প্রশাসনবিবিধ

নিস্কৃয় ধানমন্ডি থানার পুলিশ

ঘটনার বিবরণে প্রকাশঃ বিগত ১০ মার্চ ২০২৫ তারিখে ধানমন্ডি থানার অধীনে বাড়ি নং ৮/এ/ ১৬ রোড নং ১৩ (নতুন) এ অবস্থিত রাহিমা আক্তার এ মালিকানাধীন ২- বি ফ্ল্যাটটিতে অনধিকার প্রবেশ করিয়া ফ্ল্যাটটি জোর পূর্বে বেআইনিভাবে দখল করার উদ্দেশ্যে পার্শ্ববর্তী ২-এ ফ্লাটে বসবাসরত নানাবিধ অপকর্মের সাথে জড়িত রেবেকা সুলতানা বীথি ও তার বোন পাখির নেতৃত্বে ৫/৭ জনের একটি দল ফ্ল্যাট ২-বিতে প্রবেশ করে, সেখানে রাহিমা আক্তারকে (৭৩) না পেয়ে তার আত্মীয় জাকির সাদেককে একা পাইয়া রেবেকা সুলতানা বিথি লাঠি নিয়া তাহার উপর ঝাপাইয়া পড়ে ও তার সঙ্গীদের নিয়া বেদম প্রহার করিয়া আহত করে এবং তাহার পকেট হইতে নগদ ২০,০০০ হাজার টাকা ও গলায় থাকা স্বর্ণের ১ ভরির সোনার চেইন ছিনাইয়া নিয়া তাহাকে আহত অবস্থায় ফ্ল্যাট হইতে বাহির করিয়া ফ্ল্যাটটি দখলে নেয়।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে আহত জাকির সাদেক কিছুটা সুস্থ হইয়া বিগত ১৫/৩/২০২৫ ইং তারিখে রেবেকা সুলতানা বিথি, পাখি ও অজ্ঞাত ৫/৭ জনের নামে এজাহার লিখিয়া ধানমন্ডি থানায় দাখিল করে। তৎকালীন ধানমন্ডি থানার ওসি জনাব আলী আহমেদ এজাহারটি নথিভুক্ত না করিয়া এস আই বাবন উদ্দিনকে তদন্ত করিতে দেয়। বাবন উদ্দিন তদন্ত করিতে যাইয়া রেবেকা সুলতানা বীথির দ্বারা প্রভাবিত হইয়া ঘটনা স্থলের সিসি ক্যামেরার ঘটনার সময়ের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ না করিয়া কালক্ষেপণ করিতে থাকে। ইতিমধ্যে বীথি বাদির বিরুদ্ধে একটা জিডি করে এবং এস আই বাবন উদ্দিন বাদি জাকির সাদেককে ঘটনাটি আপোষ করার জন্য চাপ দিতে থাকে আবার ভয়ও দেখাতে থাকে। বাদী সম্মত না হওয়ায় তদন্তকারী এসআই বাবন উদ্দিন এজাহার এর আবেদনটি অদ্যাবধি কোন তদন্ত বা রিপোর্ট ছাড়াই তাহার নিকট ফেলিয়া রাখিয়াছে।


ঘটনার বিষয় অনুসন্ধান করিয়া আমাদের প্রতিনিধি জানিতে পারেন যে সুলতানা বীথি টঙ্গীতে অবস্থিত এরশাদ নগরে ১৭২২ এ স্থায়ী বাসিন্দা । সে ও তাহার বোন পাখি বড়লোক ব্যবসায়ীদের তাদের রূপের ফাঁদে ফেলিয়া প্রেম বা বিবাহ নামের প্রহসনের মাধ্যমে তাহাদের টাকা পয়সা আত্মসাৎ করাই তাদের পেশা। বিথি ও তাহার বোন পাখি ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকবার বিবাহ করিয়া টাকা পয়সা আত্মসাৎ শেষে উক্ত ব্যক্তিদেরকে ছুড়িয়া ফেলিয়াছে।
২০০৮ সালে রাহিমা আক্তারের স্বামী মোস্তফা আবদুর রহমান পাইকার মৃত্যু বরন করিলে তাহাদের একমাত্র পুত্র সন্তান মোস্তফা তৌহিদুর রহমান পাইকার ওরফে তানবীর তার বাবার উত্তরাধিকারী সূত্রে ধানমন্ডির হলি হাইড এ অবস্থিত ২-এ ফ্লাইটটির মালিকানাসহ কেরানীগঞ্জের রুহিতপুরে অবস্থিত বিসিক শিল্প নগরীর প্লট নং এ-২৬, ২৭ এ অবস্থিত, “মার্ক বাংলাদেশ” নামক একটি কীটনাশক প্রস্তুতকারী ফ্যাক্টরীর উত্তরাধিকার সূত্রে ২০০৯ সালে মালিকানা প্রাপ্ত হইয়া বেশ সাফল্যের সাথে পরিচালনা করিয়া ব্যবসায়ে আগের চাইতেও উন্নতি করিয়া বাংলাদেশব্যাপি ডিলার নিয়োগ করিয়া ব্যবসায়ে প্রসার ঘটাইয়াছিল।

