এক্সক্লুসিভ

শ্রীপুরে এসিল্যান্ডদের সহায়তায় ভূমি অফিসগুলো দুর্নীতির আতুড়ঘর!

গাজীপুর প্রতিনিধিঃ

শুনানি ছাড়াই নামজারি, শ্রেণি বদল করে জাল দলিল
এসিল্যান্ড ও ভূমি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তদন্ত চাইলেও সাড়া নেই


দলিল নেই, দখল নেই, মামলা চলছে—এসব বাধা অগ্রাহ্য করে গাজীপুরের শ্রীপুরে জমির নামজারি হয়ে যাচ্ছে অবলীলায়। এসিল্যান্ড ও ভূমি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে শ্রেণি বদলে সরকারি জমিও বেচাকেনার আওতায়। স্থানীয়রা বলছেন, শ্রীপুর ভূমি অফিস হয়ে উঠেছে দুর্নীতির এক ‘ওপেন মার্কেট’ যেখানে ঘুষই চূড়ান্ত নিয়ামক। জমি কারবারে যারা জড়িত, তারা কারা?
এই দুর্নীতির পেছনে ভূমি অফিসের এক সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত প্রতিবেদনের দাবি সত্ত্বেও এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।


সিন্ডিকেটে অভিযুক্তরা:


১. আব্দুল্লাহ আল মামুন – সাবেক এসিল্যান্ড
২. রেহেনা আক্তার – সাবেক এসিল্যান্ড
৩. উজ্জ্বল হালদার – সাবেক এসিল্যান্ড

৪. আতাহার শাকিল – বর্তমান এসিল্যান্ড (ছুটিতে দেশের বাইরে)
৫. এম এ মান্নান – সাবেক সহকারী ভূমি কর্মকর্তা, রাজাবাড়ি ইউনিয়ন
৬. মনিরুজ্জামান মনির – অফিস সহায়ক
৭. নূর এ আলম – উপসহকারী কর্মকর্তা, রাজাবাড়ি ইউনিয়ন
দলিল নেই, টাকা দিলেই নামজারি:
২০২৪ সালের ২৮ নভেম্বর রাজাবাড়ি গ্রামের শামসুন্নাহার জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেন (স্মারক: ১৭৫০২)। তার সহোদর ভাই কোনো বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে নামজারি করে নেন। অভিযোগকারী শুনানির আবেদন করলেও তা উপেক্ষা করা হয়।
মামলা চলার মাঝেই জমির মালিকানা বদল:
গজারিয়া গ্রামের মো. সেলিম গং দেওয়ানি মামলা (নং: ২৫২/১৬) করেন। মামলাটি চলাকালে এসিল্যান্ড আব্দুল্লাহ আল মামুন বিপরীত পক্ষের নামে নামজারি সম্পন্ন করেন। সূর্যনারায়ণপুরের জহিরুল হোসেনের ক্ষেত্রেও ২০১৩ সালের মামলা চলাকালে একই পদ্ধতিতে নামজারি হয়।
‘ক’ গেজেটভুক্ত জমিও নিরাপদ নয়:
বিমল চন্দ্র দাস ২০২৩ সালে রাজাবাড়ি গ্রামের ‘অর্পিত ক গেজেটভুক্ত’ জমির নামজারির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। পরে আরও তিনটি অভিযোগ জমা পড়ে। এসএ শাখা থেকে ইউএনও’র কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হলেও সাড়া মেলেনি।
রাস্তা থেকেও ‘চালা’ বানিয়ে জমি দখল:
ধলাদিয়ার জহিরুল ইসলামের রাস্তা শ্রেণিভুক্ত জমিকে ‘চালা’ দেখিয়ে নামজারি করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন এসিল্যান্ড রেহেনা আক্তার ও উপসহকারী কর্মকর্তা নূর এ আলম।
এক জমি, একাধিক মালিকের নামজারি:
রাজা মিয়া নামজারি বাতিলের আবেদন করলেও শুনানি ছাড়াই অন্য পক্ষের নামে নামজারি হয়ে যায়। একই জমিতে একাধিক ব্যক্তির নামে মালিকানা দেওয়া হয়, যা আইনের পরিপন্থী।
ভলিউম বইও বদলে যায়, প্রতিবেদন নেই:
রাজাবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক ভূমি সহকারী কর্মকর্তা এম এ মান্নান ও অফিস সহায়ক মনিরুজ্জামান মনির নিয়মিত ঘুষ লেনদেন করে নামজারি করতেন। এমনকি ভূমি অফিসের মূল ভলিউম বই কাঁচি ও প্রিন্ট আউটের মাধ্যমে বদলে দেওয়া হতো।
এসএ শাখার কর্মকর্তা মো. খলিউর রহমান বলেন,
“আমরা ইউএনও অফিসে স্মারক ১৯৩৮-এর মাধ্যমে প্রতিবেদন চেয়েছিলাম, আজও কোনো জবাব পাইনি।”
বর্তমানে দায়িত্বে থাকা এসিল্যান্ড আতাহার শাকিল ছুটিতে দেশের বাইরে রয়েছেন। সরকারি হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও সাড়া মেলেনি। তার দাপ্তরিক ফোন নম্বর ইউএনও সজীব আহমেদের কাছে থাকায় এমনটি হয়েছে বলে ইউএনও বাংলাভূমিকে নিশ্চিত করেছেন।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বাংলাভূমিকে বলেন,”প্রতিবেদন এসিল্যান্ড অফিসে চাওয়া হয়েছিল। আমি জানার পর অভিযোগকারীসহ সবাইকে নোটিশ দিয়েছি। আর বাকি ক্ষেত্রে নথি নম্বর দিলে অন্যান্য অভিযোগ নিয়ে বক্তব্য দেওয়া যাবে,এবং নথিপত্র দেখে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।”
জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

    Related Articles

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Back to top button