ২০২৫ তারিখ ভোর ০৫:০০ ঘটিকায় বরিশাল জেলা থেকে শুভ, রাফি, পলি ও কায়েসেেক গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় নিহত পুলিশ সদস্য হুমায়ুনের দুটি মোবাইল ফোন শুভর কাছ থেকে জব্দ করা হয়। প্রাথমিক তদন্ত ও গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে থানা সূত্রে আরো জানা যায়, সালমা বেগমের সাথে আত্মীয় মোঃ রাজিক হোসেনের এক বছর ধরে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। গত রবিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিঃ রাত আনুমানিক ১০:৩০ ঘটিকায় হুমায়ুন ডিউটি শেষে বাসায় ফিরে আসেন।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তার স্ত্রী সালমা ফার্মেসি থেকে কিনে আনা ঘুমের ওষুধ খাবারের সাথে মিশিয়ে তাকে খাওয়ায়। এতে হুমায়ুন অচেতন হয়ে পড়ে। গ্রেফতারকৃতরা ভিকটিমের হাত-পা গামছা দিয়ে বেঁধে এবং গলায় রশি পেঁচিয়ে রাত আনুমানিক ০২:৩০ ঘটিকার দিকে তাকে তারা হত্যা করে।
হত্যার পর লাশ অন্যত্র সরানোর চেষ্টা ব্যর্থ হলে হত্যাকারীরা ভোর ৪টার দিকে লাশটি বাড়ির গেটের পাশে ফেলে রাখে। গ্রেফতারকৃত সালমা বেগম ও মরিয়মকে বুধবার বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হলে তারা ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
অপর গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। পলাতক রাজিবসহ অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।