বাবার রাখিয়া যাওয়া একটি গাড়ির স্থলে একটি নিশান জিপ, একটি কার, ও দেশ ব্যাপী কীটনাশক সাপ্লাই দেওয়ার জন্য একটি পিকআপ ভ্যান ক্রয় করিয়াছিল। ফ্যাক্টরীর কলেবর বৃদ্ধি করিয়া ক্যামিক্যালস রাখার জন্য বড় গোডাউন, ওষুধ তৈরির এলাকা বৃদ্ধি, সাইট অফিস ও বিশ্রামের জন্য রুম বানাইয়া আসবাবপত্রসহ সুন্দরভাবে সাজাইয়াছিল।
২০০৯ সালে শেষের দিকে ৩৩ বৎসরের এক যুবক উদ্যোক্তা হিসাবে ব্যবসায়ে উন্নতি করিয়া লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হইলে সুচতুর রেবেকা সুলতানা বীথি তৌহিদুর রহমান তানভীরকে তাহার রূপের ফাঁদে ফেলিয়া ২০১০ সালে বগুড়ায় গোপনে বিবাহ করে এবং তানভীরের সাথে ধানমন্ডির বাড়িতে হলি হাইডে ২-এ ফ্লাটে আসিয়া উঠে। কিছুদিনের মধ্যেই মায়ের সাথে পুত্রের দূরত্ব সৃষ্টিকরিয়া পূর্ব হইতেই নেশায় আসক্ত রেবেকা সুলতানা বিথি তানভীরকেও নেশায় আসক্ত করিয়া ফেলে।
আসক্ত তানভীরকে নানা চলছুতায় প্রলুদ্ধ করাইয়া টাকা পয়সা আত্মসাৎ করিতে থাকে।অসহায় মা একমাত্র পুত্রের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় ছেলেকে রক্ষা করতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে নাই।
বীথি তানভীরকে মায়ের নিকট হইতে দুরে সরাইয়া নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অসহায় মাকে স্বনির্ভর করানোর উদ্দেশ্যে বিগত ২০১০ সালে তানভীর তার নিজের নামে ক্রয়কৃত ২- বি ফ্ল্যাটটি ২০১২ সালে মায়ের নামে হেবা দলিলের মাধ্যমে মালিকানা হস্তান্তর করিয়া দেয়। মা রাহিমা আক্তার সেই হইতে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিয়া তাহার হাত খরচ চালাইয়া আসিতেছিল। ইহাতে বীথি তানভীরের প্রতি ক্ষুব্ধ হয় এবং হেবা দলিল প্রত্যাহার করিতে চাপ দেয়।

কিন্তু তানভীর তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে। এই অবস্থায় বীথির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হইয়া মৃত্যুর ২ বছর আগে তানভীর বীথিকে মৌখিকভাবে তালাক দেয়। বীথির মা বোন ও তাহার সহযোগীরা তানভীরের উপর চাপ সৃষ্টি করিয়া তাহাকে পুনরায় বীথির সাথে একত্রে থাকতে বাধ্য করে।
অতঃপর বিগত ৩০/০৯/২০২২ তারিখ রাতে তানভীর তার স্ত্রী বীথি সহ রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খাইতে যায়। ফিরিয়া আসিয়া তৌহিদুর রহমান তানভীর তার মাকে বলে, মা আমরা খাইয়া আসিয়াছি, তোমার জন্য পিৎজা ওর্ডার দিতেছি। তুমি খেয়ে নিও। মা বলেন, এতো রাতে আমি আর খাবো না, সকালে অর্ডার দিস। তখন তানভীর তার রুমে চলিয়া যায়। ভোর রাতের দিকে স্ত্রী রেবেকা সুলতানা বীথি তানভীরের মায়ের রুমে আসিয়া বলে যে, “আপনার ছেলে কেমন জানি করিতেছে” দেখিয়া যান।

