এনসিপি’র রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি: গণতন্ত্র, মানবিক মর্যাদা ও স্বাধীনতার প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ

ডেস্ক রিপোর্টঃ ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্র কাঠামো গঠনের লক্ষ্যে তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে। আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত পোস্ট দিয়েছেন, যেখানে মুক্তিযুদ্ধ, ধর্মীয় সম্প্রীতি, নারীর অধিকার ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্রগঠনের লক্ষ্যে এনসিপির অঙ্গীকার তুলে ধরা হয়েছে।
🔹 মুক্তিযুদ্ধ ও গণঅভ্যুত্থানের আদর্শে পথচলা
এনসিপি মনে করে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ভিত্তি হলো ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের মূল আদর্শ—সাম্য, ইনসাফ ও মানবিক মর্যাদা—এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষা পার্টির রাজনৈতিক অবস্থানকে নির্ধারণ করে। একইসাথে, হিন্দু-মুসলমান-দলিতের উপনিবেশবিরোধী ও ব্রাহ্মণ্যবাদবিরোধী ঐতিহাসিক সংগ্রামকে রাজনৈতিক ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচনা করে এনসিপি।
🔹 ধর্মীয় সহাবস্থান ও ইসলামের মানবিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা
এনসিপি সব ধর্মবিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম ইসলাম—তার নৈতিকতা ও মানবিকতা এবং বাঙালি মুসলমানের ভাষা ও সংস্কৃতিকে মূল্যায়ন করে। সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও নাগরিক অধিকার রক্ষায় দৃঢ় অবস্থান নেয়া হবে বলে জানায় তারা।
এনসিপি সেকুলারিজম বা ধর্মতন্ত্র (theocracy) কোনোটিকেই চূড়ান্ত আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করে না। বরং ধর্মীয় সহাবস্থান ও সম্প্রীতির ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠনের ওপর জোর দেয়।
🔹 সভ্যতাগত জাতীয় পরিচয় ও বহুসংস্কৃতি
জাতি, ধর্ম বা গোত্রের ভিত্তিতে নয়; এনসিপি বঙ্গীয় বদ্বীপের সভ্যতাগত জাতীয় পরিচয়কে রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের মূল ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে। বহু ভাষা ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে একটি সমন্বিত জাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
🔹 নারীর মর্যাদা ও নেতৃত্বের নিশ্চয়তা
নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, নেতৃত্ব ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করাকে অন্যতম নীতিগত লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে এনসিপি। এছাড়া, পারিবারিক আইনের আওতায় সম্পত্তিতে নারীর ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
🔹 ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদবিরোধী অবস্থান
দলটি মনে করে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের আধিপত্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদ বাংলাদেশের জন্য একটি সাংস্কৃতিক ও ভূরাজনৈতিক হুমকি। এনসিপি এসব আধিপত্যবাদী প্রবণতার বিরুদ্ধে কঠোর রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণের কথা বলেছে এবং জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কৌশলগত পররাষ্ট্রনীতির প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে।
🔹 অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজব্যবস্থা
এনসিপি একটি বৈষম্যহীন, ইনসাফভিত্তিক ও কল্যাণমূলক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
দলের ঘোষিত নীতিনির্ধারণী অগ্রাধিকারসমূহের মধ্যে রয়েছে:
- শিক্ষা
- জনস্বাস্থ্য
- কৃষি
- জলবায়ু পরিবর্তন
- নগর ব্যবস্থাপনা
- শ্রম অধিকার ও কর্মসংস্থান
এছাড়া বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে নতুন অর্থনৈতিক জোন গঠনের ভিশনও তুলে ধরা হয়েছে।
🔹 ফ্যাসিবাদবিরোধী নতুন রাষ্ট্র কাঠামোর প্রতিশ্রুতি
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, এনসিপি মনে করে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়তে হলে বর্তমান রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠন ও নতুন সংবিধান প্রণয়ন অত্যাবশ্যক। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ করে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করাকে এনসিপি তার প্রধানতম কর্তব্য বলে উল্লেখ করেছে।
📌 সংক্ষিপ্ত মন্তব্যে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন:
“বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত এখন জনগণের হাতে। এনসিপি বিশ্বাস করে, জনগণের জাগরণ ও ইনসাফের চেতনার মধ্য দিয়েই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব।”