তানভীরের মা ছেলের রুমে যাইয়া দেখতে পায় যে, তানভীরের মুখ দিয়ে ফেনা ঝরিতেছে। কিন্তু কোন কথা বলিতে পারিতেছেনা। শুধু হাতের ইশারায় হাসপাতালে নিতে বলিতেছে। তাড়াতাড়ি তানভীরকে হাসপাতালে নেয়া হয় সেখানে বিগত ০১/১০/২০২২ ইং তারিখ সকালে কর্তব্যরত ডাক্তার তানভীরকে মৃত বলে ঘোষণা করে।


পুত্রের এই অকাল ও অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে বৃদ্ধ মা অজ্ঞান হইয়া যায়। পরে জ্ঞান ফিরিয়া আসিলে তিনি ২-এ ফ্লাটে নিজের বিছানায় শায়িত আছেন দেখতে পান। ঘর ভরা অনেক লোকজন যারা সকলেই বীথির আত্মীয় স্বজন। পুত্র তানভীর কোথায় জানিতে চাইলে একজন জানান তাহাকে কবর দেওয়া হইয়াছে। ইহা শুনিয়া মা আবারো জ্ঞান হারাইয়া ফেলেন। পরবর্তীতে জ্ঞান ফিরিয়া পাইয়া তানভীরের মা আত্মীয় স্বজনকে খবর দেওয়ার জন্য মোবাইল ফোন খুঁজতে গিয়া দেখেন যে মোবাইলটি রুমে নাই।


অসুস্থ ও অভুক্ত থাকার কারণে তানভীরের মা দুর্বল হইয়া পড়ায় স্বশরীরে উঠিয়া কারো সাথে যোগাযোগ করিতে পারেন নাই। বিছানায় শয্যাশায়ী থাকাকালীন বীথির মা মাঝে মাঝে এসে কিছু খাবার দিতো এবং বলিত আপনার এখানে সম্পত্তির কোন অংশ নাই। কাজেই আপনি কেন অহেতুক এখানে থাকিতেছেন। আপনি অন্য কোথাও চলিয়া যান। না হইলে আপনার পরিণতি আরো খারাপ হইতে পারে। এই সময় রাহিমা আক্তারকে বাথরুম ব্যতীত কোথাও যাইতে দেয়া হইতো না।


একদিন গভীর রাতে রাহিমা আক্তার শুনিতে পায় যে পার্শ্ববর্তী ডাইনিং রুমে বসিয়া বীথি সহ অন্য কয়েকজন মিলিয়া তাহাকে নিয়া আলোচনা করিতেছে। একজন বীথিকে বলে যে,এই বুড়িকে এখনো কেন রেখেছিস। একেও তানভীরের কাছে পাঠিয়ে দে। উত্তরে বীথি বলে, এতো তাড়াতাড়ি একে বিদায় করলে বিপদ হতে পারে। তাকে ঠিক মতো খাবার দেয়া হয় না। না খেয়ে না খেয়ে এমনিতেই কিছু দিনের মধ্যে মারা যাবে। তখন সবাই এই বুড়ির মৃত্যুর বিষয়ে সন্দেহ করবে না। ইহা শুনিয়া তানভীরের মাতা জীবনের ভয়ে ভীত হয়ে বিগত ২০/০৮/২০২২ তারিখ ভোর রাতে এক কাপড়ে ২-এ ফ্লাটে অবস্থিত রাহিমা আক্তার নিজের ও তাহার মায়ের রুমের যাবতীয় মালামাল ও মূল্যবান অলংকারাদি তালাবদ্ধ করিয়া রাখিয়া ফ্ল্যাট ছাড়িয়া বাহির হইয়া আসিতে সক্ষম হন।


পরে বিগত ২১/০৮/২০২২ তারিখে এ বিষয়ে ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যাহার জিডি নং ১১৪৬। পরবর্তীতে রাহিমা আক্তার নিজের ফ্ল্যাট ছাড়িয়া ঠিকানা বিহীন হইয়া পড়েন এবং নিঃস্ব অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করিতে থাকেন।


ইসলামী আইন অনুযায়ী মৃত নিঃসন্তান পুত্রের ত্যাজ্য সম্পত্তিতে স্ত্রীর সম পরিমাণ অংশের মালিক মৃতের মা। কিন্তু নেশায় আসক্ত ও অসামাজিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত বীথি ও তার বোন পাখি এরা ধনী ছেলেদের বিভিন্নভাবে রূপের ফাঁদে ফেলিয়া বিবাহ নামের প্রহসনের মাধ্যমে স্বামীর সম্পদ হাতাইয়া নেওয়াই তাদের মূল পেশা বা উদ্দেশ্য। প্রমাণ হিসাবে বলা যায় যে পুত্র তৌহিদুর রহমান তানভীর মৃত্যু বরন করিলে যোগ্য ওয়ারিশ বৃদ্ধা মাতার ওয়ারিশী হক আত্মসাৎ করার জন্য রেবেকা সুলতানা বীথি শাশুড়ি রাহিমা আক্তারকে বাদ দিয়া নিজের একক নামে ধানমন্ডির সাবেক কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম বাবলার নিকট হইতে ভুয়া ওয়ারিশান সনদ বিগত ১৩/১০/২০২২ তারিখে হাসিল করিয়া একটি ট্রেড লাইসেন্স করে যাহার মাধ্যমে ঢাকার কেরানীগঞ্জের রুহিতপুরে অবস্থিত বিসিক শিল্প নগরীর প্লট নং এ-২৬,২৭এ অবস্থিত!!

রাহিমা আক্তারের মৃত পুত্র মোস্তফা তৌহিদুর রহমান পাইকার ওরফে তানভীরের মালিকানাধীন (মার্প বাংলাদেশ) নামক কীটনাশক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক বনিয়া বীথি তাহার নেশায় আসক্ত সহযোগীদের নিয়া ফ্যাক্টরিতে রক্ষিত প্রায় আনুমানিক ২/৩ কোটি টাকার ক্যামিকেলস, তৈরি ওষুধ ১টি কাভার্ড ভ্যান, ফ্যাক্টরি ও অফিসের যাবতীয় মালামাল বিক্রয় করিয়া এককভাবে উক্ত টাকা আত্মসাৎ করে। ইহা ছাড়াও ইসলামি ব্যাংক এর পান্থপথ শাখায় জমাকৃত নগদ ১১,০০,০০০/= এগার লক্ষ টাকা তানভীরের এটিএম কার্ড এর মাধ্যমে তুলিয়া আত্মসাৎ করেন। ইহা ছাড়াও পুবালি ব্যাংকের সোনারগাঁও রোড শাখায় গচ্ছিত টাকাও আত্মসাত করে বলিয়া জানা যায়। ধানমন্ডির ২-এ ফ্লাটে গ্যারেজে রক্ষিত একটি জিপ ও ২টি প্রাইভেট কার ও ফ্লাটের বেশ কিছু দামি মালামাল বিক্রয় করিয়া উহাও আত্মসাৎ করে বলিয়া শোনা যাইতেছে। মূলত রেবেকা সুলতানা বীথি একটি দুর্বৃত্ত চক্রের নেত্রী। সে নানারকম অপরাধ মুলক কাজের সাথে জড়িত। বীথি এর আগেও ৩ টি বিবাহ করিয়াছে বলিয়া জানা যায়। তাহার বোন পাখিরও স্বামীর সংখ্যা কম নয়। বিবাহ করিয়া স্বামীর সম্পদ আত্মসাৎ করাই এদের মূল পেশা। কাজেই তৌহিদুর রহমানের মৃত্যুর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত করিলে আরো অনেক অজানা ঘটনা বাহির হইয়া আসিবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস, এবং তৌহিদুর রহমানের অকাল মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাইবে। বর্তমানে ৭৩ বছর বয়সী রাহিমা আক্তার অসুস্থ ও ঠিকানাবিহীন হওয়ার কারণে এবং রেবেকা সুলতানা বীথীর দ্বারা জীবন নাশের আশঙ্কা থাকায় তিনি পুত্র তানভীরের মৃত্যুর বিষয়ে বিথির বিরুদ্ধে বিগত সময়ে মামলা করিতে সাহস পান নাই ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button